বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জবির ১৩ তলা ভবন শেষ হলো না ১৬ বছরেও

  •    
  • ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৮:১০

অ্যাকাডেমিক ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০৫ সালে। ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় তিনবার। চতুর্থবারের মতো মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৪ সালে। কাজ ৩০ শতাংশ বাকি থাকতেই ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সেই মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পঞ্চম দফা বাড়ানো মেয়াদেও শেষ হয়নি কাজ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন অ্যাকাডেমিক ভবনের কাজ শেষ হয়েও শেষ হচ্ছে না। একে একে পাঁচবার মেয়াদ বাড়িয়ে ১৬ বছরেও কাজ পুরোপুরি শেষ করা সম্ভব হয়নি।

ভবনটির পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক লোড নেয়ার অক্ষমতা, নিম্নমানের লিফট ও রঙের হালকা প্রলেপ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে এখনও বেশ কিছু কাজ বাকি। ভবনের বাইরের দিকে পুরোপুরি রঙের প্রলেপও দেয়া হয়নি।

অবকাঠামোসহ শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষের সংকট সমাধানে কাজ শুরু হয় নতুন অ্যাকাডেমিক ভবনের। কাজের মেয়াদ শেষ হলেও ভবনটি কবে হস্তান্তর করা সম্ভব হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কেউ।

ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০৫ সালে। ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় তিনবার। ২০১৪ সালে চতুর্থবারের মতো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। প্রকল্পের কাজ ৩০ শতাংশ বাকি থাকতেই ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সেই মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পঞ্চম দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। এই মেয়াদে ৩১ ডিসেম্বরও শেষ হয়নি কাজ।

১৩ তলা এই ভবনের প্রতিটি ফ্লোরের কাজ শেষ হলেও পুরোপুরি ব্যবহার শুরু করতে পারেননি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

নতুন এই ভবনের ৭ থেকে ১৩ তলা পর্যন্ত টাইলস লাগানো ও ভেতরে রং করা হলেও বাইরের দিকে রঙের আরেকটি প্রলেপ বাকি রয়ে গেছে।

ভবন নির্মাণের প্রয়োজনে যে খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছিল, সেগুলোও মেরামত হয়নি। অল্প বৃষ্টিতেই ভবনটির ছাদে পানি জমে থাকে।

ভবনটির নবমতলা পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগের স্থায়ী শ্রেণিকক্ষ ও অফিস রয়েছে। করোনা-পরবর্তী সময়ে দশমতলায় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বেশ কয়েকটি বিভাগের ক্লাসরুম দেয়া হয়েছে। এই তলাতেই গবেষণা পরিচালকের অফিসসহ প্রায় অর্ধেক ফ্লোর ব্যবহার করা হচ্ছে।

১১, ১২ ও ১৩ তলা সম্পূর্ণ ফাঁকা। এ ছাড়া ১০ থেকে ১৩ তলা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগের তার এলোমেলোভাবে পড়ে আছে বিভিন্ন কক্ষ ও বারান্দায়। নিরাপত্তাবলয়ের ব্যবস্থাও করা হয়নি।

নতুন ভবনে শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন তিনটি লিফট স্থাপন করা হয়েছে। এগুলোর মান নিয়ে আছে প্রশ্ন। গত জুনে লিফট বসানো শেষ হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তা এখনও বুঝিয়ে দেয়া হয়নি।

অ্যাকাডেমিক ভবনের ভেতর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিদ্যুতের তার। এমন অনেক কাজই শেষ হয়নি। ছবি: নিউজবাংলা

ভবনটির কাজের বিষয়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড দেশ উন্নয়ন লিমিটেডের (জেভি) প্রধান প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম দিকে ভবনের কিছু ত্রুটি ও জটিলতা থাকায় কাজ দীর্ঘায়িত হয়েছে। এখন আমাদের কাজ শেষ। সাবস্টেশনের সঙ্গে ইলেকট্রিক্যাল লাইন বাকি। কিন্তু সাবস্টেশন যেখানে বসবে সেই কক্ষের টেন্ডারই করা হয়নি। এর দায় আমাদের নয়।’

প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ফায়ার হাউসের কাজটা বাকি আছে। ওটা আমাদের শিডিউলে নেই। আরডিবির টেন্ডার করার কথা ছিল। কিন্তু পরে ওটা আরডিবিতে পাস হয়নি। কিছুদিন আগে আমাদের একটি জায়গা দেখিয়ে দেয়া হয়েছে। টেন্ডারের বাইরে একটা কক্ষ করতে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। এটা বেসমেন্টে হচ্ছে। আমাদের এখন রঙের কাজ চলছে। ১০ দিনের মধ্যেই এ কাজ শেষ হয়ে যাবে।’

মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাজটা শেষ হয়নি মূলত ফান্ডের জন্য। আমরা সাড়ে ৪ কোটি টাকা পাব। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে টাকা দেবে। সেই টাকা শিক্ষা অধিদপ্তর আমাদের কোম্পানিকে পরিশোধ করবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি খোঁজখবর রাখি না। এটা পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের কাজ। তারাই এ বিষয়ে বলতে পারবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের পরিচালক সাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত জানি না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিয়ে দিয়েছি। এখন তারা জানে। এ বিষয়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়াররা বিস্তারিত বলতে পারবেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী জানান, নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন হস্তান্তরের জন্য এখনও চিঠিই দেয়া হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাজেট আছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা না দেয়ারও তো কারণ লাগবে। তারা কাজ শেষ করতে পারেনি। তাই টাকা দেয়া হয়নি।’

প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘বর্তমানে বিদ্যুৎ সরবরাহের যে ব্যবস্থা রয়েছে সেই লোড ভবনে সংযোজিত তারগুলো নিতে পারছে না। শীতকালে কোনো সমস্যা না হলেও গ্রীষ্মে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়। এ জন্য দ্রুত একটি সাবস্টেশন স্থাপন করা জরুরি। নইলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও স্পেস বরাদ্দ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগামী ৬ জানুয়ারি স্পেস কমিটির মিটিং। তাতে উপাচার্যসহ কমিটির সব সদস্য থাকবেন। স্পেস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি একা এর দায় নিতে চাই না। তবে সবাই শিফট হবে। চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমার কাজ আমি গুছিয়ে নিয়েছি।’

বিদ্যুৎ লাইনের সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন শীতকাল। তাই এ বিষয় নিয়ে আপাতত ভাবছি না। আগে স্পেস সমস্যার সমাধান হোক। বিদ্যুতের কাজ আমরা পরে করে নেব।’

‘সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের চারতলার ওপরেও আমরা একটি তলা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছি। তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।’

সার্বিক বিষয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হককে জানালে বিষয়টি নিয়ে তিনি আলোচনা করবেন বলে জানান।

এ বিভাগের আরো খবর