বিএনপি তার চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তিযোদ্ধা আখ্যা দিয়ে যে বক্তব্য রাখছে, তা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বীর বিক্রম খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে নানা আলোচিত অভিযান চালানো অপারেশন ক্র্যাক প্লাটুনের অন্যতম এই যোদ্ধা জানান, যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ও তাদের প্লাটুনের কয়েকজন বেগম খালেদা জিয়াকে ভারতে নিয়ে যেতে তার কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি, তিনি সেনানিবাসে পাকিস্তানিদের কাছে চলে যান।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আয়োজিত স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে ৫০ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালের সেইসব ঘটনা তুলে ধরেন।
সম্প্রতি বিএনপি তার চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার দেড় বছর বয়সী ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ও সাড়ে তিন বছর বয়সী বড় ছেলে তারেক রহমানকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে বিতর্ক তৈরি করেছে।
এই পরিস্থিতিতে মায়া তুলে ধরলেন পাঁচ দশক আগের ঘটনাবলি।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় খালেদা জিয়া ছিলেন ক্যান্টনমেন্টে। অনেকবার বলেছি, খালেদা জিয়াকে আমি নিতে এসেছিলাম। আমার বন্ধু শহীদ জুয়েলসহ আরও দুইজন। তখন গভীর রাত ছিল। কথা ছিল, আমাদের সঙ্গে তিনি যাবেন ওইপার (সীমান্তের ওপারে)।
‘পরের দিন গিয়ে দেখলাম, তিনি চলে গেছেন ক্যান্টনমেন্টে। দীর্ঘ ৯ মাস ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই ৯ মাসে খালেদা জিয়া কোথায় মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, মুক্তিযোদ্ধারা সেটা জানতে চান।’
বিএনপি নেতাকে মিথ্যাবাদী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের আজকে শপথ নিতে হবে, ইতিহাস যারা বিকৃত করে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের বক্তারা
মায়া বলেন, ‘তিন-চার দিন আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেব বললেন, দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা খালেদা জিয়া। টিভিতে যখন খবর দেখলাম তখন আল্লাহর কাছে বললাম, হায় আল্লাহ, এই কথাটা শোনার আগে আমার মৃত্যু হলো না কেন?
‘৫০ বছরে খালেদা জিয়া কোথাও বলেছেন যে তিনি মুক্তিযোদ্ধা? বিএনপি নেতারা একেক সময় একেক কথা বলে দেশকে বিভ্রান্ত করেন।’
অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবাসরত এবং করপোরেশনের আওতাভুক্ত এলাকার প্রায় পাঁচ শ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেয়া হয় ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, যত জায়গায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ হয়েছে, সবগুলো জায়গা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যত বদ্ধভূমি ছিল, সব আমরা সংরক্ষণ করছি।'
তিনি জানান, সব মুক্তিযোদ্ধার কবর একই ধরনের হবে, যাতে ৫০ বছর পরে কেউ দেখে বলতে পারে এটা একটা মুক্তিযোদ্ধার কবর।
- আরও পড়ুন: তারেককে শিশু মুক্তিযোদ্ধা বললেন ফখরুল
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘আমি কোনো মেয়র না, ব্যারিস্টার না, সংসদ সদস্য না, একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান; আপনাদের সন্তান। আপনাদের জন্য নগর ভবনের দরজা সব সময় খোলা।’
আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
সংসদ সদস্য কামরুল ইসলাম, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মনিরুল ইসলাম মনু, কাজী ফিরোজ রশীদ, হাজি মোহাম্মদ সেলিম, রাশেদ খান মেনন এবং সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য জিন্নাতুল বাকিয়াও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ,জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়।
এরপর মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন এবং কবিতা আবৃত্তি করা হয়। সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের পর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শিল্পীসহ অন্যরা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করেন।