লঞ্চে আগুন লাগার খবর শুনে বরগুনা সদরের ঢলুয়া ইউনিয়নের খাজুরা গ্রামের রিপন এসেছেন জেলার নৌবন্দরে। ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে আগুন লাগা লঞ্চটিতে ছিলেন তার ফুপাতো ভাই, তার (ফুপাতো ভাইয়ের) ছেলে এবং এক শ্যালিকা।
তিনজনকে খুঁজতে এসে রিপন জানান, তারা সবাই নিখোঁজ। হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে খোঁজ নিয়েও পাওয়া যায়নি হদিস।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর আমার ফুপাতো ভাই মইন এবং তার ছেলে আবদুল্লাহ ও শ্যালিকা আছিয়া নিখোঁজ রয়েছেন। হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে খোঁজ নিয়েও তাদের খোঁজ পাইনি।।’
তাদের মতো বরগুনার আরও যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন।
ঝালকাঠির পোনাবালীয়া ইউনিয়নের দেউরী এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চে আগুন লাগে।
আগুনে এখন পর্যন্ত ৩৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
বেঁচে ফেরা যাত্রীরা বলছেন, এ লঞ্চের অনেক যাত্রীই ছিলেন বরগুনার। আগুনে হতাহতদের অধিকাংশই এ জেলার বাসিন্দা। তারা বিভিন্ন প্রয়োজনে বাড়িতে ফিরছিলেন।
তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক যাত্রী ছিলেন অন্য জেলার। তারা বরগুনায় স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে অথবা অন্য কোনো কাজে আসছিলেন।
স্বজনদের কাছে নিউজবাংলা এখন পর্যন্ত বরগুনার ১৯ জন নিখোঁজ থাকার তথ্য পেয়েছে।
নিউজবাংলাকে স্বজনরা জানিয়েছেন, তারা বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে খোঁজ নিয়েও নিখোঁজদের বিষয়ে কিছু জানতে পারেননি।
স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন বরগুনার মাইঠা এলাকার ইদ্রিস খান, নলী এলাকার আবদুল হাকিম, পাথরঘাটা টেংরার পপি আক্তার, পাথরঘাটা পৌরসভার তালতলার আবদুর রাজ্জাক, কালমেঘার কালিবাড়ির রাকিব মিয়া, বরগুনা সদরের হাফেজ তুহিনের মেয়ে (নাম অজ্ঞাত), সদরের ছোট আমতলীর জয়নব বেগম।
এ ছাড়াও রয়েছেন বরগুনা সদরের পরীরখাল এলাকার মা রাজিয়া, তার মেয়ে নুসরাত, ঢলুয়া এলাকার মোল্লারহোড়া গ্রামের একই পরিবারের মা তাসলিমা ও তার মেয়ে মিম তানিশা, ছেলে জুনায়দেসহ আরও চারজন রয়েছেন। এ ছাড়া বরগুনায় বেড়াতে আসা চাঁদপুরের মনোয়ারা, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার রিনা বেগম ও তার মেয়ে রিমা নিখোঁজ।
ওই লঞ্চ থেকে বরগুনার বিভিন্ন এলাকায় মোট ১০ জন যাত্রী বেঁচে ফিরেছেন।
তাদের মধ্যে ঘটনার সময় লঞ্চে ছিলেন সাদিক, বরগুনা সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের হেউলিবুনিয়া এলাকার সাদিক মৃধা।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘রাত পৌনে ৩টার দিকে ইঞ্জিন রুম থেকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ হয়। মুহূর্তে গোটা লঞ্চ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এ সময় ডেকে থাকা ঘুমন্ত যাত্রীরা জেগে ওঠে ছোটাছুটি শুরু করেন। কেউ কেউ নদীতে ঝাঁপ দেয়, আবার অনেকে চিৎকার করতে শুরু করে।’
‘একপর্যায়ে উদ্ধারে কয়েকটি ট্রলার এগিয়ে আসে এবং যাত্রীদের অনেকে ট্রলারে উঠে তীরে নামেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মূলত আগুন লাগার পর লঞ্চটি তীরে নোঙর করার মতো কেউ ছিল না। লঞ্চ জোয়ারের তোড়ে ভাসতে থাকে।’
এদিকে আগুনে মৃতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার ও আহতদের ১৫ হাজার টাকা করে সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে বরগুনার জেলা প্রশাসন।
নিউজবাংলাকে জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু লঞ্চটি বরগুনায় আসছিল, যাত্রীদের অনেকেই বরগুনার। আমরা ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন থেকে ঘটনাস্থলে টিম পাঠিয়েছি। নিহতের পরিচয় জানার চেষ্টা করছি।’