ঘণ্টায় ৩০০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে ট্রেন। মাত্র ৫৫ মিনিটে ঢাকা থেকে যাওয়া যাবে চট্টগ্রাম। দেশের মানুষ গতিময় এ বুলেট ট্রেনের স্বপ্ন দেখা শুরু করতে না করতেই হোঁচট খেয়েছে এ প্রকল্প।
১১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা প্রণয়নের কাজ শেষে এ থেকে সরে এসেছে রেল মন্ত্রণালয়।
এর আগে ১০০ কোটি টাকা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর গত অক্টোবরে বাদ দেয়া হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা। তখন বলা হয়েছিল, এই পথে দ্রুতগতির বুলেট ট্রেন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে এক্সপ্রেসওয়ের প্রয়োজন নেই।
তবে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলছেন, বুলেট ট্রেন প্রকল্পটি বাদ দেয়া হয়নি। এটি সরকারের পরিকল্পনার অংশ। প্রকল্পটি কবে বাস্তবায়ন করব সেটা ‘সিকুয়েন্স’ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন মূলত অর্থায়ন জটিলতা ও যথাসময়ে বিনিয়োগ তুলতে না পারার শঙ্কা থেকে ব্যয়বহুল এ প্রকল্প থেকে সরে এসেছে সরকার।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘২০১৬ সালে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ৩০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনায় এ প্রকল্প ছিল না। হঠাৎ করে ২০১৮ সালে এ প্রকল্পের জন্য চীনা একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা হয়, যা পরে বাতিলও হয়।’
তবে চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা বাতিল হলেও সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা প্রণয়নের কাজ করা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘এতে খরচ হয় প্রায় ১১৩ কোটি টাকা। তখন এ প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৫০ হাজার কোটি টাক।‘
ব্যয়বহুল এই প্রকল্পের অর্থায়নে জটিলতা ও বিনিয়োগ ফেরত আসা নিয়ে সংশয় থেকে এ প্রকল্প আপাতত স্থগিত করা হয়েছে বলেও জানালেন ওই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘বিপুল অর্থের সংস্থান না হওয়া ও বিনিয়োগ যথাসময়ে ফেরত আসা নিয়ে সংশয় থেকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রকল্পের কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে। এর চেয়ে একই রুটে ডাবল লাইনের প্রকল্পের কাজ শেষ করা লাভজনক। কারণ এতে খরচ অনেক কম হবে এবং বাণিজ্যিকভাবেও লাভজনক।’
এ প্রসঙ্গে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এ প্রকল্প থেকে সরেও আসিনি বা স্থগিতও করিনি। আমরা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী রেলকে এগিয়ে নিতে কাজ করছি।
‘এখানে কোনটা আগে করব বা কোনটা পরে করব, সেটা সিকুয়েন্স অনুযায়ী নির্ধারণ হবে। প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে গেছে এ তথ্য সঠিক নয়। সিকুয়েন্স অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।’
বিদ্যমান কাঠামো উন্নত করার দিকে সরকার জোর দিচ্ছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
কী ছিল পরিকল্পনায়?
প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মোট ৩৫০ কিলোমিটার উড়ালপথে পাথর বিহীন ট্র্যাক দিয়ে চলার কথা দ্রুতগতির বুলেট ট্রেন।
বলা হয়েছিল, এতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা পনের মিনিট সময়। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্পা, ফেনী ও চট্টগ্রামের পাহাড়তলিতে মোট পাঁচটি স্টেশন হওয়ার কথা এ ট্রেনের জন্য, যা মাল্টি মোডেল ট্রানজিট হাব হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার কথা।
এখন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের রেলপথে দূরত্ব ৩২৫ কিলোমিটার। রেল এখন ঢাকা থেকে গাজীপুর হয়ে ঘুরে ভৈরব, লাকসাম হয়ে চট্টগ্রাম থেকে ৭-৮ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। নতুন এ রুটে অন্তত একশ কিলোমিটার পথ কমে আসতো।