আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় প্রতি বছরই আখ চাষ হয় রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। সে আখ থেকে গুড় তৈরি করে মৌসুমে ভালো ব্যবসা হয় চাষিদের, তবে অন্য বছরের মতো এবার পর্যাপ্ত মুনাফা আশা করতে পারছেন না তারা।
বন্যায় জমি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় একদিকে ফলনের ক্ষতি হয়েছে, অন্যদিকে বেড়েছে শ্রমিকের মজুরি। এতে বেড়েছে আখ উৎপাদনের খরচ। সে অনুপাতে বাড়েনি গুড়ের দাম। এমন পরিস্থিতিতে পণ্যটির দাম বাড়লে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে বলে মনে করছেন চাষিরা।
উপজেলায় এ বছর ৫৫০ হেক্টর জমিতে রংবিলাস, তলাবিলাস, পঞ্চান্ন, হুলিয়াযাবাসহ পাঁচ থেকে সাত প্রজাতির আখ চাষ হয়। পৌষ-মাঘ মাসে আখ থেকে ভালো রস পাওয়া যায়। এ সময় গুড় উৎপাদন হয় ভালো। তাই পৌষের শুরুতেই আখের গুড় তৈরির হিড়িক পড়ে যায়।
কয়েকজন চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাংশায় গতবার শ্রমিকের মজুরি ছিল ৫০০ টাকা। এবার চাষিদের সে মজুরির জন্য গুনতে হয়েছে ৭০০ টাকা।
পাংশার বাহাদুরপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা ক্ষেত থেকে আখ কেটে মাড়াই মেশিনে দিয়ে রস তৈরি করছেন। রস করার পর সেখানেই চুলা বানিয়ে গুড় তৈরি করছেন। তারা জ্বালানি হিসেবে আখের মরা পাতা ব্যবহার করছেন। এতে বাড়তি জ্বালানির প্রয়োজন পড়ছে না। অনেককেই দেখা যায় ভালো গুড় কেনার জন্য ক্ষেতে চলে গেছেন।সদর উপজেলা থেকে আখের গুড় কিনতে যান সোহাগ মোল্লা। তিনি বলেন, ‘এ এলাকার আখের গুড়ের সুনাম রয়েছে অনেক আগে থেকেই। আমরা এসে ক্ষেত থেকেই গুড় কিনে নিয়ে যাই। গুড়টা খেতেও অনেক সুস্বাদু।’
বাহাদুরপুর ইউনিয়নের আখচাষি হাসেম মোল্লা জানান, এবার বন্যায় জমি ভেঙে নদীগর্ভে চলে গেছে। ফলন ভালো না হওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত। এ বছর তেলের দামও বেশি।
তিনি বলেন, ‘মেশিনে আখ মাড়াই করি। শ্রমিকের দাম বাড়ছে। চাষাবাদেরও খরচ বেশি। তাই এবার আখ চাষে লোকসান হবে আমাদের।’
হাবাসপুর ইউনিয়নের শাহামিরপুর গ্রামের আখচাষি আলতাফ শেখ জানান, গুড়ের বর্তমান বাজারদর দুই হাজার ২০০ টাকা। মণপ্রতি গুড়ের দাম তিন হাজার টাকা হলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারতেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাংশা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার ঘোষ বলেন, ‘অন্যান্য বছর কৃষক প্রতি বিঘায় দুই থেকে আড়াই মণ গুড় ঘরে তুলতেন, কিন্তু এবার বন্যার কারণে আখের ফলন ভালো হয়নি। ফলে কিছুটা লোকসানের মুখ দেখতে হচ্ছে কৃষকদের, তবে আমাদের কাছে কৃষকরা যখনই যেকোনো পরামর্শের জন্য এসেছে, আমরা তাদের সঠিক পরামর্শ দিয়েছি।’