যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ক্রয় আদেশ পায় বাংলাদেশের একটি তৈরি পোশাক কারখানা। ডিসেম্বরের মধ্যে পণ্য সরবরাহের কথা ছিল। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পণ্য তৈরিও হয়। কিন্তু শিপমেন্টের তারিখ এগিয়ে এলেও ক্রেতা পক্ষের তাগিদ দেখা যাচ্ছে না।
একপর্যায়ে কারখানার মালিক যোগাযোগ করলে ক্রেতা পক্ষ জানায়, করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পণ্যের সরবরাহ নিতে ধীরে চলো নীতি নেয়া হয়েছে।
ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে করেনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসার পর দেশের তৈরি পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। কিন্তু ওমিক্রনের প্রার্দুভাবে দেশের রপ্তানি আয়ের সর্ববৃহৎ খাত তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারাখানা মালিকদের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।
স্থানীয় পোশাক কারখানার মালিকরা বলছেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে ক্রেতারা। তারা ক্রয় আদেশ বাতিল করেনি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পণ্য সরবরাহের তারিখ এক বা দুই মাস পিছিয়ে দিয়েছে।
চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে ডিসেম্বরে পোশাক খাতের রপ্তানি বেড়েছে বা প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫২ শতাংশের বেশি। অর্থবছরের শুরু থেকেই পোশাক খাতের রপ্তানিতে তেজিভাব লক্ষ্য করা গেছে এবং তা অব্যাহত আছে। কিন্তু ওমিক্রনের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হলে আদেশ বাতিলের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশীয় পোশাক রপ্তানিকারকরা।
ইউরোপ হচ্ছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় বাজার। মোট রপ্তানির ৫৬ শতাংশ যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে। আর একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে যায় ৪১ শতাংশের বেশি। আর এ দুটি গন্তব্যেই ওমিক্রন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। উদ্বেগটা মূলত এ কারণেই।
ওমিক্রন মোকাবিলায় দেশে দেশে ব্যাপক কড়াকড়ি শুরু হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে পণ্য নিয়ে কী হবে, এখন আমদানির প্রয়োজন আছে কিনা- এমনটা ভাবতে শুরু করেছে ক্রেতারা।
মোট কথা, ওমিক্রনের কারণে পণ্য নেয়ার বিষয়ে ভাটার টান পড়েছে ক্রেতাদের মাঝে।
তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমই’র সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম পারভেজ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্রেতারা পণ্য নেয়ার সময় পেছাচ্ছেন। তারা ধীরে চলো নীতির জানান দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে কিছু কিছু ক্রেতা শিপমেন্টের সময় এক থেকে দুই মাস পিছিয়ে দিয়েছে। অবশ্য রপ্তানি আদেশ বাতিল করেনি।
‘জনগণের জীবন স্বাভাবিক না হলে বেচা-কেনা ঠিকমতো হয় না। অনলাইনে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম বিক্রি হয়। ওমিক্রনে ইউরোপ ও আমেরিকায় স্বাভাবিক জীবন-যাপন কিছুটা ব্যাহত হয়েছে বলে আমাদের কাছে খবর এসেছে। তবে রপ্তানি আদেশ বাতিল না হলেও নতুন আদেশ দেয়ার বিষয়ে ধীরে চলো নীতি নিয়েছে ক্রেতারা।
‘উদ্বেগের বিষয় হলো, ওমিক্রন সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হচ্ছে, ঝুঁকিটা থেকেই যাবে। ওদিকে ওমিক্রন কখন শেষ হবে তা-ও বলা যাচ্ছে না।’
আনোয়ার-উল আলম পারভেজ আরো বলেন, ‘এখন যেসব ক্রয় আদেশ আছে সেগুলোর শিপমেন্টের সময় মে মাস পর্যন্ত আছে। এর মধ্যে কিছু কিছু আদেশের সময় ২/১ মাস পিছিয়ে দিয়েছে ক্রেতারা। এতে তেমন প্রভাব পড়বে না। তবে লক্ষণ খুব একটা ভালো দেখছি না।’
ইউরোপের বৃহৎ ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওমিক্রনের প্রেক্ষাপটে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
বাংলাদেশে ইউরোপের বড় একটি পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কারখানা মালিকরা সক্ষমতার বেশি ক্রয় আদেশ নিয়েছেন। অতিরিক্ত ক্রয় আদেশের কারণে তাদের তৈরি পণ্য সরবরাহ নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।’
নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ওমিক্রনের কারণে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। তবে ক্রেতা ও রপ্তানিকারক উভয় পক্ষই পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে। ওমিক্রন আরও খারাপের দিকে গেলে সমস্যা হতে পারে।’