ফরিদপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে আয়া ও নার্স দিয়ে সন্তান প্রসব করানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নবজাতকের কপাল কেটে যাওয়ায় ৯টি সেলাইও লেগেছে।
শনিবার সকালে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের আল-মদিনা প্রাইভেট হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে প্রসূতির স্বজনরা প্রশাসনে অভিযোগ জানালে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চায়না বেগম নামে এক নার্স, হাসপাতালের পরিচালক পলাশ ও এক দালালকে আটক করে পুলিশ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
স্বজনরা জানান, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার মইজুদ্দিন মাতব্বরপাড়ার শফিক খানের স্ত্রী প্রসূতি রুপা বেগমকে শনিবার ভোরে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সকালে হাসপাতালে কোনো লোক না পেয়ে চিকিৎসকের অপেক্ষায় ছিল পরিবারটি। কিন্তু দালালদের উসকানিতে পার্শ্ববর্তী আল-মদিনা প্রাইভেট হাসপাতালে প্রসূতিকে ভর্তি করা হয়।
সেখানে চিকিৎসক ছাড়াই প্রসূতি মায়ের পেট থেকে নবজাতক বের করার উদ্যোগ নেন আয়া ও নার্স। এ সময় অসাবধানতায় নবজাতকের কপালের একটি অংশ কেটে ফেলেন তারা।
বিষয়টি জানাজানি হলে প্রসূতির পরিবার থানায় ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করে। পরে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ও কোতোয়ালি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পায়। এ সময় হাসপাতালটির পরিচালক, আয়া ও দালালকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
আহত নবজাতকের ফুপু হোসনে আরা বলেন, ‘সকাল ৮টার দিকে ওই প্রাইভেট হাসপাতালের নার্স চায়না বেগম ও দুই আয়া ডাক্তার ছাড়াই বাচ্চা বের করতে গিয়ে শিশুটির কপালের একটি অংশ কেটে রক্তাক্ত করে ফেলে। পরে বিষয়টি দ্রুত ধামাচাপা দিতে গিয়ে ৯টি সেলাই দেয়া হয় নবজাতকের কপালে।’
এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন হোসনে আরা।
ফরিদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুল আলম বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে হাসপাতাল থেকে তিনজনকে আটক করেছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য বিভাগকে আমরা বলেছি।’
ফরিদপুর সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফাতেমা করিম বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এ ধরনের উদাসীনতা মেনে নেয়া হবে না। আমরা প্রসূতি মায়ের অপারেশন ও এ-জাতীয় কাজে নিয়োজিত কর্মীদের তালিকা তৈরি করছি। এ ব্যাপারে মনিটরিং জোরদার করা হবে। আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করব। যাদের গাফলতিতে এমন দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ফরিদপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন কর বলেন, ‘আমরা প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক, আয়া ও এক দালালকে আটক করেছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’