মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কুমার নদের ভাঙনে চার মাসের বেশি সময় ধরে বিচ্ছিন্ন একটি সড়ক। সংস্কার না করায় বর্তমানে হরিদাসদী-মহেন্দ্রদী ইউনিয়নের সঙ্গে উপজেলা ও জেলা সদরের সড়কপথে যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ। বিপাকে পড়েছেন এই পথে নিয়মিত চলাচলকারী কয়েক হাজার মানুষ।
মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ২০০৮ সালে নদীর ভাঙন থেকে ফসলি জমিকে রক্ষায় গোয়ালবাথান থেকে কালীবাড়ি বাজার পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ কিলোমিটারের বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে প্রথমে ৯ ও পরে ১৪ ফুট প্রশস্ত একটি পাকা রাস্তা নির্মাণ করে এলজিইডি।
গত বছরের অক্টোবরে কুমার নদের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় গোয়ালবাথান এলাকায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়। এতে সড়কসংলগ্ন দুটি অংশের প্রায় ২০০ মিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়।
ভাঙন ও সড়কটি রক্ষায় গত সেপ্টম্বরে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৮৫ মিটার অংশে ৮ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়। তার পরও সড়কটির বড় একটি অংশ ধীরে ধীরে কুমার নদে ধসে পড়ে।
বর্তমানে নদীর পানি কমে যাওয়ায় সড়কের ওই অংশে নতুন করে ভাঙন দেখা না দিলেও সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
সরেজমিন দেখা যায়, রাজৈর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে গোয়ালবাথান-কালীবাড়ি সড়ক। এ সড়কটি মূলত টেকেরহাট-কালীবাড়ি ফিডার সড়ক নামে পরিচিত।
সড়কটির কার্পেটিং, বিটুমিন, ইট, বালুসহ জমির মাটি খসে নদীতে গিয়ে পড়ছে। পাকা এই সড়ক দিয়ে ৩০০ মিটার পথ সামনে এগোলেই পরপর দুটি স্থানে ভাঙন দেখা যায়। এই দুটি স্থানের ১৫-২০ ফুট এলাকাজুড়ে ১৪ ফুট সড়কের ১৩ ফুটই ধসে গেছে।
এতে সড়কটি দিয়ে দুই বা তিন চাকার কোনো যান চলতে পারছে না। উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য স্থানীয়দের তিন-চার কিলোমিটার পথ হেঁটে যানবাহনে উঠতে হয়। নয়তো উল্টোপথে যানবাহনে চড়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়।
সড়কটির এক পাশে কুমার নদ হলেও অন্য পাশে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, আছে বসতঘরও।
সড়কসংলগ্ন দুটি অংশের প্রায় ২০০ মিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে
গোয়ালবাথান-কালীবাড়ি সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী ব্যবসায়ী আল-আমীন বলেন, ‘এই রাস্তা দিয়ে আগে ভ্যানে মালামাল নিতাম। এখন মাথায় করে মালামাল টানতে হয়। কয়েক মাস ধরে খুব কষ্টে আছি।’
গোয়ালবাথান এলাকার ষাটোর্ধ্ব কৃষক ভীম মণ্ডল বলেন, ‘সড়কটির এপারে আমার চার বিঘা ধানি জমি। এই শীতে রাস্তা ঠিক না হলে জমিটি আর টিকবে না। সামনের বর্ষায় আবার নদীভাঙনে রাস্তাটা পুরোপুরি ধসে আমাদের ধানি জমি সব মরুভূমি হয়ে যাবে।’
হরিদাসদী এলাকার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘শনি-বুধবার হাটবার হওয়ায় এই দুদিন এলাকার বহু মানুষ কলই-মসুরের ডালসহ অনেক কৃষিপণ্য হাটে নিয়ে যান। রাস্তাটি সংস্কার না হওয়ায় এসব পণ্য হাটে নিতে কৃষকদের খুব কষ্ট হচ্ছে। সড়কটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানাই।’
সড়কটির সংস্কার বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী কাজী মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘সড়কটি মূলত পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ। আমরা বেড়িবাঁধের ওপর রাস্তা করেছি। এখন ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কার করে দিলে আমরা সড়কটি আবার আগের মতো সংস্কার করে দেব। বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলাও হয়েছে।’
এ সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ড মাদারীপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বেড়িবাঁধ নির্মাণে আমরা নকশার কাজ শেষ করে আবেদন পাঠিয়েছি। এখন বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করব। আশা করছি, আগামী বর্ষার আগেই কুমার নদের ভাঙনকবলিত ওই অংশে টেকসই বেড়িবাঁধটি নির্মাণ করা হবে।’