১০ ডিসেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রাতের ফ্লাইট। ১০ জুন পর্যন্ত রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত এই বিমানবন্দরের রানওয়ে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলছে, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের জন্য হাইস্পিড ট্যাক্সিওয়ে নির্মাণের জন্যই এ সিদ্ধান্ত। ফলে দেশের এই প্রবেশদ্বারে ২৪ ঘণ্টায় ফ্লাইট ওঠানামা করতে পারছে ১৬ ঘণ্টা।
অন্যদিকে কোভিড নিয়ন্ত্রণে আসায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দেশের যে শ্রমবাজার রয়েছে, সেগুলোতেও প্রবাসীকর্মীরা যাওয়া শুরু করেছেন। ফলে এমনিতেই বাড়তি চাপ পড়ছে মধ্যপ্রাচ্যগামী ফ্লাইটগুলোতে।
আগে যেখানে যাত্রীদের শুধু ইমিগ্রেশনের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হতো, কোভিড সতর্কতার কারণে এখন সেখানে হেলথ ডেস্ক থেকেও নিতে হচ্ছে ছাড়পত্র। এই ছাড়পত্র নিতেও লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে যাত্রীদের। ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে একজন ব্যক্তিকে বিমানবন্দরে থাকতে হচ্ছে বাড়তি সময়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশে যেতে হলে ফ্লাইট ছাড়ার ছয় ঘণ্টা আগে করতে হচ্ছে পিসিআর টেস্ট। ফলে একজন যাত্রীকে ফ্লাইটে ওঠার অন্তত আট ঘণ্টা আগে আসতে হচ্ছে বিমানবন্দরে। পিসিআর টেস্ট করার পর তিনিও অবস্থান করছেন বিমানবন্দর এলাকায়। এতেও বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে বিমানবন্দরের ওপর।
করোনার নমুমা পরীক্ষা করাতে দিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে অপেক্ষায় হাজারো বিমানযাত্রী। ছবি: নিউজবাংলা
এসব কারণে দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত বিমানবন্দরটিতে এখন যাত্রী উপচে পড়ছে। অনেক সময় বিমানবন্দরে প্রবেশের লাইন চলে আসছে মূল সড়ক পর্যন্ত। অনেকে নির্ধারিত সময়ে উঠতে পারছেন না ফ্লাইটে। আবার যাত্রীর অপেক্ষায় প্রায়ই সূচি বিপর্যয়ে পড়ছে এয়ারলাইনসগুলো।
বিড়ম্বনার নাম পিসিআর টেস্ট
দুই মাসের ছুটি কাটিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে কর্মস্থলে যোগ দিতে ১৯ ডিসেম্বর রাতে বিমানবন্দরে আসেন প্রবাসীকর্মী জাবেদ আলী। এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ছাড়ার কথা ছিল রাত ৯টা ২০ মিনিটে।
সিলেট থেকে ভাইয়ের সঙ্গে ফ্লাইট ছাড়ার ৬ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে আসেন জাবেদ। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে হেলথ ডেস্কে গেলে তাকে জানানো হয় পিসিআর টেস্ট না করার কারণে তিনি দুবাই যেতে পারছেন না।
জাবেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুবাই যাওয়ার ৬ ঘণ্টা আগে যে আরেকটি পিসিআর টেস্ট করতে হবে- এ তথ্য তাকে কেউই জানায়নি।’
আবার অনেকেই সময়মতো পিসিআর টেস্টের ফল না পাওয়ায় নির্ধারিত ফ্লাইটে যাত্রা করতে পারছেন না। দুবাইপ্রবাসী সুনামগঞ্জের ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘সন্ধ্যা ৬টার ফ্লাইট ধরার জন্য সকাল ৮টায় বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে নমুনা দেয়ার লাইনে দাঁড়িয়েছি। ফ্লাইটের তিন ঘণ্টা আগে টেস্টের ফল দেয়ার কথা থাকলেও আমি পেয়েছি মাত্র এক ঘণ্টা আগে। আরেকটু দেরি হলেই আমার যাওয়া বাতিল হয়ে যেত।’
যাত্রীদের বিড়ম্বনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাজ্জাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার যাত্রীর করোনা পরীক্ষা করা হতো ২৪ ঘণ্টায়, এখন সেটি ১৬ ঘণ্টায় করা হচ্ছে। এ কারণে এমন ভোগান্তি চোখে পড়ছে। একই সঙ্গে করোনা পরীক্ষা ও নমুনা দেওয়ার জন্য একটু চাপ তৈরি হচ্ছে। এই সমস্যা হয়তো আগামী সপ্তাহে আর থাকবে না।’
প্রবাসীকর্মীদের অভিযোগ
বিমানবন্দরে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের ১২টি বুথ নমুনা সংগ্রহ করায় তাদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে নমুনা দিতে হয়। পরীক্ষার ফল পেতেও লাগছে অনেক বেশি সময়। তাই যাত্রার আগে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা তাদের বিমানবন্দরেই কাটিয়ে দিতে হচ্ছে। বেশি সময় লাগায় যাত্রীরা বিমানবন্দরের বোর্ডিং পাস সংগ্রহ, ইমিগ্রেশনসহ আনুষঙ্গিক কাজে পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছেন না।
সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না বলে অনেকের যে অভিযোগ, সে বিষয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাজ্জাদ অবশ্য দায় যাত্রী ও ট্রাভেল এজেন্টদের ওপরই দিলেন।
শাহরিয়ার বলেন, ‘দেশে এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষা করতে জানে না। রাস্তার যানজটের কারণে অনেকেই সময়মতো বিমানবন্দরে আসতে পারে না। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার খুলে যাওয়ার কারণে আগের তুলনায় যাত্রীর চাপ বেড়েছে বিমানবন্দরে।’
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকায় প্রবাসে শ্রমবাজার খুলতে শুরু করেছে। শুধু নভেম্বর মাসেই বিদেশে গিয়েছেন ১ লাখ কর্মী। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ৬৪ হাজারের বেশি কর্মী বিদেশে কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত আরও অনন্ত ৯ লাখ কর্মী বিদেশে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যাত্রী ভোগান্তি কমাতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। তিনি বলেন, ‘ইমিগ্রেশন নিয়ে কয়েক দিন আগে আমরা মিটিং করেছি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে। সেখানে এই প্রসঙ্গ এসেছে। দ্রুততম সময়ে যাত্রীদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছি। এখন ৪৮টি ডেস্ক আছে, প্রয়োজনে যেন আরও ২০টি ডেস্ক বাড়িয়ে দেয়া হয়। পরের দিনই এটা তারা বাড়িয়েছে, যাতে অসুবিধা না হয়।
‘আপনারা জানেন, পিসিআর টেস্ট করে আসার পরেও আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আরেকটি টেস্ট প্রয়োজন হয়। এটি করতে গিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীকে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ২০ হাজার যাত্রী যাওয়া-আসা করতে গিয়ে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। এটা যাতে না হয়, আমরা কিন্তু যথেষ্ট চেষ্টা করছি।’
তিনি বলেন, ‘নিয়মিত বিমানবন্দর পরিদর্শন করছি। আমাদের মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব প্রতিদিনই যাচ্ছেন, কোথায় কী অসুবিধা হচ্ছে এগুলো তিনি দেখছেন এবং সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, যাতে কোনো অসুবিধা না হয়।’