বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিইসি-ইসি নিয়োগ বিল পাস

  •    
  • ২৭ জানুয়ারি, ২০২২ ১৩:৫৯

জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার কণ্ঠ ভোটে পাস হয়েছে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল ২০২২।' এটি রাষ্ট্রপতির সইয়ের জন্য পাঠানো হবে। এই আইনের অধীনেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে।

স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছর পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার (ইসি) নিয়োগ আইনসংক্রান্ত বিল পাস হয়েছে। এটিতে এখন রাষ্ট্রপতি সই করলেই আইনে রূপ নেবে। এই আইনের অধীনেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে।

জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার বেলা ১টা ৫৫ মিনিটে কণ্ঠ ভোটে পাস হয়েছে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল ২০২২।' এটি রাষ্ট্রপতির সইয়ের জন্য পাঠানো হবে।

দীর্ঘ আলোচনার পর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বিল সংসদে পাস করতে ভোটে দেন। এরপর কণ্ঠ ভোটে বিলটি পাস হয়।

এর আগে বিলটির তীব্র বিরোধিতা করেন জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা।

আইনটি প্রণয়নে তাড়াহুড়া না করে তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠানোর দাবি করেন সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান।

৫০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এই বিল সংসদে আনায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের প্রতি ধন্যবাদ জানান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু। তবে ইসি গঠনে সার্চ কমিটিতে কোনো রাজনীতিক না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

মুজিবুল হক বলেন, ‘আপনাদের জন্ম সেনানিবাসে হয়নি। আপনারা স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাহলে কেন বিচারক ও আমলানির্ভর হলেন।’

সার্চ কমিটিতে আইনপ্রণেতাদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান এই সাংসদ।

সংরক্ষিত আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন বাধ্যতামূলক। কিন্তু সব অংশীজনের মতামত ছাড়া তাড়াহুড়া করে এত জনগুরুত্বপূর্ণ একটি আইন পাস করা আইওয়াশের বেশি কিছু নয় বলে আমি মনে করি।’

বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো এবং সুশীল সমাজ, আইনবিদরা এই আইন প্রত্যাখ্যান করেছেন বলেও দাবি করেন রুমিন।

তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলগুলোর মতামত ছাড়া সরকারের ইচ্ছেতে এই কমিশন গঠিত হবে। এখনকার মতো সেটিও কোনো স্বাধীন কমিশন হবে না, হবে সরকারের নির্বাচনবিষয়ক মন্ত্রণালয়।’

সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘বিএনপি যুদ্ধ করছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। সুতরাং তারা যেকোনো ছুঁতোয় নির্বাচন বর্জন করার নামে, বানচাল করার নামে অস্বাভাবিক সরকার তৈরি করতে চায়। যদিও বিএনপি এখানে বলছে সংশোধনী আনতে। তবে তাদের নেতারা ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন আগামী নির্বাচন বর্জন করবেন।’

বিএনপির সমালোচনা করে জাসদ সভাপতি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনার সাংবিধানিক সরকারকে উৎখাত করে একটি অস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠার হুমকি দিয়েছে বিএনপি। সুতরাং তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন ভালো করা বা মন্দ করা না। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচনের আগে ক্ষমতা নিশ্চিত করা। সেটা হলেই তারা শান্ত হবে।’

এরা আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার (ইসি) নিয়োগ বিলে দুটি সংশোধনী দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশন শুরু হলে বিলটি পরীক্ষার পর এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার।

এর আগে ২৩ জানুয়ারি সিইসি ও ইসি নিয়োগ বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এ সময় বিএনপির সংসদ সদস্যরা বিলটির বিরোধিতাও করেছিলেন। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য বিলটি উত্থাপনের পক্ষে মত দিলে বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পাঠানো হয় স্থায়ী কমিটিতে।

আইনমন্ত্রী যে বিলটি উত্থাপন করেছিলেন তাতে বলা হয়েছে, সিইসি ও ইসি হতে গেলে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে তার কমপক্ষে ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

এ ক্ষেত্রে বিলটি পরীক্ষা করে স্থায়ী কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদের পাশাপাশি ‘স্বায়ত্তশাসিত ও পেশা’ যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

আবার অযোগ্যতার অংশে মূল বিলে বলা হয়েছিল, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ড হলে সিইসি ও কমিশনার হওয়া যাবে না।

এ ক্ষেত্রে দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান উঠিয়ে কারাদণ্ড যুক্ত করার সুপারিশ করেছে স্থায়ী কমিটি। এর ফলে যেকোনো মেয়াদে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে আর সিইসি বা ইসি হওয়া যাবে না।

গত ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা প্রস্তাবিত আইনটির (বিল) খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন করে। পরে এ নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

তিনি বলেছিলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২-এর খসড়া চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটা আর্টিকেল ১৮(১)-এর একটি বিধানে আছে, রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিতে পারেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এই আইন নিয়ে আসা হয়েছে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছিলেন, এখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশের জন্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে। এটা অন্যান্য আইনে যেভাবে আছে, ঠিক সেভাবেই অনুসন্ধান কমিটি করা হবে। সেটা রাষ্ট্রপতির অনুমতি নিয়ে। সেটার দায়িত্ব ও কার্যাবলি একজন যোগ্য প্রতিনিধির সুপারিশ করা।

কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে। এমন বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সরগরম দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন।

আইন করার উদ্দেশ্য তুলে ধরে সংসদে দেয়া বক্তব্যে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘প্রস্তাবিত বিলটি আইনে পরিণত হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে, গণতন্ত্র সুসংহত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে এবং জনস্বার্থ সমুন্নত হবে আশা করা যায়।’

বিলটিতে বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ইতিপূর্বে গঠিত অনুসন্ধান কমিটির ও তৎকর্তৃক সম্পাদিত কার্যাবলি এবং উক্ত অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ বৈধ ছিল বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত বিষয়ে কোনো আদালতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।’

বিলে সার্চ কমিটির কাজ সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে। আইনে বেঁধে দেয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।

সার্চ কমিটি সিইসি ও কমিশনারদের প্রতি পদের জন্য দুজন করে ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে। কমিটি গঠনের ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে দেবে বলে বিলে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার পদে যোগ্যদের অনুসন্ধানের জন্য রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করতে পারবে।

সার্চ কমিটিতে থাকতে পারবেন যারা

বিলে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করবেন। এর সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক।

সদস্য হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কমিশনের চেয়ারম্যান ও রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক। তিনজন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটির সভার কোরাম গঠন হবে। কমিটির কাজে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

কারা হতে পারবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কাকে নিয়োগ দেয়া হবে তাও নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে বিলে। এতে বলা হয়েছে, এই দুই পদে নিয়োগ পাওয়াদের অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, ন্যূনতম ৫০ বছর বয়স হতে হবে এবং কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে তার অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

যোগ্যতার পাশাপাশি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের অযোগ্যতাও নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। বিলে মোট ছয়টি অযোগ্যতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর