শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ ও শিক্ষার্থীদের দাবির সমর্থনে ঢাকা থেকে সিলেট অভিমুখে লংমার্চের ডাক দিয়েও তা স্থগিত করেছে ‘বিবেকবান নাগরিক সমাজ’। এর পরিবর্তে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়েছে।
বিবেকবান নাগরিক সমাজের সংগঠকরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙে ফেলায় লংমার্চের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা হয়েছে। আপাতত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন তারা।
পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হন বিবেকবান নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। এর ১০ মিনিট আগেই শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খবর আসে, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের আশ্বাসে অনশন ভেঙেছেন শিক্ষার্থীরা।
এরপর তাৎক্ষণিক লংমার্চ স্থগিত করা হয় বলে জানান বিবেকবান নাগরিক সমাজের মুখপাত্র এহসান মাহমুদ।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে সিলেটে লংমার্চের জন্য আমরা প্রায় ৩৫ জনের মতো প্রস্তুত ছিলাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্ধার করা এবং উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করা। যখন দেখলাম ওটা আর হবে না, তখন প্রোগ্রাম একটু সংকোচন করে এখানেই একটি প্রতিবাদ সমাবেশ করি।’
যে দুই দাবিতে লংমার্চের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, তা না মানা সত্ত্বেও কর্মসূচি স্থগিত কেন, এমন প্রশ্নে এহসান বলেন, ‘জাফর ইকবাল স্যার বলেছেন, তার সঙ্গে আমাদের প্রতিনিধিদের কথা হয়েছে যে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে দাবিগুলো পর্যায়ক্রমে মেনে নেয়া হবে।’
কর্মসূচির অন্যতম আয়োজক ও রাষ্ট্রচিন্তার সমন্বয়ক দিদারুল আলম ভূঁইয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেহেতু সিলেটে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনশন ভেঙেছেন, এ জন্য আমরা সেখানকার পরিস্থিতি কয়েক দিন পর্যবেক্ষণ করতে চাই। এরপর আমরা আরও কর্মসূচি দিতে পারি।
‘আমাদের সর্বজনশ্রদ্ধেয় অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের কমিটমেন্টে শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙতে সম্মত হওয়ায় আমাদের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। যদি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয় তাহলে আমরা অভিভাবকরা আবার মাঠে নামব।’
সমাবেশে কবি ও লেখক রাহুল রাহা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাহিনীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে আসছে। রাষ্ট্রের টাকায় এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলে। আমাদের টাকায় জনগণের টাকায় ভিসি বেতন পান। আমাদের সন্তানদের সেখানে পাঠানো হয় আপনি তাদের নিরাপত্তা দেবেন, তাদের শিক্ষা দেবেন।
‘আপনি প্রশাসনের লোক এনে তাদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করবেন পেটোয়া বাহিনী দিয়ে, ছাত্রলীগ লেলিয়ে দিয়ে আপনি আপনার গদি রক্ষা করবেন এই পরিস্থিতির বিষয়ে আমাদেরকে জবাব দিতে হবে। আমরা সামনের দিনগুলোতে ছেড়ে দেব না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনি কেন আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এভাবে ধ্বংস করছেন। কেন আজকে আমাদের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন পরিস্থিতি? কেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অপদার্থদের ভিসি হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছেন?’
সমাবেশে বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে বিবেকবান নাগরিক সমাজ। এর মধ্যে সাড়ে ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করা, কারাগারে থাকা সাবেক শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেয়া, উপাচার্যকে অপসারণ করা, ক্যাম্পাস নিরাপদ করা।
দাবিগুলো না মানা হলে পরবর্তী কর্মসূচি দেয়া হবে বলে সংগঠনটি থেকে জানানো হয়েছে।