বড়দিন ও থার্টিফার্স্ট নাইট ঘিরে মদের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে ভেজাল মদ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কা জানিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)।
ভেজাল মদ ঠেকাতে ইতিমধ্যে রাজধানীসহ কয়েকটি জেলাকে সতর্ক করেছে সংস্থাটি। এ লক্ষ্যে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতাও। ভেজাল মদ যাতে বাজারে না আসতে পারে, এ জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ এবং র্যাবও কাজ করছে।
১৫ ডিসেম্বর ডিএনসির একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীরা ভেজাল মদ তৈরি করে ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করতে পারে। এ ধরনের অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ মদ পান করে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারে।
গত বছরের এ সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও কয়েকটি জেলায় ভেজাল মদ ছড়িয়ে পড়েছিল বলে প্রতিবেদনে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এলাকাগুলো হলো ঢাকার রামপুরা, বনশ্রী, সিপাহীবাগ, মেরাদিয়া, উত্তরখান, দক্ষিণখান, পুরান ঢাকা, বিমানবন্দরের পাশের এলাকা, গাজীপুরের টঙ্গী, পূবাইল, শ্রীপুর, নারায়ণগঞ্জ বন্দর, পঞ্চবটি, টাঙ্গাইল ও মুন্সীগঞ্জ জেলার সুইপার কলোনি।
ডিএনসির গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এসব এলাকায় বাড়তি নজরদারি রাখতে বলা হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর ভেজাল মদ সেবনে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটেছে। এবার যাতে এমনটি না হয়, সে বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। ইতিমধ্যে সে লক্ষ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
গত বছর থার্টিফার্স্ট ও এর পরের সময়ে বাজারে ভেজাল মদের সরবরাহ বেড়েছিল। তখন সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এবার অনলাইন ও অফলাইনে তাদের নজরদারি রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, ‘ভেজাল মদ বিভিন্ন জনের মাধ্যমে একাধিক হাত ঘুরে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছায়। চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় কিছু অসাধু চক্র এই ভেজাল মদ তৈরি করে বিক্রি করে। অলনাইন ও অফলাইনে যেন এই ভেজাল মদ ছড়াতে না পারে, সে বিষয়ে আমাদের নজরদারি রয়েছে।’
ভেজাল মদসহ যেকোনো ধরনে আইন পরিপন্থি কর্মকাণ্ড বন্ধে র্যাব তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘থার্টিফার্স্টকে ঘিরে মানহীন মদ যাতে না ছড়াতে পারে সে বিষয়ে নজরদারি করছি। এ ছাড়া কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, সে লক্ষ্যেও আমাদের ব্যাটালিয়নগুলো কাজ করে যাচ্ছে।’
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক কর্মকর্তা দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘আগে আমরা ভেজাল মদ বলতে যা পেতাম সেটি ছিল দেশীয় মদের সঙ্গে পানি বা ঘুমের ওষুধের মিশ্রণ অথবা ইথাইল অ্যালকোহলের সঙ্গে পানি বা রং মিশিয়ে বানানো। তবে এখন যা পাচ্ছি তা হলো মিথানল, যা পূর্ণাঙ্গ টক্সিক বা বিষ।’
তিনি বলেন, ‘ইথালন হলো রেকটিফাইড স্পিরিট, তবে এটি মিথানলের মতো তেমন প্রাণঘাতী নয়। মিথানল ব্যবহার করা হয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাজে, এই মিথানল দিয়ে কাঠের আসবাবও রং করা হয়। এটা পুরোপুরি বিষ, আর মানুষ এটা খেয়েই মারা যাচ্ছে।’
দুলাল কৃষ্ণ জানান, দেশে প্রাকৃতিক উপায়েই ইথানল তৈরি হচ্ছে, আর শিল্প-কারখানার জন্য আমদানি করা হচ্ছে মিথানল। ইথানল ও মিথানল দুটি রাসায়নিকই বাংলাদেশে সহজলভ্য।