বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নারায়ণগঞ্জকে ঘিরে কাটছে ভোটবিমুখতা?

  •    
  • ১৪ জানুয়ারি, ২০২২ ২২:১০

শহরজুড়ে পোস্টার। সবার মাঝে নির্বাচনি আলাপ। চায়ের কাপের টুংটাং থেকে চটপটি-ফুচকার প্লেটেও ভোটের উত্তাপ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশে ‘ভোটবিমুখতা’র যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সেই স্রোত ঘুরিয়ে দিয়েছে বলে দৃশ্যত মনে হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পুরো নারায়ণগঞ্জ রূপ নিয়েছে উৎসবের নগরীতে। চাষাঢ়া মোড়ে নারায়ণগঞ্জের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভাস্কর্য ‘বিজয় স্তম্ভ’ থেকে যত দূর চোখ যায়, শুধু পোস্টার আর পোস্টার।

পোস্টারের নগরীতে রূপ নিয়েছে বন্দরনগর। পোস্টারের ক্ষেত্রেও রয়েছে প্রার্থীদের সহাবস্থান। আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থীর ‘হাতি’ কিংবা চরমোনাই পির অনুসারীদের ‘হাতপাখা’- ঝুলতে দেখা গেছে সব প্রার্থীর পোস্টার।

শহীদ মিনার প্রাঙ্গণটিও দুপুরের পর থেকে ছিল লোকারণ্য। সবার মাঝেই নির্বাচনি আলাপ। চায়ের কাপের টুংটাং থেকে চটপটি-ফুচকার প্লেটেও ভোটের উত্তাপ।

ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশে ‘ভোটবিমুখতা’র যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সেই স্রোত ঘুরিয়ে দিয়েছে বলে দৃশ্যত মনে হচ্ছে। অন্তত প্রার্থীদের জমাটি প্রচার আর ভোটারদের আগ্রহ একটি জমজমাট লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে ফেরার দৃশ্য নজর কাড়লেও দেশজুড়ে সহিংসতার কারণে ভোটের জৌলুসে ছায়া পড়ে। বিভিন্ন আসনে প্রার্থী শূন্য হওয়ায় অনুষ্ঠিত সংসদীয় উপনির্বাচনগুলো ছিল আরও নিরুত্তাপ। ছিল না ভোটের চিরায়ত আমেজ। যেন কোনো হাঁকডাক ছাড়াই হয়ে গেছে ভোট। উপস্থিতির হার ছিল ১৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে।

নারায়ণগঞ্জে এসে বদলে যেতে পারে সেই হিসাব-নিকাশ। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় নির্বাচনি প্রচার। তার পর থেকে জমাটি প্রচার দেখা গেছে সব প্রার্থীর। নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের শঙ্কার কথা শোনা গেলেও প্রকৃত অর্থে মাঠে তেমন কোনো প্রভাব ছিল না।

বিষয়টি নিয়ে নিউজবাংলার কথা হয় নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল করিম দীপুর সঙ্গে। তিনিও মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনের জন্য সুবাতাস আসছে।

তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনি পরিবেশটা ভিন্ন। সারা দেশের মানুষ যখন ভোটবিমুখ, তখন নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের ভোটার উপস্থিতির হার ৬০ শতাংশের মতো হয়। ফলে সার্বিকভাবে পরিস্থিতি ভালো থাকায় আশা করা যায় ভোটের দিন বিপুল মানুষের অংশগ্রহণ থাকবে কেন্দ্রে।’

এই নির্বাচনে মেয়র পদে আলোচনায় আছেন মূলত দুজন প্রার্থী। একদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার। তৈমূর ২০১১ সালের সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে লড়েছিলেন। কিন্তু এবার বিএনপি নির্বাচনের অংশ না নেয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তিনি। যদিও এরপর তাকে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।

ধারণা করা হচ্ছে, রোববার এই দুইয়ে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। তবে ভোটের প্রচারে এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর প্রচারে দেখা যায়নি কোনো কাদা ছোড়াছুড়ি কিংবা কটু আক্রমণ।

ভোটের মাঠে দেখা গেছে, নৌকার প্রার্থী আইভী বরাবরই তৈমূরকে ‘কাকা’ বলে সম্বোধন করেছেন। বিপরীতে আইভীকে ‘ভাতিজি’ বলেই ডেকেছেন তৈমূর।

মৌখিক কিছু অভিযোগ একে অন্যের বিরুদ্ধে এনেছেন, কিন্তু সেটা নির্বাচনি পরিবেশকে কোনোভাবে কলুষিত করেনি।

তবে এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনি সুবাতাস বয়ে যাওয়ার কোনো ইঙ্গিত দেখছেন না নারায়গঞ্জে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল। তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের বাস্তবতার সঙ্গে সারা দেশের মিল খুঁজলে চলবে না। কারণ এখানকার প্রেক্ষাপট ভিন্ন।’

শামীম ওসমান-সেলিনা হায়াৎ আইভীর চিরায়ত দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘শামীম ওসমানকে ঠেকাতে চায় নারায়ণগঞ্জবাসী। আর সেখানেই আইভীর সাফল্য। ফলে আওয়ামী লীগ জানে এই নির্বাচনে জয় পেতে তাদের খুব একটা সমস্যা হবে না। তাই প্রশাসনিকভাবে তারা খুব একটা এখানে প্রভাব খাটায় না। ফলে নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।’

গত ১৭ দিনের ভোটের প্রচারে আইভী-তৈমূর সমর্থকদের মধ্যে গণ্ডগোল তো দূরে থাক, হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেনি। এমন বাস্তবতায় এই নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী সাধারণ মানুষ। যদিও শেষ দিনের প্রচারে নির্বাচনি পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা বলেছেন সবাই, নিজেদের জয়ের ব্যাপারে তারা দারুণ প্রত্যয়ী।

প্রচারের শেষ দিনে সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, তিনি নারায়ণগঞ্জবাসীর ‘দুয়ারে শান্তির বার্তা’ নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে, অবিচারের বিরুদ্ধে নিশ্চয় এই নৌকা আইভীর নৌকা। এই নৌকা বিজয়ের নৌকা, এই নৌকা বঙ্গবন্ধুর নৌকা। নৌকাকে রুখে দেয়ার ক্ষমতা কারও নেই, কারও নেই, কারও নেই।’

আর তৈমূর আলম খন্দকারের বিশ্বাস, এবার জয় পেতে যাচ্ছেন তিনি। বলেন, ‘একটা জনজোয়ার সৃষ্টি হইছে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ করের বোঝা বহন করতে চায় না। মানুষ সিটি করপোরেশন থেকে যে সেবা চায়, তা পায়নি। এ কারণে মানুষ পরিবর্তন চায়।’

আবার নিজের জীবন বাজি রেখে হলেও নারায়ণগঞ্জবাসীর উন্নয়ন করতে চান আইভী। তিনি বলেন, ‘পুনরায় নারায়ণগঞ্জবাসীকে আমি বলব, আমাকে আপনারা পাঁচ বছরের জন্য খেদমত করার সুযোগ দিন। আমি আমার বাবার মতো আপনাদের খেদমত করতে জীবনকে বাজি রেখেছি। যেকোনো সময় আমার জীবনে অনেক কিছু ঘটতে পারে। আমি আপনাদের জন্য মৃত্যুকেও বরণ করে নিতে রাজি আছি।’

বিপরীতে তৈমূর বলেন, ‘আমি রক্ত দিয়ে হলেও নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকব। কারণ আমি কোনো দলের প্রার্থী নই।’

এদিকে নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে স্বস্তিতে আছেন এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার।

তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যথাযথ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর