বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যত্রতত্র থুতু ফেলার দেশ ‘ভারত’

  •    
  • ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৮:৩৬

২০১৬ সালে ভারতীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এক প্রশ্নের জবাবে সংসদে বলেছিলেন, ‘ভারত একটি থুতু ফেলার দেশ। আমরা থুতু ফেলি যখন বিরক্ত হই। ক্লান্ত হলেও আমরা থুতু ফেলি। রাগান্বিত কিংবা এ ধরনের কিছু অনুভূত হলেও আমরা একদলা থুতু ফেলে দিই।’

রাস্তাঘাটে মানুষের মুখের লালা তথা থুতু ছড়িয়ে থাকা ভারতের একটি অতিপরিচিত দৃশ্য।

এসব থুতুর কিছু খুব সাধারণ, কিছু আবার কফমিশ্রিত। কখনও কখনও রক্তের মতো লাল রঙের থুতুও দেখা যায়। মুখের লালার সঙ্গে পান আর জর্দা মিশেই এমন রঙিন হয়ে ওঠে থুতু। এই থুতু দিয়েই আবার রঙিন হয় শহরের অসংখ্য দেয়ালও।

মানুষের এমন থুতু ফেলার কারণেই কলকাতার হাওরা ব্রিজ এখন হুমকির মুখে।

ভারতের সরকার মানুষের এই অভ্যাসটি পরিবর্তনের চেষ্টা করছে অনেক দিন ধরেই। যত্রতত্র থুতু থামানোর এই যুদ্ধে এগিয়ে রাখতে হবে দেশটির মুম্বাই শহরকে। এই শহরে থুতু থামানোর জন্য একটি বিশেষ বাহিনীকেও নিযুক্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। কাউকে বেজায়গায় থুতু কিংবা মূত্রত্যাগ করতে দেখলেই তিরস্কার করে তারা। কিন্তু ভারতীয়দের থুতুর অভ্যাসের কাছে এই বিশেষ বাহিনীও এখন ব্যর্থ।

সম্প্রতি করোনা মহামারি শুরু হলে এর বায়ুবাহী বিপদের কথা চিন্তা করে যত্রতত্র থুতু ফেলার বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান নেয় দেশটি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থুতু ফেলার জন্য জরিমানা থেকে শুরু করে কারাদণ্ড দেয়ারও বিধান করা হয়। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও দেশের মানুষকে যেখানে-সেখানে থুতু না ফেলার জন্য অনুরোধ করেন।

কিন্তু যখন-তখন যেখানে-সেখানে থুতু ফেলা ভারতীয়দের অস্থিমজ্জায় মিশে গেছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতীয় নারীদের তুলনায় সাধারণত পুরুষরাই এই কাজটি বেশি করেন।

২০১৬ সালে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী এক প্রশ্নের জবাবে সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘ভারত একটি থুতু ফেলার দেশ। আমরা থুতু ফেলি যখন বিরক্ত হই। ক্লান্ত হলেও আমরা থুতু ফেলি। রাগান্বিত কিংবা এ ধরনের কিছু অনুভূত হলেও আমরা একদলা থুতু ফেলে দিই। আমরা যেকোনো জায়গায় কিংবা সর্বত্রই সময়-অসময়ে থুতু ফেলি।’

ভারতীয় নারীদের তুলনায় সাধারণত পুরুষরাই যত্রতত্র থুতু ফেলার কাজটি বেশি করেন। ছবি: বিবিসি

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কথা পুরোপুরি ঠিক। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ভারতীয় পুরুষরা আনমনেই থুতু ফেলেন। গাড়ি, বাইক কিংবা অটোরিকশায় বসে থাকা যাত্রীরাও মাথাটি একটু হালকা দুলিয়ে প্রকাশ্যেই একদলা থুতু ছুড়ে দেন। হেঁটে যাওয়া ব্যক্তিরা পাশের দেয়ালটিকে থুতু ফেলার জন্য খুব আদর্শ মনে করেন।

এ প্রসঙ্গে ভারতীয় কলাম লেখক সন্তোষ দেশাই জানান, ভারতীয় পুরুষরা তাদের শরীর নিয়ে বেশ আত্মতুষ্টিতে ভোগেন। এমনকি এই শরীর থেকে যা বের হয়, তা নিয়েও তাদের এক ধরনের তুষ্টি বোধ হয়।

ভারতীয় পুরুষদের আরেকটি মনোভাব হলো, যদি তারা কোনো কিছু নিয়ে অস্বস্তি বোধ করেন, তবে কোনো রাখঢাক না করেই তারা এর থেকে নিষ্কৃতি নেন।

ভারত সরকারের পাশাপাশি অনেকে স্বেচ্ছাশ্রমেও থুতুবিরোধী সচেতনতা নিয়ে কাজ করছেন। ছবি: বিবিসি

ভারতীয়দের এমন অভ্যাস দূর করার জন্য সরকারের পাশাপাশি স্বেচ্ছাশ্রমেও অনেকে মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে পুনের বাসিন্দা রাজা ও প্রিতি নরসিনহা অন্যতম। প্রকাশ্যে থুতু না ফেলার আহ্বান জানিয়ে ২০১০ সাল থেকেই তারা দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে কাজ করছেন।

তবে ভারতের মতো দেশে রাজা ও প্রিতির লড়াইটি এত সহজ নয়। একটি উদাহরণ দিলেই তার কিছুটা বোঝা যায়। সম্প্রতি তারা পুনের রেলস্টেশন এলাকায় থুতুতে সয়লাব একটি দেয়াল পরিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু তিন দিন পরেই দেখা যায়, ওয়ালটি আবারও থুতুতে সয়লাব হয়ে গেছে।

ওয়ালে থুতু ফেলার সময় এক ব্যক্তিকে তারা এর কারণ জিজ্ঞেস করেছিলেন। ওই ব্যক্তি তীব্র রাগ নিয়ে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘এটা কি তোমার বাবার ওয়াল?’

এ বিভাগের আরো খবর