নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর জয় চায় কি না, সে প্রশ্ন রেখেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার পর শুরুতে একে তার জন্য ‘ভালো’ বলে উল্লেখ করলেও তৃতীয় দিনে এসে উল্টো প্রতিক্রিয়া জানালেন গত দুই নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী আওয়ামী লীগ নেত্রীকে চ্যালেঞ্জ করা তৈমূর। এর আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক পদও কেড়ে নেয়া হয়েছে তার কাছ থেকে।
বুধবার দুপুরে নগরীর উকিলপাড়া ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ শেষে সাংবাদিকদের কাছে আগের দুই দিনের বক্তব্যের বিপরীত কথা বলেন হাতি মার্কার প্রার্থী।
তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রশ্ন বিএনপি নেতৃবৃন্দ কী চায়? আমাকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়ে নৌকা জয়ী হোক? ঢাকায় বসে যারা চিঠি দেয়, তাদের কাছে জনতার প্রশ্ন, তারা কি চায় নৌকা জয়লাভ করুন?’
২০১১ সালের প্রথম সিটি নির্বাচনে তৈমূরকে সমর্থন জানিয়েও ভোটের আগে আগে তাকে সরে যেতে বলে বিএনপি। সে সময় আসল লড়াই জমেছিল আওয়ামী লীগেরই দুই নেতা সেলিনা হায়াৎ আইভী ও শামীম ওসমানের মধ্যে। ধারণা করা হয়, শামীম যেন জিততে না পারেন, সে জন্যই বিএনপি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
২০১৬ সালের দ্বিতীয় নির্বাচন হয় দলীয় প্রতীকে। বিএনপি ধানের শীষ তুলে দেয় সাখাওয়াত হোসেন খানের হাতে। তিনি ৮০ হাজারের মতো ভোটে হারেন আইভীর কাছে।
তৃতীয় নির্বাচনের সময় যখন ঘনিয়ে, সে সময় বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না তারা।
এর মধ্যে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির তৃণমূলের নেতারা স্বতন্ত্র পরিচয়ে প্রার্থী হয়ে দলের স্থানীয় পর্যায়ের সমর্থন পেয়েছেন। গত দুই ধাপে যথাক্রমে ৯৬ ও ৯৮টি ইউনিয়নে জয়ও পেয়েছেন বিএনপির প্রার্থীরা।
এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে মেয়র পদে বিএনপির তিনজন নেতা প্রার্থিতা জমা দেন। তবে দুজন তৈমূরকে সমর্থন জানিয়ে সরে যান। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রের মোড়কে বিএনপির মধ্যে লড়াই জমেছে বন্দরনগরীতে।
১৬ জানুয়ারির ভোট নিয়ে যখন দুই পক্ষ প্রচারে মশগুল, সে সময় রোববার বিএনপির মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভীর একটি বিজ্ঞপ্তি নতুন আলোচনা তৈরি করে। তিনি জানান, নারায়ণগঞ্জে তার দলের কোনো প্রার্থী নেই। পাশাপাশি তৈমূর আর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা নন- এ বিষয়টিও জানিয়ে দেয়া হয়।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সেদিন তৈমূর বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ… ‘আমি মনে করি, আমার দল আমাকে একটা উপকার করছে। আমি রাস্তার মানুষ ছিলাম, রাস্তায় রাস্তায় ছিলাম, বস্তিতে ছিলাম এখন সেখানে ঘুরব। এবার জনগণের জন্য যদি আমার রাস্তায় মৃত্যু হয়, হবে৷ রাজপথে আমার জন্ম, রাজপথে আমার মৃত্যু হবে। আমার ভাগ্যের মালিক আল্লাহ।’
পরের দিন আরেক প্রতিক্রিয়ায় তিনি দাবি করেন, বিএনপির এই সিদ্ধান্ত তার জন্য সুবিধা নিয়ে আসবে। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘যারা নৌকায় ভোট দিত, তারাও এখন আমাকে স্বচ্ছন্দে ভোট দিতে পারবে। কারণ আমি দলীয় কোনো প্রার্থী না। যারা ধানের শীষে ভোট দিত, তারা কখনই নৌকায় ভোট দেবে না। ওই ভোটগুলোও আমি পাব।’
তৃতীয় দিনে এসে বক্তব্য পাল্টে তৈমূর বলেন, ‘নির্বাচন চলছে জনগণ বনাম সরকার। আমি যেখানেই যাচ্ছি সেখানে দলমত নির্বিশেষে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আমার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে এবং আমার গণসংযোগে সম্পৃক্ত হচ্ছে।’
দল তাকে স্বীকৃতি না দিলেও নিজেকে বিএনপির প্রার্থী বলেই মনে করেন হাতি মার্কার প্রার্থী। বলেন, ‘তৈমূর আলম খন্দকার বিএনপির এক ব্র্যান্ড। এখানে অব্যাহতি দিলেই কী আর না দিলেই বা কী।
‘স্থানীয় সব নেতাকর্মী আমার পাশে আছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গেই আছে। আমি যেখানেই যাচ্ছি, সেখানেই বিএনপির ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি সেক্রেটারি আমার ডানে ও বামে থাকে।’
তৈমূরের দাবি, পৌর ও সিটি মেয়র হিসেবে আইভীর ১৮ বছরের সময়ের ‘পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে এখন। জনগণ পরিবর্তন চায়।