নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় আবারও নিজ দলের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে আক্রমণ করে কথা বললেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। বললেন, গডফাদার শামীম ওসমানের তিন দশকের উপাধি।
বন্দর খেয়াঘাট এলাকায় রোববার গণসংযোগের সময় শামীম ওসমানের বিষয়ে আইভী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
নির্বাচনি প্রচারণায় গিয়ে শনিবারও ওসমান পরিবারের দুই সংসদ সদস্য ভাই সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমানকে কামান দাগান আইভী। প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারকে শামীম-সেলিমের প্রার্থী দাবি করেন তিনি।
শামীম ওসমানকে গডফাদার বলতেও ছাড়েননি আইভী। নারায়ণগঞ্জের দুইবারের মেয়র এবার জানালেন, উপাধিটি তার দেয়া নয়। জনগণই বছরের পর বছর তাকে এই নামে জানে।
আইভী বলেন, ‘আমি ওনাকে (শামীম ওসমানকে) গডফাদার উপাধি দেইনি। এটা ওনার বিগত ৩০ বছরের উপাধি। শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, তাকে সারা বাংলাদেশ জানে।’
তার মতে, আওয়ামী লীগ একটি বৃহত্তর দল, এখানে সকলেরই স্থান আছে। এ দলে জনপ্রিয় মানুষের যেমন স্থান আছে, তেমনি বিতর্কিত মানুষেরও স্থান আছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটিতে গত নির্বাচনে আইভীর পক্ষে শামীম ওসমানকে যতটা সরব দেখা গিয়েছিল, এবার তা দেখা যাচ্ছে না। তাহলে কি সংসদ সদস্যের সমর্থন পাচ্ছেন না আইভী, আসছে এমন প্রশ্নও।
তবে বিষয়টি নিয়ে খুব একটা ভাবছেন না আইভী। তিনি বলেন, ‘উনি আমার দলের লোক, সমর্থন দিলে দেবেন, না দিলে না দেবেন। জনতাই আমার ক্ষমতা। আমাকে উনি অপছন্দ করতেই পারেন। আমি আমার বড় ভাইকে সম্মান রেখে বহুবার বলেছি, উনি যদি ওনার দায়িত্ব পালন না করেন সেখানে আমার কিছু করার নাই। তারা ষড়যন্ত্র করবেন, কিন্তু তাদের ধ্বংস করে দেবে জনগণ।’
ভোটের দিন, ১৬ জানুয়ারি যত ঘনিয়ে আসছে, ততই চড়ছে নির্বাচনের উত্তেজনার পারদ। এই লড়াইয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়ানো তৈমূর আলম অবস্থা বিবেচনায় এখন সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমানের প্রার্থীতে পরিণত হয়েছেন বলে দাবি আইভীর।
তিনি বলেন, ‘ওনার (তৈমূর আলম) চারপাশে এখনও বিএনপির লোকজন আছে। এখন আবার জাতীয় পার্টি যুক্ত হয়েছে। আবার আমাদের নারায়ণগঞ্জের কথিত গডফাদার শামীম ওসমানের লোকজনও যুক্ত হয়েছে। সম্ভবত উনি বিএনপির প্রার্থী নন, আমার মনে হয় উনি সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমানের প্রার্থী।
‘আমি কখনোই বহিরাগত দিয়ে কিছু করাই না। এই স্বভাব আমার রক্তেই নাই। আমার সঙ্গে যারা থাকে, তারা প্রতিদিন নিজের পয়সা খরচ করে, নিজের খেয়ে কাজ করছে। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই আমার আত্মিক সম্পর্ক। এই শহরের মানুষের সঙ্গে আমার হৃদয়ের সম্পর্ক।’
তৈমূর আলম কখনও নারায়ণগঞ্জ শহরবাসীর কাছে আসেননি জানিয়ে আইভী বলেন, ‘তৈমূর আলম রাজনীতি করেছেন, কিন্তু তৃণমূলে গিয়ে কখনোই মেশেননি। আমাকে আল্লাহ্ একটা সুযোগ করে দিয়েছিল, আমি তিন তিনবারের মেয়র। দরজা থেকে দরজা পর্যন্ত মানুষের সম্পর্কে জানা আছে। নির্বাচনের সময় অভিযোগ করতে হয় বলে তৈমূল আলম অভিযোগ করছেন। তার বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নাই।
‘আমার জনসমর্থন কতটুকু এটা তৈমূর আলম নিজে জানেন। উনি ব্যক্তিগতভাবে আমার বাবার (আলি আহম্মদ চুনকা) জনপ্রিয়তা ও তার জনসমর্থন সম্পর্কে জানেন। বিগত ১৮ বছর ধরে আমার যে জনপ্রিয়তা সেটার সম্পর্কেও তিনি জানেন। এখন উনি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন বলে এসব অসত্য-মিথ্যা কথাগুলো বলছেন।’
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, ‘পুলিশ কী করছে, তা আমি জানি না। আমি দিনভর সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকি। তাদের কাছে ভোট ভিক্ষা চাচ্ছি। যারা খারাপ তাদের কোনো দল নাই। যারা মাদক ব্যবসায়ী, যারা চাঁদাবাজি-ছিনতাই করে তাদের তো পুলিশ ধরবেই।’
‘সবাই জনগণ হতে চায়, জনগণের প্রার্থী হতে চায়। ২০১১তে আইভীও ছিল জনতার প্রার্থী, এখনও আইভী সেই অবস্থানে আছে। দল, জনতা সবকিছু মিলিয়ে আইভীই জনতার প্রার্থী। আমি জানি না উনি (তৈমূর) জনতার প্রার্থী কি না। ওনার চারপাশে যারা আছেন তারা সকলেই আমাদের শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের লোকজন। সুতরাং তৈমূর আলম দাবি করতে পারেন না উনি জনতার প্রার্থী।’
ভোটের মাঠ নিজের দখলে রয়েছে দাবি করে আইভী বলেন, ‘আমার দখলে বলতে আমি এটা বুঝাচ্ছি, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর ও নারায়ণগঞ্জের ভোটাররা আমার কথা বলে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আমার কথা বলে। আমার বিরুদ্ধে প্রচুর অপপ্রচার চালানো হয়েছে, বিভ্রান্ত ছড়ানো হয়েছে, ধর্মীয় ব্যাপারে উসকানি দেয়া হয়েছে। কোনোটাই কাজ হবে না। আগেও হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। আমি মসজিদের কাজ করেছি, মন্দিরের কাজ করেছি, শ্মশানের কাজ করেছি।’