অনশন ইস্যুতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুটি পক্ষের আলোচনায় মতৈক্য হয়নি।
অনশনে থাকা শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। তবে অন্য অংশটি বিকল্প কর্মসূচি ভাবার আহ্বান জানিয়েছেন।
অনশন শুরুর সপ্তম দিনে মঙ্গলবার রাতে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তাদের আলোচনা হয়।
এরপর রাত ৯টা ২৫ মিনিটে অনশন পালনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তাদের মুখপাত্র পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শাহরিয়ার আবেদিন।
তিনি বলেন, ‘উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাব।’
আন্দোলনরতদের একটি দল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে সমবেত হয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নেন। সে সময় তারা অনশনকারীদের অনশন ভাঙার অনুরোধ জানান। এ দলের নেতৃত্বে ছিলেন মোহাইমিনুল বাশার রাজ।
অনশনকারীরা কর্মসূচিতে অটল থাকার ঘোষণা দেয়ার পর রাজ বলেন, ‘আমরা তাদের শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে অনশন ভাঙার অনুরোধ করেছিলাম। কারণ তাদের জীবনের চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই। আমরা আমাদের কোনো সহযোদ্ধা হারাতে চাই না। তবে তাদেরকে জোর করার কিছু নেই। তাদের ওপর কিছু চাপিয়ে দেব না। আমরা তাদের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই।
‘এর পরেও আমরা অনশন থেকে সরে এসে আন্দোলনের বিকল্প পথ খোঁজা যায় কি না এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাব।’
আন্দোলনের শুরু যেভাবে
শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু ১৩ জানুয়ারি। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী।
১৬ জানুয়ারি বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পুলিশ সে সময় সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়ে। শিক্ষার্থীরাও ইট-পাটকেল ছোড়ে। এ ঘটনায় পুলিশ, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অর্ধশত আহত হন।
সে রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন নামেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, উপাচার্যই পুলিশ ডেকে তাদের ওপর হামলার নির্দেশ দেন। এ কারণে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ চান।
বাসভবনের সামনে অবস্থানের কারণে গত ১৭ জানুয়ারি থেকেই অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ।
১৯ জানুয়ারি বেলা ৩টা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী।
তাদের মধ্যে একজনের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তিনি অনশন শুরুর পরদিনই বাড়ি চলে যান। ২৩ জানুয়ারি আরও চারজন ও ২৪ জানুয়ারি একজন শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দেন।
শাবি শিক্ষার্থীদের অনশনের প্রথম দিন। ছবি: নিউজবাংলাএর মাঝে উপাচার্য ইস্যুতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ২২ জানুয়ারি গভীর রাতে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না এলেও দাবিগুলো লিখিতভাবে জমা দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। সেই সঙ্গে অনশন ভাঙার অনুরোধও জানান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
তবে বৈঠকের পর শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের মূল দাবি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ। এই দাবি না মানা পর্যন্ত তারা আন্দোলন থেকে সরবেন না, অনশনও চালিয়ে যাবেন।
২৩ জানুয়ারি রাতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। ২৮ ঘণ্টা পর সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় চালু করেন তারা।