বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের একটি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী দু-তিন দিন ধরে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। মা তাকে মেরেও স্কুলে পাঠাতে পারেননি। পরে জানতে পারেন না যাওয়ার কারণ।
ওই মেয়েটির মা নিউজবাংলাকে বলেন, “আমার মাইয়া ইশকুলে যায় না। দু-তিন দিন ধইরা যায় না। না যাওনে আমি হেরে (তাকে) মারছি। তাও স্বীকার যায় না। আমার ভাগ্নি আইসা কইছে, ‘কী যাইবে? এরম এরম চলতে আছে। ওই আপনারে লজ্জায় কয় না।’ আমরা তার বিচার চাই।”
এমন অভিযোগ শুধু একজন ছাত্রীর নয়। ওই স্কুলের একাধিক ছাত্রী ও তাদের অভিভাবক প্রধান শিক্ষক ননী গোপাল হালদারের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন। স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বেশ কয়েকজন।
লিখিত অভিযোগের পর চেয়ারম্যান বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন ও স্কুলে যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
এমন অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বাদশাকে ফোন দিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি কল কেটে দেন। আর ধরেননি।
স্কুলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ২৬ জন, তাদের মধ্যে ছাত্রী ১৬ জন। কয়েক দিন হলো ক্লাসে আসছে চার থেকে পাঁচ ছাত্রী।
পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী বলে, ‘স্যার গেলে আমাগো ধরে। আর কত কিছু কয়। হেই জন্য যাই না।’
এক অভিভাবক জানান, যৌন হয়রানির বিষয়টি স্কুলের বাংলা শিক্ষক ময়না রাণী শিকদারকে জানালে তিনি ছাত্রীদের বলেন, ‘ওতে কী হয়? স্যার তো তোমাদের একটু আদর করতেই পারেন।’
তবে ময়না বলেন, ‘আমার কাছে কখনও কোনো ছাত্রী এমন অভিযোগ করেনি।’
গত ৫ জানুয়ারি এক ছাত্রী তার নানা-নানিকে বিষয়টি জানায়। তারা ১১ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে ননী গোপালের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। এরপর বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়। সে সময় আরও কয়েকজন ছাত্রী তাদের পরিবারকে একই অভিযোগ জানায়।
ইউএনওর কাছে অভিযোগের পরও কোনো বিচার পাননি বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।
এ বিষয়ে ইউএনও জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি দেখার জন্য শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছিল। আমাকে ওই কর্মকর্তা জানান, অভিযোগ মিথ্যা ছিল। তাই প্রত্যাহার করা হয়েছে।
‘তবে আমি জানতে পেরেছি যে ঘটনা সত্য। দ্রুতই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’
একজন অভিযোগে জানান, এর আগে ওই শিক্ষক যে স্কুলে ছিলেন সেখানে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে স্থানীয়দের কাছে মার খেয়েছেন। ৩০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে তিনি এখানে বদলি হয়ে এসেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে প্রধান শিক্ষক ননী গোপালকে ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি।