করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গণপরিবহনে আসনের অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশনা আসার পর বাসের ব্যাপারে সিদ্ধান্তের পরিবর্তন এসেছে। নতুন সিদ্ধান্তে বাসে শনিবার থেকে অর্ধেক নয়, আসনের সমানসংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে।
তবে আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসনসংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। আর লঞ্চের ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কোনো নির্দেশনাই দেয়নি। ফলে আগের মতো যাত্রী বহন করছে লঞ্চ।
শনিবার সকাল থেকে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ট্রেনগুলো ছেড়ে যাচ্ছে বলে জানান কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি ট্রেন আসনসংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। আমরা নতুন কোনো নির্দেশনা পাইনি।’
সরকারের জারি করা ১১ দফা বিধিনিষেধ কার্যকরে গত বুধবার পরিবহনসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা করে বিআরটিএ। সভায় পরিবহন নেতাদের দাবিতে সবাই একমত হন যে, সব সরকারি-বেসরকারি অফিস চালু রেখে গণপরিবহনের যাত্রী অর্ধেক করলে সংকট দেখা দেবে। পরিবহন নেতারা দাবি জানান, অর্ধেক নয়, আসনের সমানসংখ্যক যাত্রী পরিবহনের সুযোগ দেয়া হোক।
ফলে বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্তের পরিবর্তন আসে। বিআরটিএ থেকে পরিবহন নেতাদের জানানো হয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে একটি বাসে আসনের সমানসংখ্যক যাত্রী চলাচল করতে পারবে।
তবে শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। বেশির ভাগ বাসেই যাত্রী ছিল আসনের চেয়ে অনেক বেশি। গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা নিয়ে দেখা গেছে বাগবিতণ্ডাও।
তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নগরীর সড়কে বিআরটিএ নয়টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার শনিবার সকালে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসনের সমানসংখ্যক যাত্রী নিয়ে বাস চলাচল করছে। কেউ ব্যত্যয় ঘটালে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা কাজ করছেন।’
সকাল ৯টা থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের পাশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজা পারভীন। এই আদালতের মুখোমুখি না হতে মৎস্য ভবন মোড় থেকে শাহবাগগামী কিছু বাস কাকরাইল, ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে পাশে মোড় ঘুরে যেতে দেখা গেছে।
নির্দেশনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন সড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকায় একটি বা দুটি এড়াতে পারলেও অন্যায় করে ছাড় পাওয়া যাবে না বলে জানান ফিরোজা পারভীন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সড়কে আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা আছেন। এক রুট এড়িয়ে যেতে পারলেও অন্যগুলোয় ধরা পড়বে।’
ফিরোজা পারভীন বলেন, ‘প্রথম দিন হিসেবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কি না, তা আমরা দেখছি। আজ বাসে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে দেখা যাচ্ছে না। কয়েকটি পরিবহনে এক-দুজন যাত্রীকে মাস্ক না পরে চলতে দেখা গেছে। তাদের সতর্ক করা হচ্ছে। জরিমানাও করা হচ্ছে।’
এ ছাড়া সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী বাস ও চালকদের কাগজপত্রও চেক করা হচ্ছে। যাদের কাগজ সঠিক পাওয়া যাচ্ছে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান ফিরোজা পারভীন।
গত সোমবার করোনাভাইরাসের নতুন ঢেউ মোকাবিলায় ১১টি বিধিনিষেধ ঘোষণা করে সরকার, যা কার্যকর শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে। তবে বাস ও ট্রেনে বিধিনিষেধগুলো কার্যকর হয়েছে আজ থেকে।
সরকার ঘোষিত ১১ বিধিনিষেধের মধ্যে একটি ছিল- ‘ট্রেন, বাস এবং লঞ্চ সক্ষমতার অর্ধেকসংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। চালক ও সহকারীদের করোনা প্রতিরোধী টিকা নিতে হবে।’
বিআইডব্লিউটিএ কোনো নির্দেশনা না দেয়ায় সদরঘাট থেকে লঞ্চগুলো অর্ধেক বা আসনের সমানসংখ্যক নয়, আগের মতো ঠাসাঠাসি যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে।
বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অর্ধেক যাত্রী নেয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে এখনও আসেনি। বিআইডব্লিউটিএ থেকে আমরা একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তবে কোভিডের কারণে স্বাস্থ্যবিধির যে বিষয়গুলো রয়েছে, সেদিকে নজর দেয়া হচ্ছে। যাত্রী অর্ধেকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি।’
মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজের মালিক ও লঞ্চ মালিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি আলহাজ বদিউজ্জামান বাদল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিআইডব্লিউটিএ থেকে নির্দেশনা পেয়েছি। সেখানে বলা আছে, অর্ধেক যাত্রী নেবেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। তবে ভাড়ার ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। এখন যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, সেই ভাড়ায় অর্ধেক যাত্রী নিয়ে আমরা যাব না।’
প্রতিবাদ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লঞ্চের সার্ভে রেজিস্ট্রেশনের যে ক্যাপাসিটি রয়েছে, সেই ক্যাপাসিটি থেকেও আমরা অধিক যাত্রী নিতে সক্ষম। আমাদের বক্তব্য হলো, আমরা অধিক যাত্রী নেব না। আমরা ক্যাপাসিটির সমপরিমাণ যাত্রী নেব, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলব এবং প্রচলিত ভাড়াই নেব।’
লঞ্চে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল, তা পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। আসনের সমানসংখ্যক যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চলাচলের লিখিত নির্দেশনা আগামীকাল আসতে পারে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিট্রা বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরাও আসনের সমসংখ্যক যাত্রী নিয়ে চলব। এমনটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে লিখিত কোনো আদেশ আমরা এখনও পাইনি। আগের সিদ্ধান্ত রিভাইস করার জন্য সরকারের কাছে বলা হয়েছে। আশা করছি কালকের মধ্যে লিখিত আকারে আসবে।’