বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সই জাল করে সমাজসেবার অফিস সহায়কের ‘প্রতারণা’

  •    
  • ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৭:০৯

উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের তিনতেলীর চরের একাধিক বাসিন্দা জানান, রৌমারী উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সাবেক অফিস সহায়ক তানজিনার বাড়িও একই এলাকায়। বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার কথা বলে প্রায় ৪ বছর আগে তানজিনা স্বজনদের সহায়তায় তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৪-৬ হাজার করে টাকা নেন।

বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার কথা বলে প্রায় ৪ বছর ধরে গ্রামের অসহায় মানুষের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে জনপ্রতি ৪-৫ হাজার টাকা। নানা অজুহাতে বছর দুই ঘোরানোর পর আসে করোনা মহামারি। এরপর মহামারির অজুহাতে আরও দেড় বছর ঘোরানো হয়।

তারপর চাপের মুখে মাস ছয়েক আগে কয়েকজনকে দেয়া হয় ভাতার কার্ড। তবে ইউপি সদস্যদের কাছে গেলে জানা যায় কার্ডগুলো জাল। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে তৈরি করা হয়েছে এসব কার্ড।

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সাবেক অফিস সহায়ক তানজিনা ইয়াসমিন তানিয়ার বিরুদ্ধে উঠেছে এসব অভিযোগ। প্রাথমিক তদন্তেও পাওয়া গেছে অভিযোগের সত্যতা।

তবে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে করা হয়েছে বদলি। তানজিনাকে গত মাসে কুড়িগ্রাম জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে বদলি করার পর বিষয়টি সামনে এসেছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তানজিনাকে উপজেলা থেকে বদলি করায় এখন তারা টাকা ফেরত পাবেন কি না তা নিয়ে তৈরি হয়েছে আশঙ্কা।

তানজিনা নিজেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করার বিষয়টি নিউজবাংলার কাছে স্বীকার করেছেন। তবে ভাতার জন্য টাকা নেয়ার বিষয়ে তার দাবি, পারিবারিক ঋণের দায় তার ওপর চাপানো হয়েছে।

উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের তিনতেলীর চরের বাসিন্দা পানফুল বেওয়া, মহিরন বেওয়া, জহর উদ্দিসহ বেশ কয়েকজন জানান, তানজিনার বাড়িও একই এলাকায়। বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার কথা বলে প্রায় ৪ বছর আগে তানজিনা স্বজনদের সহায়তায় তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৪-৬ হাজার করে টাকা নেন।

ভাতা সুবিধার লোভে পড়ে তাদের কেউ ঋণ করে, কেউ বাড়ির গরু, ছাগল বিক্রি করে ওই টাকা দেন। তবে এত বছরেও ভাতা পাননি তারা। তানজিনাও টাকা ফেরত দেননি।

মাস ছয়েক আগে টাকার জন্য চাপ দিলে তানজিনা উপজেলার সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা আরিফুল ইসলামের স্বাক্ষর জাল করে ভাতা বই দেন অনেককে।

বিষয়টি জানাজানি হলে ভুক্তভোগী ও অফিসের অন্য কর্মচারীরা তানজিনার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। তবে তানজিনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বদলে তাকে কুড়িগ্রাম সমাজসেবা অফিসে বদলি করা হয়।

পানফুল বেওয়া নামে একজন বলেন, ‘প্রায় ৪ বছর আগে তানজিনা মামিশাশুড়ি ফজিরনের মাধ্যমে সাড়ে ৫ হাজার টাকা নিছে বিধবা ভাতা করে দেবার নামে। এখনও সেই ভাতা হয় নাই।

‘চাপ দিলে তানজিনা একটা ভাতার বই দেয়। গ্রামের এক প্রফেসার (অধ্যাপক) বইটা দেখে কয়, এটা তো জাল। এলা ভাতা হয়ও নাই টাকাও ফেরত দেয় নাই।’

মহিরন বেওয়া বলেন, ‘সুদের ওপর সাড়ে পাঁচ হাজার ট্যাহা আনি দিছি। আজ দেয়, কাইল দেয়। একডা কার্ড দেইল, সেটাও জাল। এলা ট্যাহা না দিয়া তানজিনা ভাগছে।’

জহর উদ্দি বলেন, ‘আমার পঙ্গু ভাতা দেবার কথা বলে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা নিছে। সুদের পর ট্যাহা আনিয়া দিলেও কোনো কার্ড পাই নাই। ছাগল বেচে সেই সুদের ট্যাহা শোধ করি। আজও ট্যাহা দেয় নাই তানজিনা।’

ভাতার টাকা তুলে দেয়ায় বেশ কয়েকজন কমিশন পেয়েছেন বলেও জানা গেছে।

রৌমারী সদর ইউনিয়নের চর বামনের চরের বাসিন্দা শুকুর আলী বলেন, ‘আমি ৪৪ হাজার টাকা ভাতার জন্য তুলে তানজিনা আপাকে দেই। সেখান থেকে আমাকে ৮ হাজার টাকা কমিশন দেয়। তিনি ৬টা জাল সই কার্ড দিলে সেটা মেম্বার ধরেন।’

ভাতার নামে প্রতারণা ছাড়াও তানজিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে চাকরি দেয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার।

সাজেদুল ইসলাম নামে একজন বলেন, ‘তানজিনা আপা আমার স্ত্রীকে প্রাইমারিতে চাকরি নিয়ে দেবেন বলে ৫ লাখ টাকা নেন। আমি জমি বন্ধক রেখে, হালের গরু বিক্রি করে সেই টাকা দেই। পরে আমার স্ত্রীর কোনো চাকরি দেয়নি।

‘অনেক কষ্ট করে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা তুলতে পেরেছি। এখনও বাকি আছে ২০ হাজার টাকা। সেটা না দিয়েই সে বদলি হয়ে চলে গেছে।’

ইউনিয়নের সমাজকর্মী আব্দুল মান্নান জানান, প্রাথমিকভাবে তানজিনার নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বদলি এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছেন রৌমারী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা।

রৌমারীর সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমার স্বাক্ষর জাল করে সে প্রতারণা করেছে। বিষয়টি জানার পর তাকে শোকজ করা হয়। সে ভুল স্বীকার করে। এরপর আমি বদলি হয়ে চলে আসি।’

সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক রোকোনুল ইসলাম লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, তদন্ত চলছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিভাগের আরো খবর