তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ গ্যাসের বদলে বাতাস বিক্রি করে বিল নিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। এতে গ্যাস সংকটে পড়ে গত তিন মাসে উদ্যোক্তাদের ১৭৫ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
গ্যাস সংকট নিয়ে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ জানিয়েছেন বিটিএমএ নেতারা।
রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, সহসভাপতি ফজলুল হক, আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন অভিযোগ করে বলেন, ‘তিন বছর বা তারও বেশি সময় ধরে আমরা পর্যায়ক্রমে বর্ধিত গ্যাস ট্যারিফে গ্যাস বিল দিচ্ছি। অথচ প্রায়ই আমাদের মিলগুলো পর্যাপ্ত গ্যাস পাচ্ছে না।’
তিতাস কর্তৃপক্ষ গ্যাস না দিয়ে শুধু বাতাস সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকা গ্যাসের বিল নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘তিতাস কর্তৃপক্ষ পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস না দিয়ে শুধু বাতাস সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকা আমাদের কাছ থেকে গ্যাসের বিল নিচ্ছে।’
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মিলগুলোয় ইলেকট্রনিক গ্যাস ভলিউম ক্যারেক্টর (ইভিসি) মিটার সংযোগের জন্য বারবার অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান বিটিএমএ সভাপতি।
তবে ইভিসি মিটার আমদানি করা হলেও মিলে সংযোগ দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তার। খোকন বলেন, ‘আমাদের জানামতে, ১ হাজার ২০০ ইভিসি মিটার আমদানিও হয়েছে, কিন্তু খুবই অল্প কিছুসংখ্যক মিলে তার সংযোগ দেয়া হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে বেশির ভাগ মিলে এখনও ইভিসি মিটারের সংযোগ দেয়া হচ্ছে না।’
ইভিসি মিটারের সংযোগ না দেয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এই মিটার লাগালে হয়তো তিতাসের প্রকৃত সিস্টেম লস বেরিয়ে আসবে। তাই তারা এই মিটারগুলোর সংযোগ দিচ্ছে না। অথচ করোনার মধ্যেও তিতাস গ্যাস আমাদের একটি পয়সাও মওকুফ করেনি। সারচার্জ মওকুফ করেনি। এ সময় তিতাসের তিনজন এমডি বদল হয়েছে। বারবার টেলিফোন করার পরও নতুন এমডি ফোন ধরছেন না।’
তিনি দাবি করেন, ‘কোনো দেশই জ্বালানি আমদানি করে শিল্পের প্রসার ঘটাতে পারে না। তাই জ্বালানির সংকট সমাধানে আমরা শিল্পবান্ধব জ্বালানি নীতি চাই। তবে এখন যেসব কূপের গ্যাসস্তর নিচে নেমে গেছে সেখানে যদি কম্প্রেসার বসানো হয়, তার মাধ্যমে ১০ শতাংশ গ্যাস বাড়ানো সম্ভব। আমরা অনুরোধ করব, সেসব কূপে দ্রুত কম্প্রেসার লাগানো হোক।’
আবারও গ্যাসের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনীয় গ্যাস না পাওয়ায় এমনিতেই টেক্সটাইল খাতের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আবারও গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে তা হবে আরও ভয়বাহ, যার নেতিবাচক প্রভাব শেষ পর্যন্ত পড়বে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের ওপর।’
লিখিত বক্তব্যে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিদ্যুতের মূল্য প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়াতে চায়। আমাদের জানামতে, দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উইভিং ও স্পিনিং মিলের সিংহভাগ পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক। ফলে বাড়তি দামে পল্লী বিদ্যুৎ থেকে যে বিদ্যুৎ কেনা হবে তা মিলগুলোর পক্ষে কোনোভাবেই বহন করা সম্ভব হবে না।’
গ্যাসের স্বাভাবিক সরবরাহ অক্ষুণ্ন রাখার পাশাপাশি শিল্প ও কর্মসংস্থানের স্বার্থে পরিবহনে জ্বালানি হিসেবে সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) ব্যবহার বন্ধ করাসহ সার কারখানায় গ্যাস বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেয় সংগঠনটি।
একই সঙ্গে পোশাক খাতের জন্য স্বতন্ত্র একটি জ্বালানি নীতি প্রণয়ন, ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশন-সংশ্লিষ্ট টেক্সটাইল মিলগুলোয় দ্রুত ইভিসি মিটার স্থাপনের তাগিদ দেন সংগঠনের নেতারা।
তিতাস কর্তৃপক্ষের মুনাফাকৃত অর্থের একটি অংশ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানিতে ব্যয়ের মাধ্যমে এর মূল্যকে সহনীয় পর্যায়ে রাখার দাবি জানায় সংগঠনটি।
গ্যাস সংশ্লিষ্ট অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান বিটিএমএ নেতারা।