কেউ তৈরি করছেন বাঁশের চাটাই, কেউ ডালা, আবার কারো হাতে তৈরি হচ্ছে কুলা। নানা আকারে ও নকশায় একেকটি পণ্য গড়ে উঠছে।
বাঁশ দিয়ে বাহারি সামগ্রী তৈরিতে যেন কোনো ক্লান্তি নেই নীলফামারীর ডোমারের বড়রাউতা দেবীরভাঙ্গা গ্রামের মানুষের। বাঁশের সঙ্গে এ গ্রামের মানুষের যেন নাড়ির সম্পর্ক।
তাদের সকাল শুরু হয় বাঁশ কাটা, চাঁছা, বাঁধা, শুকানোর মাধ্যমে। সংসারের কাজ শেষ করে বাড়ির উঠানে বা মেঠোপথের পাশে নারীরা বসে পড়েন বাঁশের সামগ্রী বানাতে। বাড়ির ছোট ছেলেমেয়েরাও এ কাজে তাদের সাহায্য করে।
তবে যুগ যুগ ধরে করে আসা এই কাজ নিয়ে হতাশ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। কারণ বাঁশের সামগ্রী তৈরি তো শুধু শখের বসে নয়; এটি তাদের জীবিকারও উপায়।
বাজারে এখন প্লাস্টিকের পণ্যের চাহিদাই বেশি। ফলে দিন দিন চাহিদা হারাচ্ছে বাঁশের সামগ্রী। তা ছাড়া বাঁশের দামের সঙ্গে পণ্যের দাম না বাড়ায় লাভের মুখ দেখছেন না কারুশিল্পীরা।
স্থানীয়রা জানান, আগে যে বাঁশ ২০ থেকে ৩০ টাকায় পাওয়া যেত, সেই বাঁশ এখন কিনতে হচ্ছে দুই শ থেকে আড়াই শ টাকায়।
কারিগর পলাশ দাস নিউজবাংলাকে জানান, একটি বাঁশ থেকে ১০-১২টি ডালা তৈরি হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিটি পণ্য থেকে ১০ থেকে ২০ টাকা লাভ থাকে। এই সীমিত লাভ দিয়ে পরিবার চালানো কষ্টকর।
দেবীরভাঙ্গা গ্রামের অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। যাদের আয়-রোজগারের আর কোনো পথ নেই, তারা অনেকটা বাধ্য হয়েই এখনও বাঁশের পণ্য বানিয়ে চলেছেন।
বাড়ির উঠানে কাজ করতে করতে বিনোনাদ দাস বলেন, ‘এটা হামার বাপ-দাদার পেশা। তাই আঁকড়ি ধরি আছি। ছাওয়াগুলা (সন্তানরা) এখন আর এ পেশায় কাজ করবের চায় না। পরিশ্রম বেশি, কিন্তু লাভ একনা (একটু) কম।’
শিমুল রানী দাস বলেন, ‘হামার জমিজমা নাই। এই কাজই হামার কৃষি। সারা বছর ধারদেনা করি চলার লাগে।’
মানবী দাস নামের আরেক কারিগর বলেন, ‘ধারদেনা আর বিভিন্ন সমিতি থেকে বেশি সুদে টাকা নিয়ে কোনো রকমে টিকি আছি আমরা। হামাক যদি সরকারিভাবে অল্প সুদে ঋণ দেয়, তাহলে এই কাজ করি হামরা বাঁচমো।’
বাঁশ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এবং বাঁশের পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধিতে ২০১৮ সাল থেকে কাজ করছে ব্যাম্বু প্রজেক্ট বাংলাদেশ (ব্রিফ)।
ব্রিফের নির্বাহী পরিচালক শাহ আহসান হাবিব জানান, বাঁশের উৎপাদন বৃদ্ধি, চাষিদের প্রশিক্ষণ, বাঁশের পণ্য বাজারজাতকরণ ও এই পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করতে তারা কাজ করছেন। এ ছাড়া নিয়মিত বিভিন্ন সেমিনার ও মেলায় বাঁশের পণ্যের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেন।
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘যারা বাঁশশিল্পের সঙ্গে জড়িত, তারা অর্থনৈতিক কারণে পিছিয়ে রয়েছেন। তাদের বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দেয়া হচ্ছে যেন সেখান থেকে সহযোগিতা পান।’
বিসিক জেলা কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী গোলাম রব্বানী বলেন, ‘অনেকেই আমাদের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত। যারা অর্থ সহযোগিতা চান আমরা তাদের ঋণ দিয়ে পাশে থাকি। পাশাপাশি পণ্য উৎপাদন ও নকশা তৈরিতেও সহায়তা করি।’