পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারের আকাশে সারা দিন ছিলে বাহারি সব ঘুড়ি। সন্ধ্যা নামতেই সে আকাশ ঢেকে গেছে নানা রঙের চাদরে। বাড়ির ছাদ থেকে উড়ছে ফানুস। নানা রঙের আতশবাজির সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে লেজার রশ্মি।
বাড়ির ছাদ থেকে মিউজিক বক্সে ভেসে আসছে নানা গান। এ যেন এক উৎসবের নগরী। নাচে-গানে সাকরাইনের রাতে মেতে উঠেছে শাঁখারীবাজারবাসী।
তবে শুধু শাঁখারীবাজার নয়, পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, তাঁতীবাজার, ধুপখোলা মাঠ, ওয়ারীর মানুষও শামিল হয়েছেন এ উৎসবে।
সাকরাইন উৎসবটি পৌষসংক্রান্তি বা ঘুড়ি উৎসব নামেও পরিচিত। মহাভারতে যেটাকে মকরক্রান্তি বলা হয়। পৌষ ও মাঘ মাসের সন্ধিক্ষণে, পৌষ মাসের শেষ দিন সংক্রান্তি হিসেবে উদযাপিত হয়। পুরান ঢাকায় পৌষসংক্রান্তি বা সাকরাইন সর্বজনীন ঢাকাইয়া উৎসবে রূপ নিয়েছে। এই দিনে দিনভর ঘুড়ি ওড়ানোর পাশাপাশি সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি ও রংবেরং ফানুসে ছেয়ে যায় বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী এলাকা।
আগে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সাকরাইন উদযাপন করলেও এখন বাঙালি সংস্কৃতি হিসেবে সব ধর্মের মানুষের উৎসব এটি।
জানা যায়, পুরান ঢাকায় পুরোনো যেসব উৎসব যুগের পর যুগ উদযাপিত হয়ে আসছে, তার মধ্যে সাকরাইন অন্যতম।
প্রাচীন ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ১৭৪০ সালের পৌষ মাসের শেষ এবং মাঘ মাস শুরুর সন্ধিক্ষণে মোগল আমলে নায়েব-ই-নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঘুড়ি উৎসবের প্রচলন চালু হয়। কালের পরিক্রমায় দিনটি পুরান ঢাকাইয়াদের একটি অন্যতম উৎসব এবং আমেজে পরিণত হয়েছে।
সাকরাইন উৎসব উদযাপনে বাড়ির ছাদে ছাদে নানা আয়োজন। ছবি: সাইফুল ইসলামসাকরাইনের সন্ধ্যায় শাঁখারীবাজারে ছিল নিউজবাংলার টিম। সেখানকার একটি বাড়ির ছাদে উঠতেই দেখা গেল সাকরাইনের আয়োজনের নানা ঢং। আতশবাজি ছাড়াও ডিজে পার্টির আয়োজন বিভিন্ন বাসার ছাদে। ডিজের সঙ্গে নাচে-গানে মেতে উঠেছেন সেখানে উপস্থিত নানা বয়সীরা। ছাদ থেকে উড়ছে ফানুস।
পুরান ঢাকার এক তরুণী তার বন্ধুদের নিয়ে এসেছিলেন আয়োজন দেখাতে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাকরাইন উদযাপনের প্রস্তুতি আমাদের এখানে শুরু হয় সপ্তাহখানেক আগে থেকেই। সাকরাইনের আগের রাতেও এখানে থাকে উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রতি বছরই আমরা আনন্দ করি। ঢাকার নানা প্রান্ত থেকে উৎসবে যোগ দিতে প্রতিবারই অনেক মানুষ আসে এখানে।’
পুরান ঢাকায় বাড়ির ছাদে ছাদে আতশবাজি ফাটিয়ে চলছে সাকরাইন উদযাপন। ছবি: সাইফুল ইসলামআয়োজকদের একজন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় এবারের আয়োজন সীমিত পরিসরে করার কথা বলেছিল স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু আমরা আবার তাদের সঙ্গে কথা বলে পূর্ণাঙ্গভাবে আয়োজন করার অনুমতি নিয়েছি।'
তিনি আরও জানান, সকাল থেকে ছিল ঘুড়ি উৎসব। সবাই মিলে ঘুড়ি উড়িয়েছেন। ঘুড়ির খেলায় তিনি পাঁচটি ঘুড়ি কেটেছেন।
জানালেন, রাত গভীর হলেও ছাদে ছাদে চলবে সাকরাইনের শেষ ভাগের আয়োজন।