ঢাকা-বরিশাল রুটে সুরভী-৯ লঞ্চের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।
এ ছাড়া লঞ্চের ব্যবস্থাপক মিজানসহ বাকি স্টাফদের বিরুদ্ধে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ করেছেন বন্দর কর্মকর্তা।
নিউজবাংলাকে রোববার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘এই লঞ্চে যান্ত্রিক ত্রুটি এবং সাংবাদিক ও যাত্রীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘিরে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তারই পরিপ্রেক্ষিতে যাত্রা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তা ছাড়া থানায় একটি অভিযোগও করেছি আমি।’
সুরভী-৯ লঞ্চে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ক্যামেরা পারসন রুহুল আমিন ও ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসন দেওয়ান মোহন লঞ্চের ব্যবস্থাপক মিজানসহ অন্য স্টাফদের নামে আলাদা অভিযোগ করেছেন।
দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় বরিশাল প্রেস ক্লাব, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি, সাংবাদিক ইউনিয়ন বরিশালসহ বিভিন্ন সংগঠন নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।
মাঝনদীতে আগুন আতঙ্কে ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি সুরভী-৯ লঞ্চকে চাঁদপুরে আটকে দেয় নৌ-পুলিশ। যাত্রীদের কাছ থেকে ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে চাঁদপুরের মোহনপুর লঞ্চঘাটে লঞ্চটি আটকে দেয়া হয়।
নৌ-ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা গিয়ে লঞ্চ পরীক্ষা করে জানান, আগুন লাগেনি; সাইলেন্সার অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে যাওয়ায় ধোঁয়া বের হচ্ছিল। সে কারণে যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে সেটি বরিশালের উদ্দেশে যাত্রা করে।
লঞ্চটি বরিশাল নৌবন্দরে পৌঁছায় রোববার বেলা ১১টার দিকে। এ সময় লঞ্চের দ্বিতীয় তলায় যাত্রীদের মারধর করা হয়। আহত যাত্রীদের একজন সরকারি ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থী মারুফ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকে নিয়োগ পরীক্ষা শেষে ঢাকা থেকে ফিরছিলাম লঞ্চে। রাতে ডেকে চা খেতে নেমে ইঞ্জিন রুমে প্রচুর ধোঁয়া দেখতে পাই। কাছে গিয়ে দেখি সাইলেন্সার পাইপে আগুন জ্বলছে। মোবাইল দিয়ে কয়েকটি ছবি তোলার পর তা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের দেখাই। এতেই ক্ষিপ্ত হন লঞ্চ স্টাফরা। ওই সময় আমাকে টার্গেট করে রেখেছিল। লঞ্চ ঘাটে আসার পর আমার ওপর হামলা চালানো হয়।’
সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এই লঞ্চের স্টাফদের হামলায় আহত হন রুহুল আমিন।
তিনি বলেন, ‘লঞ্চ থেকে ধোঁয়া বের হওয়ার ঘটনাটি যেসব যাত্রী মোবাইলে ধারণ করে ফেসবুকে দিয়েছিলেন, সেসব যাত্রীকে খুঁজে ব্যাপক মারধর শুরু করেন স্টাফরা।
‘মারধরের ভিডিও করতে গেলে লঞ্চের ম্যানেজার মিজানের নেতৃত্বে স্টাফরা আমাকে এবং আমার সহকর্মী ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ভিডিওগ্রাফার দেওয়ান মোহনের ওপর হামলা করেন। লাঠি দিয়ে আমাদের মারধর করেন।’
সুরভী-৯ লঞ্চের যাত্রী হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি সুরঞ্জিৎ দত্ত লিটু বলেন, ‘আমরা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সম্মেলন শেষে ঢাকা থেকে ফিরছিলাম। পথের মাঝে যা হওয়ার হয়েছে। বরিশাল ঘাটে পৌঁছানোর পর আমাদের ছাত্র-যুব-ঐক্য পরিষদের নেতা আবির কুণ্ডু ও সুজয়ের ওপর অতর্কিত হামলা চালান লঞ্চের স্টাফরা।
‘সারা রাত ঘুমাতে পারেনি লঞ্চের যাত্রীরা। এরপর এই লঞ্চ স্টাফরা হামলা করেছেন। এই লঞ্চে যাত্রীসেবা নয়, যাত্রীদের জিম্মি করা হয়।’
বিআইডব্লিউটিএ যুগ্ম পরিচালক ও বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমার সামনেই যাত্রী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে। আমি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।’