বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মারামারি আর ব্যাকটেরিয়ায় ৯ জেব্রার মৃত্যু

  •    
  • ২৫ জানুয়ারি, ২০২২ ২১:৫০

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নেতিবাচক পরিস্থিতির কথা ভেবেই তাৎক্ষণিকভাবে জেব্রাগুলোর মৃত্যুর খবর জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। তবে মৃত্যুর পর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সবগুলো জেব্রার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যেই গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে অন্তত ৯টি জেব্রার মৃত্যু হয়েছে।

এর মধ্যে চারটি জেব্রা মারা গেছে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে আর বাকি পাঁচটির মৃত্যু হয়েছে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে।

মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পার্কের প্রকল্প পরিচালক জাহিদুল কবির।

তিনি বলেন, ‘সাফারি পার্কের বিশাল এলাকাজুড়ে জেব্রার বসতি। তাদের জন্য রয়েছে কৃত্রিম লেক ও চারণ ভূমি। উন্মুক্ত এই জেব্রাগুলোর সঙ্গে অন্যান্য প্রাণীও বিচরণ করে। কিন্তু হঠাৎ করেই ৯টি জেব্রার মৃত্যু হলো। মারা যাওয়া জেব্রাগুলোর বেশির ভাগই মাদি।’

জাহিদুল কবির জানান, প্রতি বছর প্রজননের সময় জেব্রাগুলো একে অপরের সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। এ সময় বড় ধরনের ইনজুরিতে তাদের মৃত্যুও ঘটতে পারে। এ ধরনের মারামারিতেই বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে অন্তত ৪টি জেব্রা মারা গেছে। বাকিগুলো ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে।

কর্তৃপক্ষের দাবি, ৯টি জেব্রারই মৃত্যু হয়েছে গত ২ থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে। নেতিবাচক পরিস্থিতির কথা ভেবেই তাৎক্ষণিকভাবে তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। তবে মৃত্যুর পর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সবগুলো জেব্রার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

পরে তাদের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নমুনা ঢাকার মান নিয়ন্ত্রণ গবেষণাগার ও ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে পাঠানো হয়।

সোমবার রাতে সেসবের রিপোর্ট এসেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে জেব্রাগুলোর মৃত্যুজনিত কারণে বিশেষজ্ঞ দল পার্ক পরিদর্শন করেন। দুপুরে তারা পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।

এ সময় মৃত জেব্রাগুলোর সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সামনে উপস্থাপন করা হয়।

বিশেষজ্ঞ দলে ছিলেন জাতীয় চিড়িয়াখানার সাবেক কিউরেটর ডা. এবিএম শহীদ উল্লাহ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি অনুষদের অধ্যাপক ড. মো. আবু হাদী নুর আলী খান, ভেটেরিনারি অনুষদের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল আলম, ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, গাজীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এসএম উকিল উদ্দিন ও সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি অফিসার ডা. হাতেম সাজ্জাত জুলকারনাইন।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল আলম বলেন, ‘এসব প্রাণীর মৃতদেহে পাঁচ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।’

বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের প্রফেসর ডা. আবু হাদী নুর আলম খান ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে বলেন, ‘একই ঘাস সব ধরনের তৃণভোজী প্রাণী খাচ্ছে। অন্য কোনো প্রাণীর সমস্যা হচ্ছে না, শুধু জেব্রারই হচ্ছে। এ জন্য আপাতত অবজারভেশনের জন্য এক সপ্তাহ বা দশ দিন ঘাস পরিবর্তন করে অন্য জায়গার ঘাস দেয়া হবে। সব প্রাণীর পাকস্থলির ক্ষমতা বা হজমক্রিয়া এক রকম না।’

তিনি জানান, অন্যান্য প্রাণীকে যথারীতি আগের খাবারই দেয়া হবে। তবে সতর্কতা হিসেবে সেই খাবারগুলো প্রথমে ধুয়ে তারপর চপিং মেশিনে দিয়ে ছোট ছোট করে কেটে শুকিয়ে তারপর সরবরাহ করা হবে।

জাতীয় চিড়িয়াখানার সাবেক কিউরেটর ডা. এবিএম শহীদ উল্লাহ বলেন, ‘মানিকগঞ্জ থেকে ঘাস এনে জেব্রার খাবার হিসেবে সরবরাহ করা হয়। সেখানকার ঘাস পরীক্ষা করে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। তাই বর্তমানে অবশিষ্ট যে প্রাণীগুলো সাফারি পার্কে আছে তাদের সুস্থতায় বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, বাকি প্রাণীগুলোকে টিকিয়ে রাখতে পারব।’

তিনি জানান, পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে জেব্রার বসতির জায়গার মাটি ওলট-পালট করে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে জীবাণু ধ্বংস করতে হবে এবং সাফারি পার্কের জলাধারের পানি পরিবর্তন করতে হবে।

এ ছাড়া জেব্রাগুলোকে টিকার আওতায় আনতে হবে, তাদের খাবার হিসেবে পরিপক্ব ঘাসের ব্যবস্থা করতে হবে, শুকনা খাবার ফাঙ্গাসমুক্ত করে পরিবেশন করতে হবে, ঘাস পানিতে ভালো করে ধুয়ে কেটে পাত্রে পরিবেশন করতে হবে, প্রাণী বেষ্টনীতে বায়োসিকিউরিটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মীর ব্যবস্থা রাখতে হবে, পার্কের অভ্যন্তরে পতিত জমিতে ঘাস উৎপাদন করে খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে, নাইট ভিশন ক্যামেরাসহ পুরো বেষ্টনীতে সিসিক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাকি প্রাণীগুলোকেও নজরদারি করা হচ্ছে। তাদেরকে খাবারের সঙ্গে নিয়মিত অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিদিন মলসহ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।’

সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান বলেন, ‘হঠাৎ করে এভাবে প্রাণীগুলোর মৃত্যু খুবই কষ্টকর। নিজের হাতে লালন পালনের পর চোখের সামনেই এদের মৃত্যু দেখতে হলো। অসুস্থ হওয়ার মাত্র ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যেই মারা গেছে জেব্রাগুলো। এখানে আমাদের কারও কোনো ধরনের গাফিলতি ছিল না।

এ বিভাগের আরো খবর