বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা ৫৪টি আন্তসীমান্ত নদী নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কোনো সামগ্রিক অববাহিকাভিত্তিক পদ্ধতি নেই। ভারতের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও এনভায়রনমেন্ট গভার্নড ইন্টিগ্রেটেড অর্গানাইজেশনের পরিচালক জয়ন্ত বসু এমন মন্তব্য করেছেন। অভিন্ন নদীগুলো নিয়ে সামগ্রিক অববাহিকাভিত্তিক পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত বলে মত দিয়েছেন এই গবেষক।
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘তিস্তা নদী অববাহিকা: সংকট উত্তরণ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সপ্তম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শনিবার গবেষণাপত্র উপস্থাপন করে তিনি এ মন্তব্য করেন।
‘জিওপলিটিকস অফ রিভার তিস্তা অ্যান্ড নিড টু পারসু নেচারবেইজড নেগোশিয়েটেড অ্যাপ্রোচ (এনবিএনএ)’ শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন জয়ন্ত বসু।
গবেষণাপত্রে তিনি দেখিয়েছেন, দক্ষিণ এশিয়ার আন্তদেশীয় নদীর সমস্যা আঞ্চলিক ভূরাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, এই অঞ্চলের সব দেশ প্রধানত কৃষি, জলবিদ্যুৎ এবং অন্যান্য কারণে নদীর ওপর প্রবলভাবে নির্ভরশীল।
আর তাই এ অঞ্চলের অসম রাজনৈতিক ক্ষমতার উপস্থিতি; আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও স্থানীয় রাজনৈতিক সম্পর্কের প্রভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তন আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
সপ্তম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শনিবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে আলোচনায় অংশ নেন গবেষক-বিশেষজ্ঞরা।
আন্তদেশীয় নদীর পানি ব্যবহারে সমন্বিত মডেল বাস্তবায়নে আন্তদেশীয় স্টেকহোল্ডার পর্যায়ে আলোচনার আহ্বান জানান জয়ন্ত বসু। তিনি বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কোনো সামগ্রিক অববাহিকাভিত্তিক পদ্ধতি নেই। যদিও উভয় দেশের মধ্য দিয়ে ৫৪টি আন্তসীমান্ত নদী বয়ে গেছে। এ জন্য একটি সামগ্রিক অববাহিকাভিত্তিক পদ্ধতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।’
নদীর ওপর বাঁধ ইকোসিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে জানিয়ে অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনার আহ্বান জানান সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু।
কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তাকে আলোচনার কেন্দ্রে রেখে বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের (বিসিএএস) নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান বলেন, ‘বাঁধ ও পানি ধারণ করে পানিপ্রবাহ সীমিত করলে নদীভিত্তিক মানুষের জীবন-জীবিকা ব্যাহত হবে।’
তার মতে, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট নাগরিকরা তিস্তা নদীর পানির মতো যেকোনো বিরোধপূর্ণ সমস্যা সমাধানে সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারেন।
নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ উল্লেখ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রকৃতিভিত্তিক আলোচনার পদ্ধতি অনুপস্থিত। পানি ব্যবস্থাপনা ও বণ্টন বিষয়ে আলোচনার প্রক্রিয়াটি জবাবদিহিমূলক এবং স্বচ্ছ হওয়া উচিত।’
নিয়ম অনুযায়ী বছরে দুবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন বলে জানান বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল।
তিনি বলেন, ‘গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার ব্যবস্থাপনাকে সামগ্রিকভাবে দেখা উচিত। এই অঞ্চলের পাঁচটি নদীপ্রধান দেশকে একসঙ্গে বসে এ তিনটি নদী পরিচালনা করা উচিত। কারণ এটি একক নদী ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ।’
রিভারাইন পিপলের পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের ভেতরের ২৫টি নদীর সঙ্গে তিস্তা নদীর সম্পর্ক রয়েছে। তিস্তাপাড়ের মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে তিস্তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হবে না।
‘প্রতিটি নদীর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নদী নিয়ে যেকোনো মহাপরিকল্পনা গ্রহণে নদী পাড়ের মানুষ ও পরিবেশের কথা চিন্তা করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা জরুরি।’