দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়ানো নিয়ে উদ্বেগজনক তথ্য দিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। জানিয়েছেন, জিনোম সিকুয়েন্সে দেখা গেছে রাজধানীতে বর্তমানে করোনা আক্রান্তের ৬৯ শতাংশের শরীরেই ওমিক্রনের উপস্থিতি রয়েছে।
সচিবালয়ে সোমবার রুশ রাষ্ট্রদূতর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ঢাকায় কিছু জড়িপ করেছি, জিনোম সিকুয়েন্সিং করেছি, তার মধ্যে দেখা গেছে ওমিক্রন এখন ৬৯ ভাগে উন্নীত হয়েছে। এটা আগে ১৩ শতাংশ ছিল। এই ১০-১৫ দিনের মধ্যেই আমরা এটা পেয়েছি।
‘এটা শুধু ঢাকায় করা হয়েছে। তবে ঢাকার বাহিরেও আমরা মনে করি একই হাল হবে। এ কারণেই ইনফেকশন রেট ১৮ শতাংশ হচ্ছে।’
বয়স ৫০ হলেই বুস্টার ডোজ
করোনার নতুন ঢেউ মোকাবিলায় টিকার বুস্টার ডোজ দেয়ার বয়সসীমা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বলেছেন, যাদের বয়স ৫০ বছরের মধ্যে তাদের সবাইকে বুস্টার ডোজ দেয়া হবে।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমাদের টিকা কর্মসূচি চলমান আছে। আমরা বুস্টার ডোজ দিয়ে যাচ্ছি। এতে খুব অগ্রগতি হয়নি। এর কারণ ৬ মাস সকলের এখনও হয়নি। আমরা প্রায় ৭ লাখ বুস্টার দিতে পেরেছি।
‘বুস্টারের বয়স আগে ছিল ৬০ বছর। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৫০ বছর থেকেই এখন থেকে বুস্টার ডোজ দেয়া হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীরও অনুমোদন আছে। এতে আমরা মনে করি, প্রায় ৭০ লাখ মানুষকে বুস্টার ডোজ দিতে পারব।’
শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৭ লাখ টিকা দিয়েছি, এটা আমাদের বড় প্রাপ্তি। হাতে এখনও প্রায় ৯ কোটি ৩০ লাখ ডোজ আছে। যারা নিবন্ধন করেছিলেন তাদের মধ্যে প্রায় শতভাগকেই টিকা দেয়া হয়ে গেছে।’
সংক্রমণ বাড়ায় উদ্বেগ
করোনা আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হারে বৃদ্ধি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি বলেন, ‘ওমিক্রন এবং ডেল্টায় আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। আমরা এখন কিছুটা হলেও চিন্তিত ও আতঙ্কিত। আমরা চাই না এভাবে বাড়ুক।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, গত ১৫ থেকে ২০ দিনে এটা ১৮ ভাগে উঠে গেছে। গতবার ডেল্টা ভেরিয়েন্ট ২৯-৩০ ভাগে উঠেছিল পুরো মাসব্যাপী। এখন যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে তা ৩০ ভাগে পৌঁছাতে সময় লাগবে না।
হাসপাতালগুলোতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় খুব শিগগিরই ধারণক্ষমতা অতিক্রম করতে পারে বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন ২০০ ওপরে যাচ্ছে। এভাবে যদি বাড়ে, তাহলে আমরা হিসাব করে দেখেছি এক দেড় মাসের মধ্যে হাসপাতালে কোনো জায়গা থাকবে না। তখন চিকিৎসা দেয়াও দুরহ হয়ে যাবে। কাজেই জনগণকে আহ্বান করছি তারা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মানে, মাস্কটা পরে।’
রাশিয়ার কাছে চুক্তির টিকা দাবি
গণমাধ্যমের সামনে আসার আগে নিজ কার্যালয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কী আলোচনা হয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত এসেছিলেন টিকার বিষয় নিয়ে। তাদের সঙ্গে আমরা টিকার চুক্তি করেছিলাম সেটা এখনও আছে, কিন্তু আমরা টিকা পাইনি।
‘আমি বলেছি, আমাদের সঙ্গে যে চুক্তি রয়েছে সে অনুযায়ী টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করেন। ওনাদের টিকার দুটি করে ডোজ লাগে, আমরা বলেছি দুটি ডোজ এক সঙ্গে দিতে হবে। এটি আমাদের কথা ছিল।’
তিনি বলেন, ‘ওনারা বলেছেন যে একটি নতুন ধরনের টিকা ওনাদের আছে স্পুৎনিক লাইট, সেটা নেয়ার কথা বলেছেন। আমরা বলেছি, আপনারা কাগজপত্র দেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এগুলো দেখবে, তারা অনুমোদন দিলে তখন সিদ্ধান্ত দিতে পারবে। কিন্তু এখন যে চুক্তি হয়ে আছে সে টিকাগুলো দিলে আমাদের জন্য ভালো হয়।’