স্কুলে চলছে শীতের ছুটি। নানু এসেছিলেন বেড়াতে, ফিরে যাবেন বাড়ি। হুট করেই পরিকল্পনা করে তিন বোন, নানুর সঙ্গে তারাও বাড়ি যাবে। সেখানে তাদের মামাতো ভাইবোনরা আছে। ছুটি উপভোগ করতে তাদের সঙ্গে আগে থেকেই নানা পরিকল্পনা করে নেয় তিন কন্যা।
বলতেই রাজি তাদের নানু। তিন নাতনিকে নিয়ে জুলেখা বেগম সোমবার সকালে ঢাকার ডেমরা থেকে রওনা হন। গন্তব্য মামার বাড়ি কুমিল্লার তিতাসের মোহনপুর।
নাতনি ১২ বছরের আয়েশা আক্তার, ১০ বছরের তামান্না আক্তার, ৮ বছরের মরিয়ম আক্তারকে নিয়ে জুলেখা সোমবার বেলা দেড়টার দিকে পৌঁছান মেঘনা ঘাটে। সেখানে থেকে ওঠেন ট্রলারে। তাতে ছিল আরও ৭ যাত্রী।
কাঠালিয়া নদীর অন্য প্রান্তেই তিতাসের মোহনপুর। জুলেখা ও তার নাতনিদের বহনকারী ট্রলারটি ওই নদীর চরকাঠালিয়া অংশে পৌঁছাতেই এর নিচের পাখা খুলে যায়। পানি উঠে যাত্রী নিয়েই এটি তলিয়ে যায় নদীতে।
অন্যরা সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও ডুবে যান জুলেখা ও তার নাতনিরা। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল জুলেখা, আয়েশা ও মরিয়মের মরদেহ সেদিনই উদ্ধার করে। আর মঙ্গলবার পাওয়া যায় তামান্নার মরদেহ।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সোমবারই ঘটনাস্থলে যান তিন কন্যার বাবা শেখ ফরিদ। তিনিই নিউজবাংলাকে জানান মেয়েদের নানুবাড়ি যাওয়ার গল্প।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সোমবার সকালে আমি অসুস্থ ছিলাম। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তার দেখাইতে যাই। ৩টার দিকে ফোনে খবর পাই আমার শাশুড়িসহ তিন মেয়ে পানিতে ডুইবা মইরা গেছে।
‘আমি একটা ফ্যাক্টরিতে কাজ করি। বহুত কষ্টে তিনডা মেয়েরে আমি পালন পোষণ করতাম। নিজে কষ্টে থাকলেও মাইয়াডিরে কোনো কষ্ট দিতাম না। আমার কইলজাডা ছিঁড়া যাইতাছে। সোমবার দুইডা মাইয়ার লাশ লইয়া ঢাকা গেছি। ওই দুইডারে কবরে দিয়া আইজ আরেকটার লাশ লইয়া বাড়িত যাইতেছি। আমার চেয়ে হতভাগ্য বাপ আর কে আছে। এহন কে আমারে আব্বা কইয়া ডাকব।’
মা ও তিন মেয়েকে হারিয়ে শোকে প্রায় অচেতন হয়ে শেখ ফরিদের স্ত্রী ফরিদা বেগম। যখনই জ্ঞান ফিরছে, মেয়েদের নাম ধরে ডাকছেন, আবারও জ্ঞান হারাচ্ছেন।
চালিভাঙ্গা নৌপুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আবু আবদুল্লাহ জানান, ‘নদীর ওই অংশে প্রচুর কচুরিপানা ছিল। মাছের ঘেরও ছিল। সেখানে পৌঁছালে ট্রলারের নিচে থাকা পাখা খুলে পড়ে যায়। এ সময় ট্রলারে পানি উঠে তলিয়ে যায়।
মেঘনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ছমিউদ্দিন জানান, এটি নিছকই দুর্ঘটনা। মৃতদের পরিবার থানায় কোনো অভিযোগ দেয়নি। এ কারণে কোনো মামলা হচ্ছে না।