ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এত মানুষের হতাহতের জন্য লঞ্চচালক, মাস্টার ও স্টাফদের গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন বেঁচে ফেরা যাত্রীরা।
তাদের অনেকেই অভিযোগ করেন, সেদিন রাতে লঞ্চের দুটি ইঞ্জিনের একটিতে আগুন লাগলেও গুরুত্ব দেননি তারা।
বরং ‘আগুন নিভে যাবে’ বলে ওই পরিস্থিতিতেই যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন লঞ্চের স্টাফরা। ততক্ষণে আগুনে অঙ্গার হয়েছে যায় এত সংখ্যক মানুষ।
সেই রাতে লঞ্চে ছিলেন বরগুনা সদরের বাসিন্দা মান্না আহম্মেদ। সদরঘাট থেকে ছাড়ার পরপরই লঞ্চের ইঞ্জিনের শব্দ স্বাভাবিক ছিল না দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমি লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে ডেকেছিলাম। নিজে ইঞ্জিন রুমে গিয়ে কয়েকবার দেখেছিও। ভেতরে কিছু বোঝা যাচ্ছিল না, তবে ভয়ংকর শব্দ হচ্ছিল।
পুড়ে যাওয়া লঞ্চ এমভি অভিযান-১০। ছবি: নিউজবাংলা
‘আগুন লাগার পর যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। আমরা বারবার স্টাফদের বলছিলাম লঞ্চ ভেড়াতে। কিন্তু তারা বলছিল সামান্য বিষয়, আগুন নিভে যাবে। এরপরই গভীর রাতে তারা ভাড়া উঠানো শুরু করেন। একসময় আগুনের পরিসর বাড়তে থাকলে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। আমি নদীতে ঝাঁপ দিয়েছি, কিভাবে বেঁচেছি আল্লাহ জানে।’
এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘ইঞ্জিনের ড্রাইভার তো একজন রয়েছে, তার কাজ কী ছিল? মাস্টার আর ড্রাইভার সমন্বয় করেই একটি লঞ্চ পরিচালনা করেন। তাহলে আগুন লাগার পরও লঞ্চ কেন নেদীর ধারে কোথাও ভেড়ানো হয়নি।’
সৈয়দ শামীম নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘অফিসের কাজে বরগুনায় যাচ্ছিলাম। তিন দিনের ছুটি থাকায় লঞ্চে যাত্রী ছিল ঠাসা।
‘আগুন লাগার কিছুক্ষণ পর লঞ্চটি কোনো একটি স্থানে ভেড়ানোও হয়েছিল। কয়েকজন প্রাণে বাঁচতে লঞ্চ থেকে লাফিয়ে পড়েন পানিতে। কিন্তু লঞ্চটি আবার ব্যাক নেয়া হয়। তারপর ভাড়া তোলা শুরু করে স্টাফরা। ডেকের গেটও আটকানো থাকে। তাদের টাকার লোভেই এত মানুষ পুড়ে ছাই হয়েছে।’
এদিকে আগুনের ঘটনায় লঞ্চের মালিক, মাস্টারসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে ঝালকাঠি সদর থানায় করা মামলা করেছেন নিখোঁজ যাত্রীর স্বজন মনির হোসেন।
আগুনে পুড়ে যায় লঞ্চের প্রতিটি জায়গা। ছবি: নিউজবাংলা
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘লঞ্চটি নদীতে থাকাকালে ইঞ্জিনরুমে বিকট শব্দ হয়ে আগুন লেগে যায়। লঞ্চের দুটি ইঞ্জিনের মধ্যে একটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। অন্য একটি ইঞ্জিন সচল ছিল। তখন লঞ্চটি তীরে ভেড়াতে স্টাফদের বারবার অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা লঞ্চটি তীরে না ভিড়িয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, ‘স্টাফরা বলছিলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে, ভয় নেই। এরই মধ্যে আস্তে আস্তে পুরো লঞ্চে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং একপর্যায়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বরিশালের যুগ্ম পরিচালক এস এম আজগর আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সবকিছুই তদন্তাধীন রয়েছে। কারও গাফিলতি থাকলে সেই বিষয়গুলো তদন্তে উঠে আসবে।’
গত ২৩ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগে। ঢাকা থেকে প্রায় ৮০০ যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি বরগুনা যাচ্ছিল। আগুনে পুড়ে ও নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ৪৩ যাত্রী নিহত হন। নিখোঁজ রয়েছে অন্তত ৩৭ জন।