জাতীয় সংসদ সদস্যদের মধ্যে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব ক্রমেই বেড়ে চলার পরিপ্রেক্ষিতে এটি ঠেকাতে আইন চাইছে বামপন্থি বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে উদ্যোগী হওয়ার অনুরোধ করেছে তারা। রাষ্ট্রপতি বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপে বঙ্গভবনে গিয়ে এমন দাবি জানিয়েছে দলটি। সংলাপ শেষে বের হয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া সাংবাদিকদের এমন কথা বলেন।
বিকেল সাড়ে ৫টায় দলের ৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন। যার নেতৃত্বে ছিলেন দীলিপ বড়ুয়া।
গত ২০ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ শুরু হয়। প্রথম দিন জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সংলাপে অংশ নেয়।
সংলাপ শেষে বেরিয়ে দিলীপ বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ব্যবসায়ীদের দ্বারা সংসদ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। সে বক্তব্য তিনি সংসদেও অতীতে দিয়েছেন। তখন আমরা বলেছি যে এ ব্যাপারে একটি আইন করা উচিত। যাতে ব্যবসায়ীদের দ্বারা রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট না হয়।’
এ আইন কি রাষ্ট্রপতি করতে পারবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যেখানে এ বিষয়ে যেখানে আইন করতে বলার সেখানে বলবেন।’
রাষ্ট্রপতি আপনাদের দাবির প্রেক্ষিতে কি বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উনি বলেছেন, উনার যা ক্ষমতা আছে, তার মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট সকল ক্ষমতার সঙ্গে উনি আলাপ করবেন।’
স্বাধীনতার দুই বছর পর প্রথম নির্বাচনে ১৯৭৩ সালে সংসদে ব্যবসায়ী ছিলেন ১৫ শতাংশ। তবে ১৯৯০ সালের পর থেকেই রাজনীতিতে পরিবর্তন আসতে শুরু করে।
১৯৯৬ সালে ব্যবসায়ী এমপির হার হয় ৪৮ শতাংশ, ২০০১ সালে তা দাঁড়ায় ৫১ শতাংশ।
২০০৮ সালে সংসদ সদস্যদের ৬৩ শতাংশই ছিলেন ব্যবসায়ী। দশম জাতীয় সংসদে তা আরও বেড়ে হয় ৫৯ শতাংশ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৮২ জন ব্যবসায়ী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। অর্থাৎ সংসদের ৬১ দশমিক ৭ শতাংশের পেশা এখন ব্যবসা।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই নির্বাচনকালীন সরকার
সংলাপে রাষ্ট্রপতিকে এই বিষয়ে প্রস্তাব দেয়ার বিষয়ে দীলিপ বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা মহানাম্য রাষ্ট্রপতিকে বলেছি, বর্তমান বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শাসনতন্ত্র মোতাবেক নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা বাস্তবসম্মত।
‘সেই সরকার সংবিধান অনুসারেই গঠিত হবে। অথবা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অতীতে নির্বাচনকালীন একটি সরকার গঠন করেছেন সে রকমও হতে পারে।’
সংবিধানে তো নির্বাচনকালীন সরকার বলে কিছু নেই- এমন মন্তব্যের পর দীলিপ বড়ুয়া বলেন, ‘এর আগে তো প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে অফার দিয়েছিলেন নির্বাচনি সরকারে আসতে। বিএনপি আসেনি। সেটা তো সরকারের ইচ্ছার বিষয়।’
নির্বাচন কমিশন আইন দাবি
দীলিপ বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের প্রথম প্রস্তাব ছিল নির্বাচন কমিশন আইন তৈরি করা। যদি নির্বাচন কমিশন আইন তৈরি না হয়, তাহলে তো আর প্রতিষ্ঠানিক, স্বাবলম্বী রূপ পাবে না। আর নির্বাচন কমিশন প্রশাসনের আজ্ঞাবহ হয়েই থাকবে। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন ও মানুষ যাতে স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সে জন্য আইন প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মহানাম্য রাষ্ট্রপতিকে বলেছি, যদি সার্চ কমিটির মাধ্যমে করা হয়, তাহলে যেন সাংবিধানিক সংস্থাগুলো থেকেই নিয়ে যেন একটি কাউন্সিল করা হয়। সেই কাউন্সিল যেন নির্বাচন কমিশন গঠন করে।’
সে কাউন্সিলে কারা থাকবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা নির্দিষ্ট নাম দেইনি। তবে প্রধান বিচারপতি, স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা যে কেউ হতে পারেন। এর মধ্যে দিয়ে সাংবিধানিক সংস্থার প্রধানদের নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন করতে পারেন।’
সাংবিধানিক পদ থেকে হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে মনে করেন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জাতির প্রতি ওয়াদাবদ্ধ ও নিষ্ঠাবান থাকলে অবশ্যই নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।’