বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নারায়ণগঞ্জে নৌকাবিরোধী অবস্থানে জাপা, ভোটের মাঠে নতুন বার্তা

  •    
  • ৯ জানুয়ারি, ২০২২ ১৯:৫৪

বন্দরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে শুক্রবার তৈমূর আলমের নির্বাচনি প্রচার ও গণসংযোগে অংশ নেন জাতীয় পার্টির নেতা ও কলাগাছিয়া ইউপির চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, বন্দর ইউপির চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদ ও মুছাপুর ইউপির চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন। এ সময় তারা তৈমূরের সঙ্গে থেকে তার পক্ষে ভোট চান।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন হয় ২০১১ সালে। সেই থেকে সর্বশেষ ২০১৬ সালের ভোটেও আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি হাত ধরাধরি করে হেঁটেছে। স্বাভাবিকভাবেই এবারও রাজনৈতিক মহল ও জনমনে ধারণা ছিল, লাঙ্গলের সমর্থনটা নৌকা প্রতীকের দিকেই থাকবে। বাস্তবে মাঠের চিত্র ভিন্ন।

নারায়ণগঞ্জ সিটির এবারের নির্বাচনে লাঙ্গলের কোনো মেয়র প্রার্থী নেই। আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে সমর্থনের কথাও জানায়নি দলটি। তবে ইতিমধ্যে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ভোটে জয়ী তিন চেয়ারম্যান প্রকাশ্যেই স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের পক্ষে প্রচারে নেমেছেন। তাছাড়া জাতীয় পার্টির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে কয়েক দিন আগে নিজ বাসভবনে বৈঠক করেছেন তৈমূর।

প্রশ্ন উঠেছে- কার স্বার্থে, কার বিরোধিতায় আর কার ইন্ধনে জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলটির নেতাদের এমন অবস্থান? এটা ভোটের মাঠে কী নতুন বার্তার ইঙ্গিত দিচ্ছে? রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মী-সমর্থক আর সাধারণ ভোটাররাইবা বিষয়টিকে কোন দৃষ্টিতে দেখছেন!

বন্দরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে শুক্রবার সকালে তৈমূর আলমের নির্বাচনি প্রচার ও গণসংযোগে এই উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা অংশ নেন। তারা হলেন জাতীয় পার্টির নেতা ও কলাগাছিয়া ইউপির চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, বন্দর ইউপির চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদ ও মুছাপুর ইউপির চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন। এ সময় তারা তৈমূরের সঙ্গে থেকে তার পক্ষে ভোট চান।

নির্বাচনি প্রচার শুরুর দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে থাকার আভাস দিয়েছিলেন তাদের নেতা। কিন্তু হঠাৎ করেই বিএনপি থেকে সদ্য ‘ছুটি পাওয়া’ নেতার পক্ষে জাপা নেতাদের প্রচারে নামার ঘটনায় চমকেছে নগরবাসী। যদিও জাপার এই নেতারা বলছেন যে তারা দলীয়ভাবে নয়, ব্যক্তিগতভাবে তৈমূরের পক্ষে প্রচারে নেমেছেন।

মুছাপুর ইউপির চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন বলেন, ‘আমি তৈমূর খন্দকারকে ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করছি। এখানে আমার দল জাতীয় পার্টির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এবারের নির্বাচনে আমাদের কোনো প্রার্থী নেই। তৈমূর আলম খন্দকার স্বতন্ত্র প্রার্থী। তিনি একজন ভালো মানুষ এবং বর্ষীয়ান নেতা। মানুষ পরিবর্তন চায়। সেই পরিবর্তনের লক্ষ্যেই তৈমূরকে সমর্থন করছি।’

কলাগাছিয়া ইউপির চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মায়ের মতো দেখি। ২০১১ সালে আমার নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু আমি সে নির্বাচনে শামীম ওসমানের পরিবর্তে আইভীর পক্ষে কাজ করেছিলাম।

‘বন্দর উপজলোর কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এমপি সেলিম ওসমানের সমর্থনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ভোট করেছি। সাধারণ মানুষের ভালোবাসা ও তাদের ভোটে আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। অথচ আইভী আমার সেই জয় নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন।’

তৈমূর আলম খন্দকার একজন বর্ষীয়ান নেতা। তাকে সমর্থনের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সংশ্লিষ্টতা নেই। আমার সমর্থনের বিষয়ে এমপি সেলিম ওসমানও কিছু জানেন না।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে একই উপজেলার বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহমেদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

ইউপি নির্বাচনে এই তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থনে ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান। তার সমর্থন দেয়া চেয়ারম্যানরা এবার সিটি নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতা করছেন।

নিউজবাংলার পক্ষ থেকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে সেলিম ওসমান বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কোনো প্রার্থী দেয়নি। কাউকে সমর্থনও দেয়নি। তৈমূর আলম খন্দকারকে যারা সমর্থন দিয়েছে, তা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। এখানে জাতীয় পার্টির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ নির্বাচনে আমার কাছে কোনো প্রার্থী সমর্থন চাননি এবং এমন কোনো আবেদনও ছিল না আমার কাছে।’

সিটি নির্বাচনের প্রচার শুরুর দিকে সেলিম ওসমান বলেছিলেন- যেখানে নৌকা আছে, সেখানে লাঙ্গল নেই। তাহলে তার দলের নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আগের দুটি নির্বাচনেও নারায়ণগঞ্জে প্রার্থী দেয়নি জাতীয় পার্টি। প্রথম নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক ছিল দলটি। দ্বিতীয় নির্বাচনের সময় তারা সংসদে প্রধান বিরোধী দল, আবার সরকারেরও অংশীদার ছিল। এবারও প্রধান বিরোধী দল, তবে সরকারে নেই জাতীয় পার্টি।’

২০১৬ সালের শেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী না দিয়ে পাশে ছিল আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর।

২০১১ সালে প্রথম সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কাউকে সমর্থন না দেয়ার পর আওয়ামী লীগেরই দুই নেতা শামীম ওসমান ও আইভী পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন। তখন শামীমের পাশে ছিল জাতীয় পার্টি। যদিও আইভীর কাছে পেরে ওঠেননি শামীম ওসমান।

এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে আইভী-তৈমূর ছাড়াও আরও পাঁচ প্রার্থী রয়েছেন। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাসুম বিল্লাহ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস, খেলাফত মজলিসের এ বি এম সিরাজুল মামুন ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের জসিম উদ্দিন এবং স্বতন্ত্র কামরুল ইসলাম।

আগামী ১৬ জানুয়ারি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ২৭টি ওয়ার্ডে ভোটের তারিখ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭ জন। তাদের মধ্যে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৯ জন পুরুষ ও ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৭ জন নারী ভোটার। চারজন আছেন ট্রান্সজেন্ডার।

এ বিভাগের আরো খবর