বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দেশে ৬৫ হাজার শিশু করোনা আক্রান্ত

  •    
  • ২৫ জানুয়ারি, ২০২২ ২৩:১০

চিকিৎসকরা বলছেন, অনেক অভিভাবক কমন কোল্ড বা ফ্লু জাতীয় রোগে আক্রান্ত ভেবে শিশুর আরটিপিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। এতে করোনাভাইরাস পজিটিভ হয়েও অনেক শিশু শনাক্তের বাইরে থাকছে। এটা উদ্বেগজনক।

দেশে করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত ১৭ লাখ ১৫ হাজার ৯৯৭ জন আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬৫ হাজার ৪২৯টি শিশু। এটি মোট আক্রান্তের প্রায় চার শতাংশ।

করোনা সংক্রমিতদের মধ্যে দেশে এ পর্যন্ত ২৮ হাজার ২৫৬ জন মারা গেছে। তাদের মধ্যে ২৩৩টি শিশুও রয়েছে। করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের তুলনায় চলমান তৃতীয় ঢেউয়ে আক্রান্তদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে শিশুর সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

রাজধানীর একাধিক হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে ঠান্ডা-জ্বর ও সর্দি-কাশির রোগী বাড়ছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা ৮০ শতাংশই করোনায় আক্রান্ত।

চিকিৎসকরা বলছেন, অনেক অভিভাবক কমন কোল্ড বা ফ্লু জাতীয় রোগে আক্রান্ত ভেবে শিশুর আরটিপিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। এতে ভাইরাস পজিটিভ হয়েও অনেক শিশু শনাক্তের বাইরে থাকছে। এটা উদ্বেগজনক।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠান্ডাজনিত রোগ আর ওমিক্রনের উপসর্গ একই ধরনের। শিশুরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও নিজে থেকে বুঝতে পারে না। এতে করে তার সংস্পর্শে আসা অন্যরাও সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে। তাই এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসা শুরুর পাশাপাশি করোনার নমুনা পরীক্ষা করা দরকার।

সম্প্রতি দেশে ওমিক্রনের বিস্তার ঘটায় বড়দের সঙ্গে শিশুরাও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হলেও শিশু রোগী শনাক্ত হয় ৪ এপ্রিল। এই সময় থেকে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে সদ্যোজাত থেকে চার বছর বয়সী প্রায় ২১ হাজার ৭০৪টি শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত স্বজনের পাশে সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে সন্তান কোলে এক মা। ফাইল ছবি

এছাড়া ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৪৩ হাজার ৭২২ শিশুর নমুনায় ভাইরাসটি পজিটিভ এসেছে। আর ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী এক লাখ ৭৭ হাজার ৭১০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনাভাইরাসে দেশে এই পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ২৫৬ জনের। তাদের মধ্যে সদ্যোজাত থেকে ১০ বছর বয়সী ৭৮ এবং ১০ থেকে ২০ বছর বয়সী ১৮৫ জন রয়েছে।

হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত শিশু রোগী বেড়েছে

গত ১৮ জানুয়ারি নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ হন গণমাধ্যমকর্মী লোটন একরাম। এর দু’দিন পর তার স্ত্রী ও ১৪ বছর বয়সী মেয়ের নমুনা পরীক্ষায় ফল পজিটিভ আসে।

শেরপুর জেলার গিদ্দা নারায়ণপুর থেকে হার্নিয়ার সমস্যা নিয়ে ঢাকায় বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসে ৮ বছরের শিশু মহাতাব হাসান ইসরাত। শুরুতে তার হালকা ঠান্ডা ও জ্বর থাকলেও মা-বাবা তা আমলে নেননি। হার্নিয়ার সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসার পর চিকিৎসকরা জানান, অস্ত্রোপচার করতে হবে। তার আগে করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দেন তারা। পরীক্ষায় শিশুটির করোনা পজিটিভ আসে। এমন পরিস্থিতিতে তাকে সাধারণ ওয়ার্ড থেকে হাসাতালের করোনা ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের এপিডেমিওলজিস্ট এবিএম মাহফুজুর রহমান মামুন বলেন, ‘সংক্রমণ শুরুর পর থেকে হাসপাতালটিতে এ পর্যন্ত ৬৯০ জন রোগী কোভিড-১৯ ইউনিটে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৭ জন মারা গেছে। মাঝখানে সংক্রমণ কমে যাওয়ায় ইউনিটটি ফাঁকা পড়ে ছিল। কিছুদিন ধরে করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রোগী বাড়ছে। দুই সপ্তাহ আগে চারজন থাকলেও গত এক সপ্তাহে ১২ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে। আক্রান্তদের ওমিক্রন শনাক্তে চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন জিনোম সিকোয়েন্সিং করছে। এখনও ফল হাতে আসেনি।‘

৯ থেকে ১২ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে আতঙ্কের ব্যাপার হচ্ছে, এ বয়সের শিশুরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাদের ফুসফুসও সংক্রমিত হচ্ছে। এছাড়া পোস্ট কোভিড জটিলতা-মাল্টিসিস্টেম ইনফেমেটরি সিন্ড্রোম ইন চিলড্রেন-এ (এমআইএস-সি) ঝুঁকি থাকে। এটা শিশুদের জন্য খুবই মারাত্মক।

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড়দের চেয়ে শিশুদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম। তবে বাংলাদেশে শিশুরা যেসব রোগে আক্রান্ত হয় তার অন্যতম হচ্ছে শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ। এর উপসর্গ হচ্ছে নাক দিয়ে পানি পড়া, কাশি দেয়া, বুকে ঘড় ঘড় শব্দ করা, কোন কোন ক্ষেত্রে গলা অথবা কানে ব্যথা।

করোনার উপসর্গগুলোও অনেকটা একই রকম। সে কারণে সাধারণ সর্দি-কাশি নাকি শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ নাকি করোনা তা বোঝা যায় না। অন্যদিকে শীতের প্রকোপ বাড়ায় হাসপাতালে শ্বাসকষ্টে ভোগা শিশু রোগী বাড়ছে। তাদেরও অনেকে করোনা আক্রান্ত হলেও নমুনা পরীক্ষা ছাড়া তা নিশ্চিত হওয়া যায় না।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের সদ্য সাবেক পরিচালক এবং শিশু পুষ্টি, লিভার ও পরিপাকতন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ডা. সৈয়দ শফি আহমেদ বলেন, ‘শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষায়িত হাসপাতাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন হাসপাতালের শিশু ইউনিটগুলোতে রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসা রোগীর অধিকাংশই ঠান্ডা, সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কিউলাইটিসে ভুগছে।

‘পরীক্ষা করে দেখা গেছে, শিশুদের ৩০ থেকে ৩২ শতাংশই করোনা আক্রান্ত। কিন্তু শীতকালীন রোগের সঙ্গে ওমিক্রনের উপসর্গের মিল থাকায় রোগ দুটিকে আলাদা করা যাচ্ছে না। এজন্য নমুনা পরীক্ষা দেয়া হলেও সবাইকে আমরা পরীক্ষার আওতায় আনতে পারছি না। অভিভাবকরাও বুঝতে না পেরে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।’

ডা. শফি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বাচ্চাদের করোনা উপসর্গ দেখা দিলেই ন্যূনতম ৫ থেকে ১০ দিন আইসোলেশনে রাখতে হবে। সাধারণত পাঁচদিন পর বাচ্চাদের সংক্রমণ ঝুঁকি থাকে না। আর উপসর্গ থাকলে ১০ দিন পর্যন্ত আইসোলেশনে রাখতে হবে। রোগটি আপার রেসপিরেটরি হওয়ায় তেমন ক্ষতিক্ষর নয়।’

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ৯ থেকে ১২ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে আতঙ্কের ব্যাপার হচ্ছে, এ বয়সের শিশুরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাদের ফুসফুসও সংক্রমিত হচ্ছে। এছাড়া পোস্ট কোভিড জটিলতা-মাল্টিসিস্টেম ইনফেমেটরি সিন্ড্রোম ইন চিলড্রেন-এ (এমআইএস-সি) ঝুঁকি থাকে। এটা শিশুদের জন্য খুবই মারাত্মক। তাই নিতান্ত প্রয়োজন না হলে এই সময়ে সন্তানকে বাইরে যেতে দেয়া ঠিক হবে না। আর বাইরে গেলে জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং অবশ্যই মাস্ক পরাতে হবে।

এ বিভাগের আরো খবর