করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেই শেষ হয়ে গেল আরও একটি বছর। এই বছরেই পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করেছে বাংলাদেশ, পেয়েছে এলডিসি থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত ঘোষণা।
সব মিলিয়ে কেমন গেল ২০২১ সাল? কেমন ছিল অর্থনীতির হালচাল? ব্যবসা-বাণিজ্য চলেছে কেমন? কেমন যাবে নতুন বছর ২০২২? সামনে চ্যালেঞ্জগুলোই বা কী?
এসবের চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন সরকারের নীতিনির্ধারক, অর্থনীতির গবেষক ও ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তারা।
মহামারির ধকল সামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক গতিতে ফেরায় স্বস্তির কথা শুনিয়েছেন তারা। প্রধান সূচকগুলো ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহে কিছুটা ধীরগতি থাকলেও আমদানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রপ্তানি আয়। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় আছে দীর্ঘদিন ধরে। মূল্যস্ফীতি চোখ রাঙালেও এখনও সহনীয় পর্যায়েই আছে।
ভয় এখন শুধু করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনে। এটাকে সামাল দেয়া গেলে আর পেছনে তাকাতে হবে না; দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ- এমনটাই মনে করেন সবাই।
২০২২ সাল হবে বাংলাদেশের বাঁক বদলের বছর; একটি বিশেষ বছর। নতুন উদ্যমে ৫০ বছরের সাহসী অর্জনকে সাক্ষী করে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া শুরু করার বছর। এই বছরের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে তিনটি বড় উন্নয়ন প্রকল্প চালু হয়ে যাবে।
২০২২ সালে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে; চলবে ট্রেনও। একই সময় রাজধানীর উত্তর থেকে দক্ষিণে ছুটবে মেট্রোরেল। দেশের দক্ষিণ-পূর্বের বন্দরনগরী চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশের সুড়ঙ্গপথও চালু হয়ে যাবে ততদিনে। এই টানেল কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে।
দেশের অন্যতম বড় প্রকল্প পদ্মা সেতুতে কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা। ফাইল ছবি
বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় একক অবকাঠামো প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের কাজ প্রায় শেষ হয়ে যাবে এই বছরে; ২০২৩ সাল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় ৩০ হাজার একর জমিতে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীসহ আরও কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।
ফলে ২০২৩ সালে অবকাঠামো সামর্থ্যে ভিন্ন এক বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে। তবে বাংলাদেশের বিনিয়োগে স্থবিরতা এখনও রয়েই গেছে। ইতিবাচক খবরে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে বিনিয়োগ বাড়ানোর দিকে সরকারকে বেশি নজর দিতে পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা।
রাজনৈতিক স্থিতির সঙ্গে মহামারির খাদ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০২১ সাল। কিন্তু শুরুতেই হোঁচট: করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউকে সঙ্গী করে ২০২১ সালে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। ওলটপালট হয়ে যায় সব হিসাব-নিকাশ। তবে বছরের শেষ দিকে এসে করোনার ধকল কাটিয়ে স্বাভাবিক গতিতে ফিরে বেশ মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি।
আর এ কারণেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) পূর্ভাবাস নিয়ে সব সময় ‘রক্ষণশীল’ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আগের হিসাব থেকে সরে এসে বলেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন অবশ্য এই ঘুরে দাঁড়ানোর পুরো কৃতিত্ব দিয়েছেন এ দেশের তৃণমূলের অদম্য মানুষকে।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে অদ্ভুত এক অন্তর্নিহিত শক্তি আছে। বিশেষ করে তৃণমূলের অদম্য মানুষগুলো কোনো কিছুতেই দমে যায় না। কোভিড-১৯ মোকাবিলা তারই প্রমাণ। সরকারের নীতিসহায়তায় অল্প সময়ের মধ্যে বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশটির মানুষ।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমানও আশার কথা শুনিয়ে বলেছেন, নতুন বছর হবে সময়কে অতিক্রম করার, দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যাওয়ার বছর।
কিন্তু স্বস্তি নেই; আছে অনেক চ্যালেঞ্জ। করোনার নতুন ধরনের ভয় নিয়েই শুরু হচ্ছে নতুন বছর ২০২২।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ একটাই; ওমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকি। ওমিক্রন ভালোভাবে সামাল দিতে না পারলে অর্থনীতি ফের নাজুক অবস্থায় পড়ে যেতে পারে। সেই প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে।’
তবে আশার কথা হলো, পৌনে দুই বছরের মহামারি যতটা বিপদে বাংলাদেশকে ফেলবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, সরকারের সময়োচিত বিভিন্ন পদক্ষেপে তা অনেক ক্ষেত্রে এড়ানো গেছে। দেড় লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বড় ভূমিকা রেখেছে।
বিদায়ী বছরের মূল্যায়ন করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই মহামারিতে পৃথিবীর যেকোনো দেশের চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। সে কারণেই বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ সবাই আমাদের প্রশংসা করছে। ২০২২ সাল থেকে শুরু হবে আমাদের নতুন পথচলা।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মহামারির মধ্যেও দেশের মানুষ ভালো আছে। ভালো আছে অর্থনীতি। নতুন বছরে আরও ভালো হবে।’
বছরজুড়ে রপ্তানির পালে হাওয়া
বিদায়ী বছরে অর্থনীতির সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় ছিল রপ্তানি খাত। মহামারির মধ্যেও বেড়ে চলেছে এই সূচক। করোনা পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে গতি আরও বেড়েছে। মূলত পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করেই বছরজুড়ে রপ্তানির পালে হাওয়া লেগেছিল।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) আর্থিক বছর ধরে রপ্তানি আয়ের তথ্য প্রকাশ করে। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে (২০২০ সালের ছয় মাস, জুলাই-ডিসেম্বর এবং ২০২১ সালের ছয় মাস, জানুয়ারি-জুন) বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৩ হাজার ৮৭৬ কোটি (৩৮.৭৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক থেকেই এসেছে ৮২ শতাংশের মতো।
মহামারির সময়েও বেড়েছে রপ্তানি। ফাইল ছবি
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের পাঁচ মাসের তথ্য পাওয়া গেছে। তাতে দেখা যায়, জুলাই-নভেম্বর সময়ে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে যদি ৪ বিলিয়ন ডলার আসে, তাহলে সব মিলিয়ে ২০২১ সালে মোট রপ্তানি আয় ৪৫ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে, যা হবে ক্যালেন্ডার বছরের হিসাবে এযাবৎকালের সবচেয়ে বেশি।
পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সহসভাপতি সহিদুল্লাহ আজিম নিউজবাংলাকে বলেছেন, ‘ভয় এখন আমাদের একটাই– ওমিক্রন। যদি এটা তেমন বাধা হয়ে না দেখা দেয়, তাহলে আগামী চার-পাঁচ বছর রপ্তানি আয়ের এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে। কেননা, এখন আমরা প্রচুর অর্ডার পাচ্ছি; দামও বেশ ভালো পাচ্ছি।’
আমদানিতেও জোয়ার বইছে
করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমার পর দেশে পণ্য আমদানির বন্যা বইতে শুরু করেছে। প্রতি মাসেই রেকর্ড হচ্ছে। গত অর্থবছরে ৬৫ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৯ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি।
চলতি অর্থবছরে চার মাসের (জুলাই-অক্টোবর) তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, এই চার মাসে ২৫ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৫২ শতাংশ বেশি।
ঋণপত্র বা এলসি খোলার ক্ষেত্রে আরও উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। প্রতি মাসেই রেকর্ড হচ্ছে। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে ৮১০ কোটি ৭০ লাখ (৮. ১০ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা।
বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এক মাসে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে এত বিপুল অঙ্কের বিদেশি মুদ্রা খরচ দেখা যায়নি।
এর আগে গত অক্টোবর মাসে ৭৪২ কোটি ১৬ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল; যা ছিল এক মাসের হিসাবে সর্বোচ্চ।
সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ৩৫ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন (৩ হাজার ৫৪২ কোটি ৯২ লাখ) ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৩ লাখ ৩ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। এই অঙ্ক চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের অর্ধেকেরও বেশি।
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরের একই সময়ে ২৩ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই পাঁচ মাসে দেশে এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে ৫৩ দশমিক ২৩ শতাংশ।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এই পাঁচ মাসে গড়ে ৭ দশমিক ০৮ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে দেশে।
হোঁচটের পরও ২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স
গত কয়েক মাস ধরে টানা কমলেও বিদায়ী বছরে ২ হাজার ২০০ কোটি (২২ বিলিয়ন) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাবে বাংলাদেশ, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে যে কোনো বছরের চেয়ে বেশি।
এর আগে মহামারির মধ্যেও এক বছরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালে; ২১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, ডিসেম্বর মাসের ২৭ দিনে (১ থেকে ২৭ ডিসেম্বর) ১৪৩ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সব মিলিয়ে শেষ হতে যাওয়া ২০২১ সালে ২ হাজার ১৮৭ কোটি ১৮ লাখ (২১.৮৭ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন তারা।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকেই আসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স। ফাইল ছবি
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন, ডিসেম্বর মাসের শেষ চার দিনে (২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর) কমপক্ষে ২০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসবে দেশে। তা হলেই অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচকের অঙ্ক ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমান বিনিময় হার (৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা।
২০১৯ সালে ১৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।
অর্থবছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত (প্রায় ৬ মাস) ১ হাজার ৩ কোটি ৮০ লাখ (১০.০৩ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ১ হাজার ২৬৬ কোটি ৬০ লাখ (১২.৬৬ বিলিয়ন) ডলার।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই ছয় মাসে দেশে রেমিট্যান্স কমেছে ২০ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
তবে নতুন বছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ ফের বাড়বে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মহামারির মধ্যে একটা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে রেমিট্যান্সে উল্লম্ফন হয়েছিল। যার কাছে যা জমানো টাকা ছিল, পরিবার-পরিজনের প্রয়োজনে সব দেশে পাঠিয়ে দিয়েছিল। করোনায় সব কিছু বন্ধ থাকায় অবৈধ পথে (হুন্ডি) কোনো রেমিট্যান্স আসেনি; সব এসেছিল ব্যাংকিং চ্যানেলে। সে কারণেই গত অর্থবছরে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
‘এরই মধ্যে একটি সুসংবাদ এসেছে। তিন বছর পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়েছে; ফের শ্রমিক যাবে সেখানে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি চাঙা হয়েছে। সেখান থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসবে। সব মিলিয়ে রেমিট্যান্সে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমার বিশ্বাস, জানুয়ারি থেকেই বেশি রেমিট্যান্স দেশে আসবে।’
রাজস্ব আদায়ের গতিও ভালো
চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ১ লাখ ২৬৭ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি।
গত অর্থবছরে মোট ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৮১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছিল এনবিআর, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বেশি।
মূল্যস্ফীতি নিয়েই বড় উদ্বেগ
জানুয়ারিতে ৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে বছর শুরু হয়। পরের ছয় মাস কখনও বেড়েছে, কখনও কমেছে। গত জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। পরের পাঁচ মাস মূল্যস্ফীতি টানা বেড়েছে। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
বিশ্বজুড়েই মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। করোনার ধকল কাটিয়ে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এর ফলে মানুষের হাতে টাকা যাচ্ছে। বাংলাদেশেও অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ায় দেশেও ডিজেল-কেরোসিনের দাম বেড়েছে। ফলে পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে এর প্রভাব পড়েছে। অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। করোনার কারণে কাজ হারানো মানুষও কাজ পেতে শুরু করেছেন। এসব কারণে মূল্যস্ফীতির পারদ চড়ছে।
মূল্যস্ফীতিতে হোঁচট খেয়েছে দেশ। ফাইল ছবি
অর্থনীতির গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতিই এখন বড় উদ্বেগ। বেশ কয়েক বছর ধরে এই সূচক সহনীয় ছিল। এটার লাগাম টেনে ধরাই এখন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে আমি মনে করি।’
জিডিপিতে হোঁচট
ধারাবাহিক অগ্রগতির পথ ধরে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি (অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি) অর্জন করা বাংলাদেশ করোনার ছোবলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে নেমে আসে। ২০২০২১ অর্থবছরে তা খানিকটা বেড়ে ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশে উঠেছে বলে প্রাথমিক হিসাব দিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছে সরকার।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জোর দিয়ে বলছেন, ‘অর্থনীতি করোনার আগের আবস্থায় ফিরে আসছে। এবার লক্ষ্য অবশ্যই পূরণ হবে।’
বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। আইএমএফ বলছে, প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ । আর এডিবি বলছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ অর্জিত হবে।
মাথাপিছু আয় বেড়েছে
নতুন ভিত্তিবছরের (২০১৫-১৬) হিসাবে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ ডলার থেকে বেড়ে ২ হাজার ৫৫৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে; বেড়েছে ৩২৭ ডলার। ডলারের বর্তমান বাজার অনুযায়ী, মাথাপিছু আয় বেড়ে গেছে ২৯ হাজার ৪৩০ টাকা।
তবে মনে রাখতে হবে, মাথাপিছু আয় কোনো ব্যক্তির একক আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরের পাশাপাশি রেমিট্যান্সসহ যত আয় হয়, তা দেশের মোট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে মাথাপিছু ভাগ করে দেওয়া হয়।
দুই অঙ্কের ঘরে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি
তলানিতে নামার পর বেশ ভালোই গতিতে ফিরেছে দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ। টানা ছয় মাস ধরে বাড়তে বাড়তে দুই বছর পর নভেম্বরে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক দুই অঙ্কের (ডাবল ডিজিট, ১০ শতাংশের ওপরে) ঘরে পৌঁছে করোনা মহামারির আগের অবস্থায় ফিরেছে।
নভেম্বর মাসে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি অক্টোবরের চেয়ে দশমিক ৬৭ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ১০ দশমিক ১১ শতাংশে উঠেছে।
এর অর্থ হলো, গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে এই নভেম্বরে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি ঋণ পেয়েছেন।
আগের মাস অক্টোবরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে হয়েছিল ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
করোনা মহামারির ধাক্কায় কমতে কমতে গত মে মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি একেবারে তলানি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে আসে। এর পর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে নভেম্বরে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছে।
তবে এখনও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক নিচে রয়ে গেছে এই সূচক।
লেনদেন ভারসাম্যে বড় ঘাটতি
বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের চার মাসেই (জুলাই-অক্টোবর) এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৭৭ কোটি (৪.৭৭ বিলিয়ন) ডলার।
অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ৩৬৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।
আমদানি বাড়ায় আর রেমিট্যান্স কমায় এই ঘাটতি বলে জানিয়েছেন আহসান মনসুর।
বিদেশি ঋণে স্বস্তিতে সরকার
বিদেশি ঋণে স্বস্তিতে রয়েছে সরকার। গত দুই অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঋণসহায়তা পাচ্ছে সরকার। এতে করোনা মহামারিকালেও সরকারকে অর্থসংকটে পড়তে হয়নি।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বাংলাদেশের অনুকূলে ৩০৮ কোটি ৯৫ লাখ (৩.০৯ বিলিয়ন) ডলার ছাড় করেছে দাতারা। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) এই অর্থের পরিমাণ ২৬ হাজার ৫১২ কোটি টাকা।
গত ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ১৯৯ কোটি ৭৯ লাখ (১.৯৯ বিলিয়ন) ডলার ছাড় করেছিল দাতারা। এ হিসাবে এই চার মাসে বিদেশি ঋণসহায়তা বেড়েছে ৫৫ শতাংশ।
সমৃদ্ধির স্বীকৃতি পাওয়ার বছর
ছয় বছর আগে থেকেই প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হওয়ার পথে এগিয়ে যাবে। ২০১৫ সালে প্রথম এই প্রত্যাশার পারদ ওপরে উঠতে শুরু করে। কিন্তু সে বছর তিনটি সূচকের মধ্যে একটিতে মান অর্জন করে বাংলাদেশ। অর্থাৎ আশায় গুড়ে বালি।
তিন বছর পর ২০১৮ সালে জাতিসংঘের পরবর্তী মূল্যায়নে তিনটি সূচকের সব কটিতেই মান অর্জন করে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রাথমিক সুপারিশ পায় বাংলাদেশ। এরপর আরও তিন বছর কেটে যায়। অবশেষে ২০২১ সালের শুরুর দিকে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করে এলডিসি থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ করে। তারা ঠিক করে দেয়, ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে পুরোপুরি বের হয়ে যাবে বাংলাদেশ।
গত নভেম্বর মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ বাংলাদেশ সম্পর্কে সিডিপির সুপারিশ গ্রহণ করে। স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্বীকৃতি হলো এলডিসি থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ। অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার আরেক ধাপ উত্তরণ। আর্থসামাজিক অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে ২০২১ সালেই অন্যতম বড় স্বীকৃতি মিলল। এটি সমৃদ্ধির স্বীকৃতি।
এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থান কোথায় বা এই মুহূর্তে কোন কোন দেশের কাতারে আছে, তা দেখা যাক। সোজা কথায় উগান্ডা, কিরিবাতি, হাইতি, টুভালু, জিবুতি, গিনির মতো দেশের সমতুল্য হিসেবে বিবেচিত হয় বাংলাদেশ। এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটলে ২০২৬ সালে চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামের মতো দেশের কাতারে থাকবে বাংলাদেশ।
আরেক সুখবর
বছরের শেষ দিকে এসে আরেকটা সুখবর পেল বাংলাদেশ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) বলেছে, অর্থনৈতিক বিকাশের চলতি ধারা বহাল থাকলে ২০৩৬ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৪তম বড় অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ৪২তম।
সিইবিআর তাদের সবশেষ প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দিয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২২’ নামের এই প্রতিবেদনটি ২৬ ডিসেম্বর প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
এতে মূলত সামনের বছর এবং আগামী ১৫ বছরে বিশ্বের কোনো দেশের অর্থনীতি কী হারে বাড়বে, তারই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সিইবিআর প্রতি বছর এই রিপোর্ট প্রকাশ করে।
সংস্থাটি বলছে, ১৫ বছর পর ২০৩৬ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার আড়াই গুণের বেশি বেড়ে ৮৮৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার হবে। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৭৩ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি বা জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) আকার ৩২৫ বিলিয়ন ডলার।
প্রতি বছর বিশ্ব অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ প্রকাশ করে সিইবিআর। এবার ১৯১টি দেশের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ তুলে ধরে তারা। এ বছর বাংলাদেশের বিষয়ে তারা বলছে, কোভিড-১৯ মহামারি সত্ত্বেও এ বছর বাংলাদেশের অর্থনীতি সংকুচিত হবে না।
সিইবিআর বলছে, চলতি বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ৪২তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে হবে ৪১তম। আর অর্থনীতির এই গতিশীলতা ধরে রাখা গেলে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান হবে ৩৪তম, ২০৩১ সালে ২৯তম এবং ২০৩৬ সালে হবে ২৪তম।
২০২২ থেকে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ১৯১টি দেশের অর্থনীতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই তালিকা প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।
নতুন বছরে পরামর্শ
গত বছর এবং নতুন বছরকে নিয়ে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশের সার্বিক অর্থনীতি সামাল দেওয়া গেছে। কোভিডের কারণে অর্থনীতি ভেঙে পড়েনি। কিছুটা মচকে গেছে। মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। জিনিসপত্রের দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া আছে। অবশ্য বিশ্বজুড়েই এখন মূল্যস্ফীতি বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারে তেল ও চালের দাম চড়া। এর প্রভাব বাংলাদেশেও কিছুদিন থাকবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি সব সময় খারাপ।
‘অন্যদিকে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে অসামঞ্জস্য আছে। আমদানি বেশি হচ্ছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ যা বেড়েছিল, তা থাকেনি। বিদেশে শ্রমিক কম যাওয়ায় সামনের দিনগুলোতেও রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও কমতে পারে।
‘মুদ্রা বিনিময় হারে অসামঞ্জস্য আছে। ডলারের মূল্য ব্যাংকে ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। আর খোলাবাজারে তা ৯১-৯২ টাকা। পার্থক্য অনেক বেশি। এতে ব্যাংক ব্যবস্থায় অর্থের স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হতে পারে।’
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বাজেট ব্যবস্থাপনা নিয়েও অস্বস্তিতে আছে সরকার। অবশ্য রাজস্ব আদায় কম হলে সরকার খরচ কমিয়ে সামাল দিতে পারে। রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি করোনার আগের পর্যায়ে চলে এসেছে। কিন্তু লক্ষ্য বেশি থাকায় এবারও কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে রাজস্ব অর্জিত হবে না।
‘ফলে সরকারকে উন্নয়ন খরচ কমাতেই হবে, যা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। উন্নয়ন খরচ কমালে মানুষের কাছে টাকার প্রবাহ কমবে। এ ছাড়া সামনে ওমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকি আছে। ওমিক্রন ভালোভাবে সামাল দিতে না পারলে সামনে অর্থনীতি নাজুক অবস্থায় পড়ে যেতে পারে। সেই প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে।’