বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিধিনিষেধে একদমই পাল্টায়নি জীবনযাত্রা

  •    
  • ১৩ জানুয়ারি, ২০২২ ২১:২৯

বাড়ির বাইরে মাস্ক ছাড়া আসা নিষেধ, তবে লাখ লাখ মানুষের মুখে নেই তা। রেস্তোরাঁয় খেতে আসা মানুষের কাছে টিকার সনদ চাওয়া হচ্ছে না। স্কুল চলছে স্বাভাবিকভাবে। মানুষের জটলা ও জমায়েত রয়ে গেছে। গণপরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশনা পাল্টে প্রতি আসনে যাত্রী তোলার সুযোগ দেয়া হচ্ছে।

করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় চতুর্থবারের মতো জারি করা বিধিনিষেধে জীবনাচরণে দৃশ্যত কোনো পার্থক্যই দেখা যায়নি।

বৃহস্পতিবার বিধিনিষেধের প্রথম দিন রাজধানী ও দেশের নানা প্রান্তের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে আসা যাচ্ছে।

আগের দিনের মতোই যার খুশি মাস্ক পরেছে, যার খুশি পরেনি। কারও মাস্ক আবার ছিল থুতনিতে, কারও গলায়।

বিধিনিষেধ বলতে যা যা বলা হয়েছিল, তার মধ্যে গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের আদেশটি দুই দিন পিছিয়ে দেয়া হয় প্রথমে। পরে জানানো হয়, অর্ধেক নয়, প্রতি আসনেই যাত্রী বসবে।

টিকা ছাড়া স্কুলে যেতে না দেয়ার বিষয়টিও এখনই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কারণ, সবার টিকা দেয়া এখনও সম্ভব হয়নি। ফলে টিকা দেয়া থাক বা না থাক, প্রাক প্রাথমিক ছাড়া সব শিক্ষার্থীই স্কুলে গেছে।

ফলে মাস্ক ছাড়া দৃশ্যমান আর যে দুটি বিষয় ছিল, তার মধ্যে টিকার সনদ ছাড়া রেস্তোরাঁয় ঢুকতে না দেয়ার কোনো ঘটনাই চোখে পড়েনি।

ফলে এটা বলাই চলে বিধিনিষেধ আসলে মানুষের জীবনাচরণে দৃশ্যত কোনো প্রভাবই ফেলেনি। আর এখন গণপরিবহনেও যদি প্রতি আসনে যাত্রী বহন করা হলে এই বিধিনিষেধও কার্যত গুরুত্ব হারিয়েছে।

রাজনৈতিক সমাবেশ ছিল না, তবে ভোটে, গানের আসরে জমায়েত

বিধিনিষেধে যেকোনো সামাজিক-রাজনৈতিত সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া আছে। তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারে সমাবেশ, জমায়েত চলেছে, বাণিজ্য মেলাতেও ভিড় রয়েছে আগের মতোই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের রাতে একটি কাওয়ালি গানের আয়োজন হামলায় পণ্ড হলেও পরদিন সন্ধ্যায় সেখানে আরেকটি আসর বসেছে। যদিও আগের দিন হামলার প্রতিবাদে সমাবেশের জন্য জড়ো হওয়া নেতা-কর্মীদের মিছিল করতে দেয়নি পুলিশ।

রেস্তোরাঁয় সনদ চাওয়া হচ্ছে না, বাজারেও ভিড়

রেস্তোরাঁয় টিকা সনদ ছাড়া ঢুকতে পারার কথা নয়, কিন্তু এ বিষয়ে ঢাকায় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

রাজধানীর বাটা সিগন্যাল স্টার কাবাব ও রেস্টুরেন্টে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, খাবার খেতে আসা অধিকাংশ ভোক্তার টিকা সনদ নেই। রেস্টুরেন্ট থেকেও জানতে চাওয়া হচ্ছে না সনদের বিষয়টি।

রাজধানীর তোপখানা রোডে এক রেস্তোরাঁয় বৃহস্পতিবার দুপুরের খাবার খেতে আসা এসব ভোক্তার কেউই করোনা টিকার সনদ বহন করেননি। ছবি: সাইফুল ইসলাম

স্টার কাবাব ও রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বললেন, ‘করোনার মধ্যে দীর্ঘদিন আমাদের ব্যবসা বন্ধ ছিল। কিছুদিন হলো রেস্তোরাঁয় ক্রেতা আসা শুরু হয়েছে। এখন নতুন করে সরকার যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে সেটা আমাদের ব্যবসায় ধস নামাবে। সরকারের উচিত আগে সবার টিকা নিশ্চিত করা। তারপর এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা। তা না হলে শুধু শুধুই ভোগান্তি বাড়বে।’

দুপুর সাড়ে ১২টায় কাঁটাবন গ্লোরিয়াস রেস্টুরেন্টে গিয়েও অভিন্ন চিত্র দেখা যায়। এই রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে আসা এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। টিকা নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টিকার জন্য নিবন্ধন করেছি কিন্তু এখনও টিকা পাইনি। তাই বলে কি আমি হোটেলে খাওয়া বন্ধ করে দেব?’

ভোর থেকে আবাসিক হোটেলগুলোতে অবস্থান করতে হলে করোনার টিকার সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়। তবে কক্সবাজারের একাধিক হোটেল মালিক বলেছেন, তারা রাত ১২টা থেকে এটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন।

বাজারগুলোতেও মানুষের স্বাভাবিক জটলা দেখা গেছে। সেখানেও মাস্কহীন হাজারো মানুষ দেখা গেছে। আগের তিনবার বিধিনিষেধ দেয়ার পর বাজারগুলোতে যে চাপ দেখা গেছে, তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি বৃহস্পতিবার।

কাঁচাবাজারের নেই স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই । ছবিটি কারওয়ান বাজার থেকে তোলা। ছবি:সাইফুল ইসলাম/নিউজবাংলা

অবশ্য স্থলবন্দরে ভারত থেকে আসা ট্রাকচালকের সঙ্গে সহকারী প্রবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে নির্দেশনা অনুযায়ীই।

মাস্কহীন চলাচল, প্রশাসন নমনীয়

বলা হয়েছিল, বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে পুলিশ কঠোর থাকবে। তবে প্রথম দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান দেখা গেছে নমনীয়। আইন প্রয়োগের বদলে সচেতনতা বৃদ্ধি ও মুচলেখায় সীমাবদ্ধ ছিল কার্যক্রম।

সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে সিটি করপোরেশন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। পাশাপাশি থানা এলাকায় জনসচেতনতায় মাইকিং করেছে পুলিশ।

বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে শাহবাগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায়। ছবি: সাইফুল ইসলাম/নিউজবাংলা

পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিটি থানায় নিয়মিত ডিউটির পাশাপাশি একটি করে টিম স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কাজ করছে। তাদের সঙ্গে দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও মাঠে থাকবেন।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সেগুনবাগিচা এলাকায় হ্যান্ড মাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পুলিশের পক্ষ থেকে আহ্বান জানাতে দেখা যায়। যারা মাস্ক ছাড়া চলাচল করছেন, তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করেন পুলিশ সদস্যরা।

শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাপ উদ্দিন মাহমুদ আরেক পুলিশ সদস্যকে নিয়ে হেঁটে হেঁটে মাইকিং করছিলেন।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সবাই যাতে মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন তা বাস্তবায়নে আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা আজকে সাধারণ জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে মাইকিং করছি।’

দুপুর সোয়া ১২টা থেকে রাজধানীর শাহবাগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জীব দাস। মাস্ক ছাড়া যাত্রী ও পথচারীদের সতর্ক করার পাশাপাশি মুচলেকা দিয়ে ছাড়ের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা অভিযানে মাস্ক না পরার দায়ে ১১ জনকে দুই হাজার ৫৫০ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। ভবিষ্যতে মাস্ক ছাড়া বের হবেন না- এমন অঙ্গীকার রেখে ২০ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়।

এই ২০ জনের প্রায় সবাই মাস্ক পরতে ভুলে গিয়েছিলেন বলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে জানান। ভ্রাম্যমাণ আদালতে ধরা পড়ার পর তারা পকেট থেকে মাস্ক বের করেন। তবে কারও কারও কাছে মাস্কই ছিল না।

ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জীব দাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখনও অনেকে মাস্ক ছাড়া বের হচ্ছেন, কেউ মাস্ক পকেটে রাখছেন। মৌখিকভাবে সতর্ক করা, মুচলেকা নেয়া ও অপরাধ বিবেচনায় অর্থদণ্ড দেয়া হচ্ছে।’

স্কুলে ক্লাস চলবে, টিকার কী হবে

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি ও প্রশাসন) মনীষ চাকমা নিউজবাংলাকে জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সীমিত পরিসরে ক্লাস চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তবে প্রাক-প্রাথমিকে সশরীরে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। অনলাইনে তাদের ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

প্রাথমিকে তৃতীয় শ্রেণির ক্লাস রোববার ও বৃহস্পতিবার এবং চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস শনিবার ও বুধবার নেয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার প্রথম শ্রেণি ও সোমবার দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস প্রতিদিনই চলছে।

স্কুলে সব শিশুর টিকা দেয়া যায়নি। কোথাও স্কুলে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে, এমন খবর পাওয়া যায়নি।

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে আইয়ানা হাসান। তার জন্মনিবন্ধন করা হয়েছে মুন্সিগঞ্জে। কিন্তু ঢাকায় নিবন্ধন নম্বর দিলে ইংরেজিতে নাম আসে না বলে স্কুলে টিকা দেয়া যাচ্ছে না।

পাঠদান কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দেয়া হচ্ছে। ছবিটি মালিবাগ সাউথ পয়েন্ট স্কুল থেকে তোলা। ছবি: সাইফুল ইসলাম/নিউজবাংলা

যাদের জন্মনিবন্ধন সংক্রান্ত জটিলতা আছে, তাদের স্কুলের পরিচয়পত্র দেখিয়ে নিবন্ধন করতে পারার কথা। বিষয়টি স্কুলে জানান আইয়ানার মা। স্কুল থেকে তাকে জানানো হয়েছে, তারা পরে বিষয়টি জানাবেন।

সচেতন করতে প্রচার নিয়ে পুলিশ যা বলছে

বিধিনিষেধ জারির প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রশাসন নানা উদ্যোগ নেবে।

এ ক্ষেত্রে কী করা হয়েছে- জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার শাহ ইফতেখার আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজার বা শপিং মলে সবাই যাতে মাস্ক পরে, তা নিশ্চিতে প্রতিটি থানাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগত ক্রেতাদের সচেতন করার পাশাপাশি মার্কেট কমিটি যাতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে কাজ করে, সে বিষয়েও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা থানায় আগত সকলকে মাস্ক পরা, স্যানিটাইজ করা এবং সোশ্যাল ডিসট্যান্স (শারীরিক দূরত্ব) মেনে চলার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। সচেতনতা বৃদ্ধিতে মাইকিং করা হচ্ছে।

‘মার্কেট, বাজার কমিটির সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। তারাও যেন ভেতরে স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা রাখে এবং নিজেরাও যাতে তদারকি করে, সে ব্যাপারে বলা হয়েছে।’

ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি থানাই সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। নিয়মিত ডিউটির পাশাপাশি একটি টিম থানা এরিয়ায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে টহল দিচ্ছে।’

ঢাকার জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পাশাপাশি জনসচেতনতায় কাজ করেছি। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা জনগণকে জানানো হচ্ছে, সবাইকে মাস্ক পরে বাইরে বের হতে বলা হচ্ছে। তবে এভাবেই জনগণ মাস্ক ছাড়া বের হলে প্রশাসন আরো কঠোর হবে।

এ বিভাগের আরো খবর