ঘড়িতে তখন রাত প্রায় ৩টা ৪৩। সেতুর একপাশের সড়কে একটা ছায়া দেখা যায়। ধীরে ধীরে বড় হয় সেই ছায়া।
টোল বক্সের সামনেই আসতেই স্পষ্ট হয় এটি কোনো মানুষ বা গাড়ি নয়, বড়-সড় এক হাতি। হাতি দেখেই ভয়ে দৌড় দেন সড়কের মাঝে চেয়ারে বসে থাকা টোল বক্সের কর্মী। মিনিট কয়েক এদিক ওদিক ঘুরে নিজের মতো ফিরে যায় হাতিটি।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা-বাঁশখালী সংযোগস্থল তৈলারদ্বীপ সেতুতে সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। টোল বক্সের ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরায় পুরো বিষয়টি ধরা পড়ে।
শাহরিয়ার আমিন সাইমুন নামের একজন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই ফুটেজ ফেসবুকে আপলোড করেন। রাতেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়।
চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নুরুল আজম রনি তার ফেসবুক পেজে ভিডিওটি শেয়ার করে লেখেন, ‘মধ্যরাতে হাতি মামা পরিদর্শনে এলেন বাঁশখালী তৈলারদ্বীপ সেতুর টোল বক্স।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসহাব আরমান তার ফেসবুক আইডি থেকে এই ভিডিও শেয়ার করেন। তিনি ক্যাপশনে লেখেন, ‘বাঁশখালীর রাস্তায় শুধু মানুষ না হাতিও চলাচল করে।’
নিউজবাংলা কথা বলে আব্বাস উদ্দিন নামের টোল বক্সের ওই লাইনম্যানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘আমি এর আগে হাতি দেখেছি। তবে এত কাছ থেকে হাতি এর আগে কখনও দেখিনি। হাতি যখন আসে তখন আমি উল্টোদিক হয়ে বসে মোবাইলে ব্যস্ত ছিলাম। হাতি দেখা মাত্রই দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে পাশের ছড়ায় কাদার মধ্যে লুকিয়ে যাই। হাতি যাওয়ার পর আবার আমার টোল বক্সে ফিরে আসি।’
সেতুতে হাতি আসার ঘটনা এই প্রথম নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রায় প্রতি বছরই শীতের সময় পাশের পাহাড় থেকে হাতি নেমে আসে। শঙ্খ নদী পেরিয়ে তারা আনোয়ারার দিকে চলে যায়। তবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির কথা কখনও শোনা যায়নি।’
সেতুতে হাতি আসার বিষয়ে কথা হয় বাঁশখালী সাধনপুর বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে।
দেলোয়ার বলেন, ‘টোল বক্সের কর্মীরা জানিয়েছেন সড়কের পশ্চিম দিক থেকে হাতিটি আসে। এটি কাউকে উত্যক্ত করেনি। কারো ক্ষতিও করেনি।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রমেন্টাল সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক ও হাতি বিশেষজ্ঞ ড. এ এইচ এম রায়হান সরকার নিউজবাংলাকে জানান, হাতি একবার হাঁটা শুরু করলে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত হাঁটে। বনভূমি ধ্বংসের কারণে এদের আবাসস্থল ও চলাচলের পথ সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
কিছু হাতি চলাচলের জন্য আনোয়ারা-বাঁশখালীকে নতুন করিডোর হিসেবে ব্যবহার করছে। হাতিটি খাবারের সন্ধানেই হাঁটতে হাঁটতে সেতুতে চলে আসে।