জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতে সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের ওপর সুনির্দিষ্ট হারে কর আরোপ জরুরি বলে মত দিয়েছেন একাধিক সংসদ সদস্য (এমপি)।
জাতীয় সংসদের পার্লামেন্ট মেম্বার’স ক্লাবে শনিবার বেলা ১১টার দিকে ‘জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে প্রত্যাশিত তামাক কর ব্যবস্থাপনা ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এ মত দেন।
দ্য ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সভায় গাইবান্ধা-১ আসনের এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি সভাপতিত্ব করেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এস এম আব্দুল্লাহ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন পাবনা-১ আসনের এমপি শামসুল হক টুকু এমপি। সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের এমপি হারুনুর রশিদ, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি আবিদা আঞ্জুম মিতা।
ভার্চুয়ালি আলোচনায় যুক্ত হন সিরাজগঞ্জ-১ আসনের এমপি ডা. হাবিবে মিল্লাত, নীলফামারী-৩ আসনের রানা মোহাম্মদ সোয়াইল ও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি অপরাজিতা হক।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের (এনটিসিসি) সমন্বয়কারী হোসেন আলী খন্দকার, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপচার্য অধ্যাপক ড. গণেশ চন্দ্র শাহা, হার্ট ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ড. সোহেল রেজা চৌধুরী, ক্যানসার হোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দীন ফারুক, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের প্রোগ্রাম হেড মো. শফিকুল ইসলাম, দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রুমানা হক।
আলোচনা সভায় শামসুল হক টুকু বলেন, ‘তামাকের উচ্চ মূল্য বিশেষ করে কিশোর-তরুণদের তামাকের ব্যবহার শুরু করতে নিরুৎসাহিত করে। সুনির্দিষ্ট করারোপ করে তামাকজাত দ্রব্যের যাতে মূল্য বৃদ্ধি করা যায়, সরকারকে সে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।’
ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, ‘তামাকের জন্য ১.৫ মিলিয়ন (১৫ লাখ) মানুষ দক্ষিণ এশিয়ায় মারা যাচ্ছে। এ মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। নতুন নতুন তামাক ব্যবহারকারীদের রুখতে তামাকের কর আরোপ বৃদ্ধি করতে হবে।
‘তামাকমুক্ত দেশ গড়তে দ্রুত একটি জাতীয় কর নীতি প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও রাজস্ব বৃদ্ধিতে আগামী অর্থবছরেই তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপের দাবি জানাচ্ছি।’
হারুনুর রশিদ বলেন, ‘প্রতি বছর ১৮ লাখ মানুষকে তামাক থেকে বিরত করতে হবে এবং নতুনদের তামাক ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে হবে। তামাকের ব্যবহার যদি রোখা না যায়, তবে আমরা এসডিজি লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব না। তামাকের মতো ক্ষতিকর পণ্য বিক্রিতে অবশ্যই লাইসেন্সের ব্যবস্থা করতে হবে।
‘তামাক কোম্পানিগুলোর ফাঁকি রোধে ডিজিটাল করার বিকল্প নেই। তামাক চাষের জমিগুলোকে তালিকাভুক্ত করে নানা প্রণোদনা দিয়ে তাদের এ চাষ থেকে বিরত করতে হবে।’
ডা. হাবিবে মিল্লাত বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের জন্য একটি জাতীয় কর নীতি থাকলে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করায় সুবিধা হবে। এ জন্য সরকারের যথেষ্ট সদিচ্ছা আছে। চার স্তরভিত্তিক অ্যাডভেলরেম কর আরোপ পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট কর আরোপের মাধ্যমে অতি দ্রুতই সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।’
অনুষ্ঠানে তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত প্রায় ৫০ জন কর্মকর্তা এমপিদের সঙ্গে বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরে অংশ নেন। তামাক নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখায় এসব কর্মকর্তার ভূয়সী প্রশংসা করেন এমপিরা।