বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মাইলেজ সুবিধা বহাল থাকা-না থাকা ইস্যুতে পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে। এই সুবিধা বহাল রাখার পক্ষে সোচ্চার কর্মীরা। তাদের এই দাবি না মানা হলে আগামী ৩১ জানুয়ারি থেকে ট্রেনের চাকা না ঘুরানোর হুমকি দিয়েছেন তারা।
বিষয়টিকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কীভাবে দেখছে এবং এ বিষয়ে নতুন কোনো পদক্ষেপ আছে কি না সে বিষয়ে অবশ্য কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রেলের রানিং স্টাফরা দীর্ঘদিন ধরেই মাইলেজ সুবিধা পেয়ে আসছেন। পেনশনও পান একই হিসাবে। কিন্তু নতুন করে বেতন হিসাবের সফটওয়্যারে ৩০ দিনের বেশি মাইলেজের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এ-সংক্রান্ত বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করে।
রেলওয়েতে দীর্ঘ সময় ধরে চলা মাইলেজ সুবিধা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত সংবলিত নতুন প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী সমিতি। তারা বলছে, অন্যথায় ৩১ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করা হবে।
সমিতির নেতারা জানান, রেলওয়ের সর্বস্তরের রানিং কর্মচারীরা ২০ জানুয়ারি সংগঠন কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ ও সভায় মিলিত হবেন। আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে সূত্রের ১ নম্বর পত্রের ‘খ’ ও ‘গ’ ধারা বাতিল করে রেলওয়ে কোড ও বিধি-বিধানমতে আগের মতো দ্রুত পেনশন কেস নিষ্পত্তিসহ অর্জিত মাইলেজ না দেয়া হলে ট্রেনে কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন কর্মীরা।
দেশের প্রতিটি রেলস্টেশনে সাঁটানো হয়েছে এমন পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত
সমিতির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, ‘রেলওয়ের যাত্রা শুরুর সময় থেকে রেল কোডের বিধান অনুযায়ী আট ঘণ্টা কাজের জন্য বা প্রতি একশ’ মাইল ট্রেন চালালে এক দিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ অতিরিক্ত মাইলেজ (ভাতা) দেয়া হয়। এ হিসাবে ছয় থেকে আট হাজার মাইল ট্রেন চালালে মাসিক বেতনের সঙ্গে ২০ থেকে ৬০ দিনের মাইলেজ দেয়া হতো। কিন্তু আইবাস প্লাস সিস্টেমে (বেতন হিসাবের সফটওয়্যার) ৩০ দিনের বেশি মাইলেজের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এতে ট্রেনচালকরা অতিরিক্ত পরিশ্রম করেও প্রাপ্য ভাতা থেকে বঞ্চিত হবেন।’
মজিবুর রহমান বলেন, ‘রেলমন্ত্রী থেকে শুরু করে রেলওয়ের সচিব, ডিজি ও জিএমসহ সবাই আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন মাইলেজ রীতিতে বেতন-ভাতা দেবেন। কিন্তু এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত তারা দিতে পারেননি। আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে আমাদের অধিকার ফিরিয়ে না দিলে ৩১ জানুয়ারি থেকে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব। এ সময় থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হবে।’
বেসামরিক কর্মচারীদের পেনশন ও আনুতোষিক হিসাবের উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অর্থ মন্ত্রণালয়ে সূত্রের ১ নম্বর পত্রের ‘খ’ ধারা অনুযায়ী বেসামরিক কর্মচারীদের পেনশন ও আনুতোষিক হিসাবের ক্ষেত্রে মূল বেতনের সঙ্গে কোনো ভাতা যোগ করে হিসাব করার সুযোগ নেই। এ কারণে রেলওয়ে রানিং স্টাফদের মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দিতে অর্থ বিভাগ অসম্মতি জানিয়েছে।”
রানিং স্টাফরা বলছেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কাজ করলে তাদেরকে দুর্ভোগে পড়তে হবে। তাদের পেনশনও আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সার্বিক সমস্যা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় দুশ্চিন্তা নিয়ে ট্রেন চালানোও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
মাইলেজ সুবিধা বহাল রাখার দাবি আদায়ে রানিং স্টাফদের এমন আল্টিমেটাম নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কী ভাবছে- সে বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার রেলমন্ত্রী, রেলওয়ে মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) ও অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (অবকাঠামো) মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কেউই সাড়া দেননি।
রেলমন্ত্রী ও রেলওয়ে মহাপরিচালকের মোবাইল নম্বরে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।