বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাঁশের তৈরি ছিপে প্রসিদ্ধ মুক্তাগাছা

  •    
  • ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ ১১:৪০

কারিগর যুবক ফরহাদ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে অন্যের জমিতে কাজ করেছি। এখন বাঁশ কিনে নিজে ছিপ তৈরি করছি। আর্থিক সমস্যার কারণে ছোট পরিসরে ছিপ তৈরির কাজ করছি। ব্যাংক অল্প সুদে আমাদের ঋণ দিলে ব্যবসা বড় করতে পারতাম। এ জন্য সরকারি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’

বাঁশ দিয়ে ছিপ তৈরির জন্য দিন দিন পরিচিতি বাড়ছে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার বাদে মাঝিরা গ্রামের। এখানে তৈরি ছিপ সারা দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে।

এতে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেক নারী-পুরুষ। বেকার যুবকরাও ঝুঁকছেন এ পেশায়।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রায় এক শ বছর আগে এ গ্রামে ছিপ তৈরি শুরু হয়। বংশপরম্পরায় এলাকার নিম্নবিত্ত লোকজন এ কাজে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে গ্রামের পাঁচ শতাধিক লোক ছিপ তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

এ সময় ছিপ তৈরির কারিগররা জানান, ছিপ তৈরির বাঁশ তারা সুনামগঞ্জ থেকে ট্রাক ভর্তি করে কিনে আনেন। পরে নারীরা সেগুলো সাইজ মতো ছাঁটাই করেন। এরপর বিশেষ কায়দায় চুলার আগুনে বাঁশগুলোতে তাপ দেয়া হয়। একটি নির্দিষ্ট রং ধারণের পর সেটি দিয়ে ছিপ তৈরি করা হয়।

দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে পাইকাররা তাদের গ্রাম থেকে ট্রাক ভর্তি করে ছিপগুলো কিনে নিয়ে যান। পরে সেগুলো সারা দেশে সরবরাহ করেন।

মুক্তাগাছায় তৈরি ছিপ সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। ছবি: নিউজবাংলা

ছিপ তৈরির সময় কথা হয় কারিগর আব্দুল মাজিদের সঙ্গে। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দাদার পর আমার বাবাও ছিপ তৈরির পেশায় জড়ান। ছিপ বিক্রি করে যা আয় হতো, তা দিয়েই সংসার চলত।

‘বাবার কাছে ছিপ তৈরির কৌশল শিখে আমিও এ কাজে জড়িয়ে পড়ি। লাভ যা হচ্ছে তা দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনাসহ পরিবার নিয়ে সুখেই আছি।’

কারিগর ষাটোর্ধ্ব বয়সী ফয়জুর রহমান জানান, ‘বাদে মাঝিরা গ্রামের এলাকাজুড়ে লাখ লাখ ছিপ তৈরি হয়। এখন বন্যার পানি কম থাকায় তুলনামূলকভাবে ছিপ কম বিক্রি হচ্ছে। তবে নিয়মিত ছিপ তৈরি করে জমিয়ে রাখা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় একটু বন্যা হলেই ব্যবসা চাঙ্গা হবে। তখন পাইকাররা এ এলাকা থেকে ছিপ কিনতে ভিড় জমাবে।’

ছিপ তৈরির খরচ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ছিপের বাঁশঝাড় স্থানীয় কিছু কারিগরদের থাকলেও বেশির ভাগ কারিগর সুনামগঞ্জ থেকে কিনে আনেন। যাতায়াতসহ সবমিলিয়ে প্রতি ছিপে খরচ পড়ে ২৫ টাকা।

‘এরপর বিক্রি করা হয় ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। এ আয় দিয়েই সংসার চলে। তবে এখন ডাল সিজনে ব্যবসা কিছুটা মন্দা যাচ্ছে।’

সাধারণত এই সাইজের বাঁশ ছিপ তৈরির জন্য কিনে আনা হয় সুনামগঞ্জ থেকে। ছবি: নিউজবাংলা

কারিগর যুবক ফরহাদ বলেন, ‘অভাবের তাড়নায় লেখাপড়া করতে পারিনি। ছোটবেলা থেকেই অন্যের জমিতে কাজ করেছি। অন্যের জমিতে কাজ করার চেয়ে বাড়িতে বসে নিজের কাজ করা ভালো। এ জন্য বাঁশ কিনে এনে ছিপ তৈরি করছি। এ কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আর্থিক সমস্যার কারণে আমরা ছোট পরিসরে ছিপ তৈরির কাজ করছি। ব্যাংক থেকে অল্প সুদে আমাদের ঋণ দিলে ব্যবসা বড় করতে পারতাম। এ জন্য সরকারি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহসভাপতি শংকর সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে মাছ ধরার ক্ষেত্রে ফিশিং হুইল ক্রমে জনপ্রিয় হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় উৎপাদিত বড়শির চাহিদাও ব্যাপক। শৌখিন মাছ শিকারিদের কাছে ছিপ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে কারিগররা দিনরাত পরিশ্রম করছেন। এতে অনেক যুবকের বেকারত্ব ঘুচার পাশাপাশি নারীরাও স্বাবলম্বী হচ্ছেন। যে কাজে যার দক্ষতা আছে, তার সে কাজই করা উচিত। তাহলেই সফলতা সম্ভব।’

এ বিভাগের আরো খবর