বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার আশা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার।
কীভাবে সুবিধা হবে, এই ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘যারা নৌকায় ভোট দিত, তারাও এখন আমাকে স্বচ্ছন্দে ভোট দিতে পারবে। কারণ, আমি দলীয় কোনো প্রার্থী না। যারা ধানের শীষে ভোট দিত, তারা কখনই নৌকা ভোট দেবে না। ওই ভোটগুলোও আমি পাব।’
নারায়ণগঞ্জ সিটির প্রথম নির্বাচনের কথা তুলে ধরে বিএনপি নেতা বলেন, “২০১১ বিএনপি বসেছে, আমি না। এবার বিএনপি আর আমাকে বলতে পারবে না, ‘তুমি বসো।’ তার কারণ, বিএনপিতে যে পদ ছিল সেটা নিয়ে নিয়েছে। তাই এখন আর দল আমাকে বলতে পারবে না। আমি সম্পূর্ণভাবে নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণে আছি।’”
সিদ্ধিরগঞ্জের ৫ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড সাইলো পুল এলাকায় মঙ্গলবার প্রচার, গণসংযোগ ও পথসভা শেষে সাংবাদিকের কাছে এ মন্তব্য করেন তৈমূর।
২০১১ সালে সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিএনপি সমর্থন দিয়েছিল তৈমূরকে। তবে সে নির্বাচনে তিনি সেভাবে আলোচনায় ছিলেন না। লড়াই হয়েছিল আওয়ামী লীগের দুই নেতা সেলিনা হায়াৎ আইভী ও শামীম ওসমানের মধ্যে।
ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে দলের সিদ্ধান্তে ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন তৈমূর। ২০১৬ সালের নির্বাচনে তার বদলে বিএনপি মনোনয়ন দেয় সাখাওয়াত হোসেন খানকে। তাকে আইভী হারান ৮০ হাজার ভোটে।
সিটির তৃতীয় নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছে। তবে তৈমূরের সেখানে প্রার্থী হওয়াটা রাজধানী লাগোয়া জনপদে আওয়ামী লীগ-বিএনপির দ্বৈরথের আবহ তৈরি করেছে।
বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা তৈমূরের পাশে একাট্টা। তিনি ধানের শীষ না পেলেও বলেছেন, তার চেহারাই ধানের শীষ।
ভোটের দুই সপ্তাহেরও কম সময় বাকি থাকতে সোমবার বিএনপি নেতাকে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এর আগে তিনি হারান নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক পদ। কেন এই সিদ্ধান্ত, সে বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। বিজ্ঞপ্তিতে কেবল বলা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই।
এই নির্বাচনে আইভীর নৌকার বিরুদ্ধে তৈমূর দাঁড়িয়েছেন হাতি নিয়ে। দলের ভোট বর্জনের মধ্যেও তার লড়াইয়ের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘নাগরিকদের চাহিদার কারণেই আমার প্রার্থিতা। আমার জন্য নাগরিকরাও নেমেছে, একই সঙ্গে নেমেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সকল দলই আমার জন্য নেমেছে।’
তৈমূর বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এক নেতা বলে গেছেন তৈমূরকে মাঠে নামতে দেয়া যাবে না। তাদের এমন কথা আমি গায়ে মাখি না, কিন্তু এ ধরনের কথাগুলো এক প্রকার উসকানিমূলক বলেই মনে হয়। তাদের এমন কথার মাধ্যমে বিশৃঙ্খলার বীজ রোপন করা হয়।’
নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে ভীষণ আশাবাদী তৈমূর। বলেন, ‘গত ১৮ বছরে সিটির যে ব্যর্থতা, করের বোঝা, যেভাবে তারা জনগণকে ভুগিয়েছে, ইনশআল্লাহ এবার জনগণ তাদের রায় আমার পক্ষে দেবে।
‘আমি নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনে কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না। সিটি করপোরেশন হবে সবার। জনগণকে সিটি করপোরেশনের পেছনে দৌড়াতে হবে না। সিটি করপোরেশন এলাকায় এলাকায় যাবে, জনগণের কাছে যাবে।’
নির্বাচন কমিশন তার জন্য সমান সুযোগ রাখেনি বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আমার শোডাউনকে বাধাগ্রস্ত করেছে। আমিও নির্বাচন কমিশনকে মেনে নিয়েছি। কিন্তু সরকারি দলের শোডাউন নির্বাচন কমিশন বাধাগ্রস্ত করতে পারে নাই। সেই সঙ্গে ওই বিষয়ে কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি। কমিশন আশা করব, সামনে তারা সকল বিষয়গুলো দেখবে।’