রাজধানীর বনানী থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় অভিনেত্রী পরীমনিসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে আদালত। এর মধ্য দিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হলো। এ মামলায় স্বাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক নজরুল ইসলাম বুধবার সকালে শুনানি শেষে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। সেই সঙ্গে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য তারিখ নির্ধারণ করে দেন। এ ছাড়া, কিছু শর্তে তিন আসামির জামিন বহাল রাখা হয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু পরীমনিসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনান। এরপর পরীমনির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভী মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে শুনানি করেন।
এরপর বিচারক আসামিদের জিজ্ঞাসা করেন, তারা দোষী, না নির্দোষ। আসামিরা তখন নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেন।
মামলার অপর দুই আসামি হলেন পরীমনির ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম দিপু ও পরীমনির বড় খালু কবীর হোসেন হাওলাদার। আসামিরা সবাই জামিনে আছেন।
এর আগে সকাল ১০টার কিছু পর আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন আসামিরা। সাড়ে ১০টায় হাজিরা দেন তারা।
পরীমনির আইনজীবী নিলাঞ্জনা রিফাত সুরভী শুনানিতে বলেন, পরীমনিসহ আসামিরা একটি বিশেষ মহলের ষড়যন্ত্রের শিকার। তাদের বাসা থেকে কিছু খালি মদের বোতল জব্দ করা হয়েছে। তার বাসা থেকে মাদক উদ্ধার প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে ও ষড়যন্ত্রকারীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আদালতে একটি ত্রুটিপূর্ণ তদন্তের অভিযোগপত্র আদালতের সামনে হাজির করেছে।
তিনি বলেন, এই মামলা থেকে অব্যাহতি না পেলে পরীমনিসহ আসামিরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন। আর এই মামলার আসামি কবির হোসেন হাওলাদার এখানে বসবাস করেন না। তিনি বেড়াতে এসেছিলেন, তাকে এই মামলার সঙ্গে যুক্ত রাখার কোনো কারণ নাই।
শুনানির একপর্যায়ে আসামিদের আইনজীবী জানান, পরীমনি ভীষণ অসুস্থ, তার বমি আসছে বলে। তখন আদালতের কাঠগড়ায় বসতে পরীমনিকে একটি টুল দেয়া হয়।
পরীমনিসহ আসামিদের উপযুক্ত বিচার চেয়ে শুনানি করেন সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু।
আদালতকে তিনি বলেন, এটা বহুল আলোচিত একটি মামলা। দেশের গণমাধ্যম ও পত্রপত্রিকায় এই ঘটনার সংবাদ হয়েছে। শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। আসামিদের অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, পরীমনির বাসা থেকে র্যাব মাদক উদ্ধারসহ যথাযথ আইন মেনে জব্দ তালিকা প্রস্তুত করেছে। আসামিদের হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছে।
তিনি বলেন, ‘এই মামলায় তাদের শাস্তি নিশ্চিতে আইনানুগ বিচার শুরু হওয়া প্রয়োজন। এ জন্য অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচার শুরুর আবেদন জন্য বিজ্ঞ আদালতের কাছে প্রার্থনা করছি।’
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন এবং সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর তারিখ নির্ধারণ করে দেন।
এই মামলায় গত রোববার হাজিরা দিয়ে যান পরীমনি। ওই দিনই অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানির হওয়ার কথা ছিল।
সেদিন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আয়ুবুর রহমানের মৃত্যুতে তার সম্মানে বিচারিক আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শুনানি হয়নি। আদালত আগামী ৫ জানুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করে দেয়।
র্যাবের করা মাদক মামলায় পরীমনিকে কয়েক দফায় রিমান্ডে পাঠানো হয়
গত ৪ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর বনানীর ১২ নম্বর সড়কে পরীমনির বাসায় অভিযান চালায় র্যাবের একটি দল। বাহিনীটি জানায়, এই অভিনেত্রীর বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে।
এরপর বনানী থানায় পরীমনিসহ আরও দুজনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মাদক মামলা করে র্যাব। এই মামলায় কয়েক দফায় পরীমনিকে রিমান্ড শেষে ২১ আগস্ট কারাগারে পাঠানো হয়।
৩১ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ জামিন মঞ্জুর করলে কারামুক্ত হন পরীমনি।
গত ৪ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক কাজী গোলাম মোস্তফা পরীমনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার জিআর শাখায় চার্জশিট জমা দেন।
মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। গত ১৫ নভেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ তিন আসামির বিরুদ্ধে চার্জপত্র গ্রহণ করেন।
১৪ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানির তারিখ ধার্য করে মামলাটি বিশেষ জজ আদালত-১০-এ বদলির আদেশ দেন।