বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাইন বিস্ফোরণে শহীদদের নানা কর্মসূচিতে স্মরণ

  •    
  • ৬ জানুয়ারি, ২০২২ ১২:১৫

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ বলেন, ‘ক্যাম্পে অবস্থানরত অনেক মুক্তিযোদ্ধার হাত-পা, মাথা অনেক দূরে ছিটকে যায়। দুর্ঘটনার পরপরই শতাধিক আহত মুক্তিযোদ্ধাকে ভর্তি করা হয়েছিল দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল ও সেন্ট ভিসেন্ট মিশন হাসপাতালে। সেখানে ১৭ দিন চিকিৎসার পর তার জ্ঞান ফিরেছিল।’

দেশ স্বাধীন হয়েছে। তবে নিরাপদ হয়নি তখনও। শত্রুর পুঁতে রাখা মাইন, গোলাবারুদ আছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। উদ্বিগ্ন বীর মুক্তিযোদ্ধারা হাতে হাত রেখে আবার নেমে পড়েন।

প্রাণঘাতী অস্ত্র সংগ্রহ করে তারা রাখতে শুরু করেন বাংকারে। একদিন এক বীর মুক্তিযোদ্ধার অসতর্কতায় পড়ে যায় মাইন। ভয়াবহ বিস্ফোরণে আবারও রক্তাক্ত হয় মাতৃভূমি। প্রাণ হারান ৫ শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা।

ঘটনাটি দিনাজপুর শহরের। ১৯৭২ সালের এই দিনে মহারাজা গিরিজানাথ হাই স্কুলের ট্রানজিট ক্যাম্পে মাইন বিস্ফোরণে সৃষ্টি হয় ধ্বংসযজ্ঞ।

দিবসটি উপলক্ষে স্মৃতি পরিষদ, মহারাজা গিরিজানাথ হাই স্কুল ও দিনাজপুর প্রেস ক্লাব বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীনের পর দিনাজপুর শহরের উত্তর বালুবাড়ীর মহারাজা হাই স্কুলে বানানো হয় মুক্তিযোদ্ধা ট্রানজিট ক্যাম্প।

বিজয় অর্জনের পর ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ক্যাম্পে এসে জড় হন দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়সহ আশপাশের জেলাগুলোর বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

তারা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হামজাপুর, তরঙ্গপুর, পতিরাম ও বাঙ্গালবাড়ী ক্যাম্পের বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এখানে জড়ো হন ৮ শতাধিক মানুষ।

রক্তের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীন দেশকে শত্রুদের পুঁতে রাখা মাইনমুক্ত করতে সমবেত বীর মুক্তিযোদ্ধারা কাজ করছিলেন। ক্যাম্প থেকে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা বেরিয়ে পড়তেন পাকিস্তানি সেনাদের ফেলে যাওয়া, লুকিয়ে রাখা, পুঁতে রাখা মাইন ও অস্ত্রশস্ত্র এবং গোলাবারুদের সন্ধানে। সন্ধ্যার দিকে উদ্ধার করা মাইন ও অস্ত্র জমা করা হতো মহারাজা স্কুলের দক্ষিণাংশে খনন করা বাংকারে।

১৯৭২ সালের ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় এ রুটিন ওয়ার্কের একপর্যায়ে ঘটে যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। উদ্ধার করা অস্ত্র বাংকারে নামানোর সময় অসতর্ক মুহূর্তে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার হাত থেকে একটি মাইন পড়ে যায়।

এতে করে মাইনটি বিস্ফোরিত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বাংকারের পুরো অস্ত্রভান্ডার বিস্ফোরিত হয়। ভয়াবহ ও বিকট বিস্ফোরণে ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি হয় মহারাজা স্কুল প্রাঙ্গণসহ আশপাশের এলাকায়। এতে পাঁচ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং বহুসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।

ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার চরারহাট গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ বলেন, ‘সেদিন মাইন বিস্ফোরণে কতজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে সকালের রোলকলে উপস্থিত ছিলেন ৭৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা।

‘দুর্ঘটনার পূর্বে ৫০ থেকে ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা ছুটি নিয়ে ক্যাম্প ত্যাগ করেছিলেন। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় সাড়ে চার শ বীর মুক্তিযোদ্ধা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলেই নিহত হন।’

জানা যায়, তিনিসহ ক্যাম্পে অবস্থানরত অনেক মুক্তিযোদ্ধার হাত-পা, মাথা অনেক দূরে ছিটকে যায়। দুর্ঘটনার পরপরই শতাধিক আহত মুক্তিযোদ্ধাকে ভর্তি করা হয়েছিল দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল ও সেন্ট ভিসেন্ট মিশন হাসপাতালে।

এদের মধ্য থেকে পরে ২৯ জন মারা যায়। তাকে ভর্তি করা হয়েছিল দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে ১৭ দিন চিকিৎসার পর তার জ্ঞান ফিরেছিল।

পরে তাকে ভারতের কলকাতার একটি হাসপাতালে সাড়ে চার মাস চিকিৎসার পর শরীরের বাম পা কেটে ফেলে দেশে ফিরে আসেন।

এখন এই পঙ্গু বীর মুক্তিযোদ্ধা সরকারি ভাতা পান। তার মতো আরও ৩৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা সরকারি ভাতা পাচ্ছে।

দিনাজপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুল হক ছুটু জানান, ঘটনার সময় তিনি তার শহরের বাসাতেই অবস্থান করছিলেন। দুর্ঘটনার পর শহরের সব স্তরের মানুষ ঘটনাস্থলে গিয়ে জীবিত ও মৃত্যু ব্যক্তিদের উদ্ধার করেন।

আহতদেরও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সে সময় হাসপাতালের পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও ওষুধপত্র না থাকায় ঠিকমতো চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়নি। তিনি জানান, সে দিনের ওই মাইন বিস্ফোরণে শুধু মুক্তিযোদ্ধারাই নন, এ ভয়াবহ দুর্ঘটনায় শহরের উত্তর বালুবাড়ী কুমারপাড়া মহল্লায় আরও ১৫ জন অধিবাসীও মৃত্যুবরণ করেন। ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয় মহারাজা স্কুলের দ্বিতল ভবনসহ আশপাশের অধিকাংশ ঘরবাড়ি, দালানকোঠা।

তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনার পরদিন ৭ জানুয়ারি দিনাজপুরের শহীদ বড় ময়দানে শহীদদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সামরিক মর্যাদায় ১২৫ জন শহীদের মরদেহ দাফন করা হয় ঐতিহাসিক চেহেলগাজী মাজার প্রাঙ্গণে।

এরপর চেহেলগাজী মাজার প্রাঙ্গণে আরও দাফন করা হয় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করা ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ। নিহতদের মধ্যে সে সময় ৫৮ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়। পরে পর্যায়ক্রমে পাওয়া যায় আরও ৬৪ শহীদের নাম-পরিচয়।

দিনাজপুরবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনাজপুর গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে জনসভায় ৬ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধাদের ট্র্যাজেডিস্থলে শহীদদের স্মৃতিসৌধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

৬ জানুয়ারি স্মৃতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক আজহারুল আজাদ জুয়েল জানান, দিবসটি যথাযথ পালনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জানুয়ারি সকাল ৯টায় স্মৃতি পরিষদের সদস্যসহ সর্বস্তরের জনগণ দিনাজপুর প্রেস ক্লাবে এসে চেহেলগাজী মাজার প্রাঙ্গণে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হবে।

শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও শপথবাক্য পাঠ শেষে মহারাজা স্কুলের উদ্দেশে রওনা হবেন এবং স্কুল প্রাঙ্গণে অবস্থিত শহীদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা অর্পণ করবেন। বাদ আসর মহারাজা স্কুল মসজিদে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দোয়া মাহফিল হবে।

তা ছাড়াও শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সন্ধ্যা ৬টায় আলোচনাসভা করা হবে।

এ বিভাগের আরো খবর