বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বছরজুড়ে পোশাক রপ্তানিতে বিস্ময়, বেড়েছে ৩০ শতাংশ

  •    
  • ৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০১:৫৫

সার্বিক রপ্তানি পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার মধ্যে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য এভাবে চমক দেখাবে ভাবিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দ্রুত প্রণোদনার ব্যবস্থা করায় এই সাফল্য এসেছে। আমরা করোনার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আগামী দিনগুলোতে শুধু পোশাক নয়, অন্যান্য খাতেও রপ্তানি বাড়বে। ‘চলতি অর্থবছরে আমাদের রপ্তানি ৫২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে, যা হবে একটি মাইলফলক। বাংলাদেশের ৫০ বছরের বড় অর্জন।’

স্বাধীনতার পরের বছর মাত্র ৩৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। তার মধ্যে ৯০ শতাংশই এসেছিল পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে। পাটের পর প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে ছিল চা ও হিমায়িত খাদ্য। যদিও মোট রপ্তানিতে এ পণ্য দুটির অবদান ছিল ১ শতাংশের একটি বেশি।

৫০ বছর পর পণ্য রপ্তানি বাণিজ্যের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির চেহারার খোলনলচে বদলে দিয়েছে তৈরি পোশাক খাত। পাটকে হটিয়ে পণ্য রপ্তানির শীর্ষস্থান দখল করেছে পণ্যটি। পাঁচ দশকের ব্যবধানে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১০০ গুণের বেশি। ৪৫ লাখ গ্রামীণ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন, সহযোগী শিল্পের বিকাশসহ অনেক ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে এই পোশাকশিল্প।

আর বাংলাদেশের এই পোশাকশিল্প সবচেয়ে ভালো একটি বছর পার করল, ২০২১ সাল। করোনা মহামারির মধ্যেই ৫০ বছর পূর্তির এই বছরে প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি (৩৬ বিলিয়ন) ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এনেছে এই খাত, যা ২০২০ সালের চেয়ে ৩০ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি।

বর্তমান বিনিময় হার (৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) হিসাবে টাকার অঙ্কে ২০২১ সালে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি করেছেন এ খাতের রপ্তানিকারকরা, যা চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের অর্ধেক। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক বছরে পোশাক রপ্তানি থেকে এত বেশি আয় হয়নি।

পোশাক রপ্তানির এই উল্লম্ফনে বেজায় খুশি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতারা।

তারা আশা প্রকাশ করেছেন, রপ্তানির এই ‘সুবাতাস’ আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রোববার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, সদ্য শেষ হওয়া ২০২১ সালে পোশাক রপ্তানি থেকে ৩ হাজার ৫৮১ কোটি ১৮ লাখ (৩৫.৮১ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা। ২০২০ সালে এই আয়ের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৪৭ কোটি ৭ লাখ (২৭.৪৭ বিলিয়ন) ডলার।

এই হিসাবেই ২০২১ সালে আগের বছরের চেয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে ৩০ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি অর্থ দেশে এসেছে।

তবে ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পরের মাস এপ্রিলে পোশাক রপ্তানির বড় দুই বাজার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ গোটা বিশ্ব ‘স্থবির’ থাকায় বাংলাদেশের রপ্তানি তলানিতে নেমে এসেছিল। ওই মাসে মাত্র ৩৭ কোটি ৪৬ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। পরের মে মাসে কম রপ্তানি হয় ১২৩ কোটি ডলার। জুন মাস থেকে অবশ্য পোশাকসহ সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে গতি পেতে শুরু করে, যা ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল।

সবশেষ পাঁচ মাসে বড় উল্লম্ফন হয়েছে পোশাক রপ্তানিতে। আগস্ট মাসে ২০২০ সালের আগস্টের চেয়ে বেড়েছিল ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে প্রবৃদ্ধি এক লাফে বেড়ে ৪১ দশমিক ৬৬ শতাংশে ওঠে। অক্টোবরে বাড়ে ৫৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। নভেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয় ৩২ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

ডিসেম্বরে বেড়েছে ৫২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এই মাসে ৪০৪ কোটি ৪৫ লাখ (৪.০৪ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এর আগে কখনই এক মাসে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় ৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়নি।

ডিসেম্বরে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ২১৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আর ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১৮৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। বছরজুড়েই ওভেনের চেয়ে নিট থেকে বেশি বিদেশি মুদ্রা দেশে এসেছে।

সার্বিক এই রপ্তানি পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার মধ্যে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য এভাবে চমক দেখাবে ভাবিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দ্রুত প্রণোদনার ব্যবস্থা করায় এই সাফল্য এসেছে। আমরা করোনার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আগামী দিনগুলোতে শুধু পোশাক নয়, অন্যান্য খাতেও রপ্তানি বাড়বে।

তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে আমাদের রপ্তানি ৫২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে, যা হবে একটি মাইলফলক। বাংলাদেশের ৫০ বছরের বড় অর্জন।’

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য ও সেবা মিলিয়ে মোট ৫১ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ধরেছে সরকার। এর মধ্যে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৪৩ বিলিয়ন ডলার। তৈরি পোশাক থেকে আয়ের লক্ষ্য ৩৫ কোটি ১৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ছয় মাসে অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ১৯ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার ইতিমধ্যে আয় হয়েছে।

অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থাৎ জানুয়ারি-জুন সময়ে পোশাক খাত থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় হবে পূর্বাভাস দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।’

অর্থনীতির গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে এখন রপ্তানি খাত। সত্যিই অবাক করার মতো উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে এই খাতে। এই যে করোনার ধকল সামলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তাতে সবচেয়ে বড় অবদান রেখে চলেছে রপ্তানি আয় অর্থাৎ পোশাকশিল্প।’

পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান রপ্তানি আয়ের এই উল্লম্ফনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সত্যিই আমরা খুশি। এত দ্রুত করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে আমরা ঘুরে দাঁড়াব, ভাবতে পারিনি।

‘তবে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন আমাদের নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। জানি না, কী হবে। যদি ওমিক্রন সার বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে আমাদের রপ্তানি আবার থমকে যাবে। আর যদি তেমনটি না হয়, তাহলে এই ইতিবাচক ধারা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে।’

নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ওমিক্রনকে পর্যবেক্ষণ করছি। সব কিছুই নির্ভর করছে করোনার এই নতুন ধরনের ওপর। যদি ওমিক্রনের ছোবল বিশ্বে ছড়িয়ে না পড়ে, তাহলে আগামী দিনগুলোতেও রপ্তানি আয়ের এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে। একটি ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমরা অর্থবছর শেষ করতে পারব।’

এ বিভাগের আরো খবর