এক পিরের নির্দেশে অর্ধশতাব্দী ধরে কোনো নির্বাচনেই ভোট দেন না চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের নারী ভোটাররা। এবারই প্রথম নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভোট দিয়েছেন ৯৮ নারী।
বুধবারের নির্বাচনে ওই ইউনিয়নের ৬ নম্বর গৃদাকালিন্দিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি ৭০ জন নারী ভোট দিয়েছেন। কেন্দ্রটিতে বেলা ১টা পর্যন্ত মাত্র ১ জন নারী ভোট দিলেও শেষ সময়ে আরও ৬৯ জন এসে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মোহাম্মদ আয়াছ গাজী বলেন, ‘বিভিন্ন মিডিয়ায় নারীদের নিয়ে সংবাদ প্রচার হওয়ায় শেষ সময়ে অনেক নারী কেন্দ্রে এসে ভোট দিয়েছেন।’
তবে ওই ইউনিয়নের ৮ নং সাহেবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে কোনো নারী ভোট দিতে যাননি বলে জানিয়েছেন ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার শংকর কুমার মহাজন।
ভোটে নারীদের অংশগ্রহণে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ওই ইউনিয়নের ৭ নং চরমঘুয়া শাহাদাত উল্যা ফোরকানিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্র। ওই কেন্দ্রে ১৩ নারী ভোট দিয়েছেন।
এ ছাড়া ইউনিয়নের ১ নং নলগোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩ জন, ২ং কাউনিয়া হানফিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৩ জন, ৩ নং পশ্চিম কাউনিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪ জন, ৪ নং দক্ষিণ চরমান্দারী স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২ জন, ৫ নং দক্ষিণ চরমান্দারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩ জন নারী ভোট দেন।
৯ নং দক্ষিণ সাহেবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার অর্জুন চন্দ্র কর্মকার ওই কেন্দ্রে নারীদের ভোট দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে মোট ভোটার রয়েছেন ১৮ হাজার ৭৮৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯ হাজার ৭৪১ এবং নারী ভোটার ৯ হাজার ৪৫ জন।
রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের মানুষ জানিয়েছেন, দেশ স্বাধীনের পর ফরিদগঞ্জের রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে দেখা দেয় কলেরার মহামারি। মহামারি থেকে রক্ষা পেতে দোয়ার আয়োজন করা হয়। তখন মওদুদ হাসান জৈনপুরী নামের একজন পির নারীদের পর্দা মেনে চলার আদেশ দেন।
পরে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারীরা ঘর থেকে বেরিয়ে পড়াশোনা, বাজার-সদাই, নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ-কর্মে এগিয়ে গেলেও তারা কখনও ভোটাধিকার প্রয়োগ করেননি।
তাদের ধারণা, পিরের নির্দেশ অমান্য করে ভোট দিলে অমঙ্গল নেমে আসবে তাদের জীবনে। তাই নির্বাচনের দিন ওই ইউনিয়নের নারীদের ভোট দেয়ার কোনো পরিকল্পনাই থাকে না।