২০১৭ সালে মেয়র নাসিরের আমলে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরোধিতায় স্থগিত হয়েছিল গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) বাড়ানোর প্রস্তাব। এবার সেই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বর্তমান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
চার বছর আগে বন্দর নগরীতে গৃহকরের ওপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দেয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করায় নতুন নিয়মে কর আদায়ে আর কোনো বাধা থাকল না।
এ অবস্থায় মহানগরীর বাসিন্দারা দাবি করেছেন, নির্বাচনি প্রচারে গৃহকর না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বর্তমান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তাই ক্ষমতায় এসে গৃহকর চাপিয়ে দেয়াকে বাড়তি বোঝা মনে করছেন তারা।
গত ২ জানুয়ারি গৃহকর আদায়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়ে চসিকের আবেদনের পর মঙ্গলবার তাতে ইতিবাচক সায় দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
বুধবার দুপুর ১২টার দিকে নিউজবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গতকাল এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা পেয়েছি। এটি এখনও কার্যকর করা হয়নি।’
মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১০ বছর আগের নির্ধারিত হারে জনসাধারণ কর দিচ্ছে। এতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বিপুল রাজস্ব আয় বঞ্চিত হচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় নাগরিক সেবা ও উন্নয়ন গতিশীল রাখাসহ করপোরেশনের আয় বাড়াতে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে প্রকাশিত পঞ্চবার্ষিকী গৃহকর পুনর্মূল্যায়নের আলোকে তা আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়।
চসিকের রাজস্ব বিভাগ জানিয়েছে, সিটি করপোরেশন ট্যাক্সেশন রুলস অ্যাক্ট-১৯৮৬-এর ২১ ধারা মতে, সিটি এলাকায় প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সব ধরনের স্থাপনার পরিমাপ ও সংশ্লিষ্ট তথ্য সরেজমিনে সংগ্রহ করে কর নির্ধারণ করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে ভাড়ার ভিত্তিতে গৃহকর নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এতদিন পুরোনো পদ্ধতিতে স্থাপনার আয়তন অনুযায়ী (প্রতি বর্গফুট) গৃহকর আদায় করে আসছিল কর্তৃপক্ষ।
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে গৃহকর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। কিন্তু হিসাব বলছে, নতুন নিয়মে কর আদায় হলে এই খাতে রাজস্ব বেড়ে দাঁড়াবে ৮৫১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
প্রস্তাবিত গৃহকরের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে ভাড়ার ভিত্তিতে কর আদায় করতে পারবে চসিকের রাজস্ব বিভাগ। ফলে আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি পৌরকর দিতে হবে নগরবাসীকে।
নগরীর হালিশহর কে ব্লক এলাকায় একটি আবাসিক ভবনের মালিক আবদুর রাজ্জাক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে ভবনের মূল্যায়ন করা হতো বর্গফুটের ভিত্তিতে। কিন্তু নতুন নিয়মে তা ভবনের ভাড়া বা আয়ের বিপরীতে নির্ধারণ করা হবে। নগরবাসীর আন্দোলনের মুখে এতদিন এটি স্থগিত ছিল। এখন যদি কার্যকর হয় তাহলে ভাড়াটিয়াদের ভাড়া বৃদ্ধি করা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই।’
চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আমির উদ্দিন বলেন, ‘আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে গৃহকর পুনর্মূল্যায়ন স্থগিত হয়েছিল। এ বিষয়ে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, বিদ্যমান কর থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ শতাংশ বাড়ানো যাবে। তা না মেনে সিটি করপোরেশন পুনর্মূল্যায়ন কর কার্যকর করলে নগরবাসী রাজপথে নামতে বাধ্য হবে। একই সঙ্গে আদালতেরও দ্বারস্থ হবে।’
আমির উদ্দিন আরও বলেন, ‘নতুন নিয়মে গৃহকর চালু করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিও ভঙ্গ করবেন মেয়র। নির্বাচনের সময় নগরবাসীকে তিনি কর না বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন।’
এদিকে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিধিবিধান অনুযায়ী গৃহকর আদায় করা হবে। গৃহকর নয়, কেবল করের আওতা বাড়ানো হবে। আর যারা আপিল করবে তাদের গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে রাখা হবে। আগে তিন তলা ঘর এখন পাঁচ তলা হলে সেটার গৃহকর দিতে হবে।’