দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়েছে। সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশের কোটায়। এমন অবস্থায় দেয়া বিধিনিষেধও তেমন মানছে না মানুষজন। তাই সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাণিজ্য মেলার মতো আয়োজনে হাজার হাজার মানুষের সমাগম চালু রাখায় ব্যাপক সমালোচনাও হয়েছে। ব্যাপক হারে বাড়তে থাকা করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় বাণিজ্য মেলা বন্ধ করা এবং বইমেলার মতো আয়োজন পেছানোর সুপারিশ করেছে পরামর্শক কমিটি।
কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুল্লা এই সুপারিশ এরই মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পৌঁছে দিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
করোনার দুটি ঢেউয়ে দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানির পর এবার আঘাত হেনেছে তৃতীয় ঢেউ। এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা কম হলেও আক্রান্ত দৈনিক ছাড়িয়েছে ১০ হাজার। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছাড়িয়েছে ৩০ শতাংশ।
তৃতীয় ঢেউয়ের লক্ষণ যখন স্পষ্ট, তখন ১৩ জানুয়ারি সরকার জারি করে ১১ দফা বিধিনিষেধ। দেয়া হয় গণজমায়েতে নিষেধাজ্ঞা, গণপরিবহনে যাত্রী অর্ধেক। যদিও পরে ট্রেন ছাড়া অন্য যানবাহনে আসনের সমান যাত্রী বহন করতে বলে।
করোনার তৃতীয় ঢেউ নিশ্চিতের পর ২১ জানুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীরে ক্লাস বন্ধের আদেশ আসে। তবে এর মধ্যেও মানুষের জটলা চোখে পড়ছে, এমনকি তৃণমূলে নির্বাচনের জমজমাট প্রচার চলছে। বন্ধ হয়নি বাণিজ্য মেলার মতো আয়োজনও।
যদিও নতুন করে অর্ধেক লোক দিয়ে সরকারি অফিস চালানোর নির্দেশ এসেছে, একই নির্দেশ এসেছে আদালত ও ব্যাংকের পক্ষ থেকেও।
অধ্যাপক সহিদুল্লা বলেন, ‘করোনা নিয়ন্ত্রণের বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সরকারকে আরও কঠোর হওয়া উচিত। আমরা কয়েকবার বিধিনিষেধ যাথাযথ বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করেছি। শুধু বিধিনিষেধ দিলে হবে না। তা যথাযথ বাস্তবায়ন দরকার।
‘সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। অফিস-আদালতে যে অর্ধেক জনবল নিয়ে কাজ করার সুপারিশ করা হয়েছে, এগুলো ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাই করোনা নিয়ন্ত্রণে পরিবহনে অর্ধেক যাত্রী ও বাণিজ্য মেলা বন্ধ এবং বইমেলা পেছানো উচিত।’
ওমিক্রন নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের সুপারিশ করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওমিক্রন প্রতিরোধে নতুন করে লকডাউন দিয়ে লাভ হবে না। ওমিক্রনের সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া আমরা যখন দেখি হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি, চিকিৎসকদের ওপর চাপ তৈরি হচ্ছে, তখন লকডাউনের সুপারিশ করি। লকডাউন দিলে জনজীবনে প্রভাব পড়বে, অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে; কাজেই লকডাউনের আগে যে কাজগুলো বেশি কার্যকর সে কাজগুলো যদি আমরা যথাযথভাবে করতে পারি, তাহলে করোনা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।’
স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর আহ্বান জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন প্রথম দেখা দেয় দক্ষিণ আফ্রিকায়, সেখানে লকডাউন না দিয়ে শুধু স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করেছে। আমাদেরও স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’