জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ কর্মীদের দফায় দফায় হামলার অভিযোগ এনে ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
হামলায় ওই বিভাগের সাজেদুল ইসলাম সুকর্ণ, মাহমুদুল হাসান ও হাবিবুল্লাহ মেজবুল্লাহ আকাশ নামে তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা চেয়ে কোতোয়ালি থানায় এই জিডি করেন আহত শিক্ষার্থীরা।
জিডিতে তারা লেখেন, ‘আমাদের ব্যাচের মেসেঞ্জার গ্রুপে এক মেয়ে শিক্ষার্থীকে নিয়ে আয়মান সাজিদ কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করলে আমরা ব্যাচের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে আমাদের ওপর হামলা চালায়।
‘হামলাকারীরা হলো অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মীর মুকিত, মনোবিজ্ঞান বিভাগের মুনজির, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের আসিফ, ইতিহাস বিভাগের সজিব, অর্থনীতি বিভাগের সোহান, তমালসহ অজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয়জন।’
জিডিতে বলা হয়, হামলাকারীরা বুধবার বেলা অনুমান ১টার সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বর ও মূল গেটের সামনে আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ কিলঘুষি ও লাথি দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের সহপাঠীরা এগিয়ে এলে ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদেরও হুমকি ও ভয়ভীতি দেয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিকতা বিভাগের ১৩ ব্যাচের মেসেঞ্জার গ্রুপে এক মেয়ে শিক্ষার্থী ও তার স্বামীকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন ছাত্রলীগ কর্মী সাজিদ। ব্যাচের সবাই সাজিদকে পরদিন বুধবার পরীক্ষা শেষে সবার সামনে ক্ষমা চাইতে বলেন।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বরে শিক্ষার্থীরা এলে সাজিদ ও রাসেল জবি ছাত্রলীগের সম্মেলন কমিটির আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলাম টিটনের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মী নিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।
হামলার ঘটনায় প্রক্টর অফিসে তারা লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর হামলাকারী রাসেল, সাজিদ ও তৈয়ব আলী পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, সুকর্ণ ও মাহমুদ মেসেঞ্জার গ্রুপে মারধর করার হুমকি দেয়।
তৈয়ব আলীর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি প্রক্টরকে বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাসে আশরাফ ভাইয়ের দল লিড করি। আমাদের ছোট ভাইরা মার খেয়েছে। তাই আমি অভিযোগ দিতে এসেছি।’
প্রক্টর অফিস থেকে বের হওয়ার পর ছাত্রলীগের কর্মীরা আবার হামলা করে।
এ বিষয়ে জিডিতে অভিযুক্ত আয়মান সাজিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে সবকিছু মিটে গেছে। মীমাংসা হয়ে যাবে।’
জিডির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরাও একটা জিডি করব, হত্যার হুমকি নিয়ে।’
জিডির বিষয়ে সদরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) নাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কাগজপত্র পেয়েছি। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দেখছি আমরা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোস্তফা কামাল নিউজবাংলাকে জানান, ‘আমরা দুটি অভিযোগ ও জিডির একটি কপি পেয়েছি। ঘটনার ভিডিও এবং সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মেয়ে শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের ব্যাচের তুচ্ছ ঘটনা মীমাংসা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমাদেরই বন্ধু রাসেল ও সাজিদের প্ররোচনায় ছাত্রলীগের অনুসারী ছেলেরা এসে আমাদের বন্ধুদের ওপরই হামলা করে।
‘প্রথমবার মারার পর মনে করলাম ঘটনা ওখানেই শেষ হবে। কিন্তু একটু পরে যখন আমরা ছেলেমেয়ে সবাই একসঙ্গে ছিলাম, তখন আমাদের বন্ধুদের নির্মমভাবে আবার মারতে থাকে। আমাদের কাছে মারার ভিডিও ফুটেজও আছে।’