হেফাজত ইসলামের নেতা মামুনুল হককে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার পর নানা হাঙ্গামার পর ৬ মাস জেল খাটা ঝুমন দাস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে হেরে গেছেন।
তবে এতে তিনি হতাশ নন, আগামীকে অনেক কিছু করার প্রত্যাশা করেছেন। ভোটারদের প্রতি প্রকাশ করেছেন কৃতজ্ঞতাও।
কিছুটা আক্ষেপ অবশ্য আছে তার। সেটি পরাজয়ের কারণে নয়। ভোটারদের কেউ কেউ টাকার বিনিময়ে তাদের সমর্থন বিক্রি করেছেন-এই দুঃখের কথা বলেছেন।
বুধবার পঞ্চম ধাপে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নে এই নির্বাচনে লড়াই হয়েছে ত্রিমুখি। লড়াইয়ে ঝুমন হেরেছেন বড় ব্যবধানে। বিজয়ী প্রার্থী থেকে ৬ হাজার ৫৯০ ভোট কম পেয়েছেন ঘোড়া প্রতীকে লড়া ঝুমন।
সেখানে জিতেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়া সুবল চন্দ্র দাস। আনারস প্রতীকে ৭ হাজার ৫৫৮ ভোট পেয়ে নির্বচিত হয়েছেন তিনি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের রঞ্জিত দাস পেয়েছেন ৭ হাজার ১৪৩ ভোট।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়েন মোট চার জন। অপর প্রার্থী রাজিব কান্তি দাস ঢোল প্রতীকে পেয়েছেন ৪৮৩ ভোট।
গত বছরের ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে ‘শানে রিসালাত সম্মেলন’ নামে সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম। এতে হেফাজতের তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বক্তব্য দেন। পরদিন মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন শাল্লার নোয়াগাঁওয়ের যুবক ঝুমন দাশ।
এ ঘটনায় হিন্দুদের বাড়ি ও মন্দিরে হামলা হয়। পরে ঝুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন শাল্লা থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আবদুল করিম। এই মামলায় প্রায় ছয় মাস পর হাইকোর্ট থেকে জামিন পান তিনি। মুক্তি পান গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর।
তার ভোটে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করার পর থেকেই গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। যে কারণে তিনি ভোটে কেমন করেন, এ নিয়ে দৃষ্টি ছিল অনেকের।
ঝুমনের যে প্রতিক্রিয়া
প্রথমবারের মতো ভোটের লড়াইয়ে ঝুমন খুব একটা খারাপ করেননি। ভোটের ফল প্রকাশের পর ফেসবুকে তিনি লিখেন, ‘দাদা, নিলয় চক্রবর্তী, শুভ রায়, প্রদীপ দাশ, গৌতম হালদার দাদাসহ আপনারা আমাকে যে সাহস দিয়েছেন সেই সাহস দিয়ে আগামীতে অনেক কিছু করব, এই আমার প্রত্যাশা। আপনারা আমার প্রেরণা, আপনারাই আমার শক্তি।’
ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতার কথাও বলেছেন ঝুমন। বলেন, ‘আপনাদের ঝুমন টাকার কাছে বিক্রি হয় নাই। এই শিক্ষাটাই আপনারা ঝুমনকে দিয়েছেন। ঝুমন আপনাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।
‘টাকার কাছে হেরেছি’- এই কথাটিতে আক্ষেপও ঝরে পড়েছে তার। আবার লিখেছেন নিজের শক্তির কথা।
‘একটা কথা বলতে পারি, আপনাদের ৫০০ টাকা যে ঝুমন হাত বাড়িয়ে নিয়েছে, ১০ লক্ষ টাকাতেও আপনাদের ঝুমন লোভ করে নাই’-নিজের সততার কথা জানান দিয়েছেন তিনি এভাবে।