হাসপাতালের স্ট্রেচারে চাদরে মোড়ানো একটি নিথর দেহ। তার পাশেই অঝোরে কাঁদছে ছোট্ট একটি শিশু।
কাঁদতে কাঁদতেই স্ট্রেচারে থাকা মানুষটির চোখেমুখে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে। আর বলছে, ‘আমার আব্বু কথা বলে না কেন, আব্বুকে কেউ জাগিয়ে তুলো। বাবা কি মারা গেছে, আর কি কথা বলবে না।’
এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয় গত ৫ জুলাই, যা আবেগতাড়িত করে অনেককে। ওই শিশুর নাম মরিয়ম খাতুন। তার বাবা নওগাঁর পোরশা উপজেলার কলোনিপাড়ার মুজিবর রহমান। শ্বাসকষ্ট ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সেদিন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।
মুজিবর ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার মৃত্যুতে সন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন স্ত্রী তানজিলা বেগম।
সে সময়ই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুজিবরের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা সহায়তা দেয়া হয়। এবার পরিবারটি প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়েছে।
জেলা প্রশাসক (ডিসি) হারুন-অর-রশীদ রোববার সকালে উপজেলার নীতপুর ইউনিয়নের চকবিষ্ণপুর কলোনিবাজার গ্রামে মুজিবরের বাড়িতে উপস্থিত হন। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দুটি গাভী, দুটি বাছুর ও এক মাসের পশু খাদ্য তিনি তুলে দেন মুজিবরের স্ত্রী তানজিলার হাতে।
প্রশাসনের উদ্যোগে গরু রাখার জন্য বাড়ির সঙ্গে একটি শেডও (গোয়ালঘর) তৈরি করে দেয়া হয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও সেখানে ছিলেন।
- আরও পড়ুন: ‘আমার আব্বু কথা বলে না কেন’
তানজিলা বেগম বলেন, “তাকে (স্বামী) হারিয়ে আমরা অনেক অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার মেয়ে আজও তার বাবার কথা বলে। মাঝে মাঝে ‘মেয়েটা বলে আম্মু আব্বু কি আর কোনো দিন ফিরে আসবে না?’ এসব কথা বলে মেয়েটা আমার অনেক কান্না করে। আজ ডিসি স্যার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে অনেক উপহার দিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও ডিসি স্যারের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।”
ডিসি হারুন বলেন, ‘আমরা চেয়েছি এই পরিবারের জন্য স্থায়ীভাবে আয়বর্ধক কিছু একটা করে দিতে। সেই সিদ্ধান্ত থেকে অসহায় পরিবারটিকে দুটি গাভী ও দুটি বাছুর উপহার দেয়া হলো। আশা করি, এই গাভী-বাছুর লালনপালন করে স্বাবলম্বী হতে পারবে। এ ছাড়া মরিয়মের মায়ের জন্য বিধবা ভাতারও ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে।’