পান বিক্রির টাকায় মিটছে না শ্রমিকের মজুরি। বাড়ছে সার-উপকরণের দাম। অনেকে ক্ষুদ্র ঋণে আটকা। বিকল্প আয় না থাকায় সংসার চালাতে তাই হিমশিম খেতে হচ্ছে চাষিদের।
তার ওপর ভারত থেকে পান আমদানি করছে আড়তদাররা। ফলে চাহিদা কমেছে মিষ্টিপানের। মৌসুমের দুই মাস পেরোলেও দাম না পেয়ে হতাশ মহেশখালীর ৩৯ হাজার পান চাষি।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা ও রাজশাহীর আড়তদাররা স্থলপথে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে পান আমদানি করে সারা দেশে সরবরাহ করছেন- এ কারণে মিষ্টিপানের চাহিদা কমেছে। গত বছর ইউরোপে মিষ্টিপান রপ্তানি শুরু হয়েছিল। কিন্তু বছর পেরোতেই রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে পান আমদানি করায় চাহিদা কমেছে মিষ্টিপানের। ছবি: নিউজবাংলা
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, মহেশখালীর পাঁচ ইউনিয়নের পাহাড়ে ও বিলে ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। এ পেশায় ৩৯ হাজার চাষির পাশাপাশি লক্ষাধিক মানুষ জড়িত।
কালারমারছড়ার এলাকার চাষি সাইফুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, পাঁচ লাখ টাকা খরচে দেড়কানি জমিতে পান চাষ করেছেন তিনি। অগ্রহায়ণ থেকে বৈশাখ পর্যন্ত পান বিক্রি হয়। এ পর্যন্ত ৮০ হাজার টাকা পেয়েছেন।
এ অবস্থায় লাভ তো দূরের কথা, মূলধন হারানোর শঙ্কায় আছেন এ চাষি। পান বিক্রির টাকায় শ্রমিকের মজুরিও হচ্ছে না তার।
মিজ্জিরপাড়ার পান চাষি আবদুর রহমান জানান, ৮০ হাজার টাকা খরচে ৩০ শতক জমিতে পান চাষ করেছেন তিনি। মৌসুমের দুই মাসে আয় করেছেন মাত্র ১১ হাজার টাকা। বাকি চার মাসে যা খরচ হয়েছে তা উঠবে কি না সংশয়ে আছেন তিনি।
মহেশখালীর পাঁচ ইউনিয়নের পাহাড়ে ও বিলে ১৬শ হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। ছবি: নিউজবাংলা
হোয়ানকের চাষি মনির আলম বলেন, ‘পান বিক্রির টাকায় সংসার চালাইতে হিমশিম খাই। আড়াই লাখ টাকা ঋণ আমার। কীভাবে শোধ করব, বুঝে উঠতে পারি না।’
মিজ্জিরপাড়ার পান ব্যবসায়ী আবু নোমান জানান, ঢাকা-চট্টগ্রামের আড়তদারদের কাছে মিষ্টিপানের চাহিদা কমেছে। চাষিদের কাছ থেকে এ বছর যে পান বিড়া প্রতি ১০০ টাকায় কিনেছেন তিনি, গত মৌসুমে সেগুলো কিনেছেন ৩০০-৩৫০ টাকায়। ছোট সাইজের যে পান ৩০-৪০ টাকায় কিনেছেন তা এবার কিনেছেন ১০০-১৫০ টাকায়।
নোনাছড়ি পানবাজার সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মিয়া নিউজবাংলাকে জানান, স্থলবন্দর হয়ে ঢাকা ও রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে পান আমদানি করছেন। এই পান চট্টগ্রামের বিভিন্ন আড়তে সরবরাহ করে যাচ্ছেন। আড়তদারদের কাছে মিষ্টি পানের চাহিদা নেই। এ কারণে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না চাষিরা। ব্যবসায়ীরাও লোকসান গুনছেন তাই।
গত বছর ইউরোপে মিষ্টিপানের রপ্তানি শুরু হলেও বছর পেরোতেই তা বন্ধ হয়ে যায়। ছবি: নিউজবাংলা
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক মো. এখলাছ উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বছর পানের আবাদ ভালো হয়েছে। পান উৎপাদন বেড়েছে। বছরখানেক আগে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পান রপ্তানি হতো। সেটি আপাতত হচ্ছে না। পান চাষের জন্য সরকারের কোনো প্রকল্প নেই। আমরা চাষিদের টেকনিক্যাল সাপোর্টটাই দেই।’
বিদেশ থেকে পান আমদানি কেন হচ্ছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘রাজশাহী অঞ্চলের পান চট্টগ্রামে আসে জানি। তবে ভারত থেকে পান আনা হচ্ছে এ ধরনের তথ্য আমার কাছে নেই।’