বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১০ বছরের মধ্যে দেশে গাড়ি তৈরি হবে: নিউজবাংলাকে নাভানার সিইও

  •    
  • ২২ ডিসেম্বর, ২০২১ ২৩:১৯

‘মার্কেট সাইজের দিক দিয়ে কিছু লিমিটেশন আছে। আমাদের দেশে প্রচুর রিকন্ডিশন গাড়ি বিক্রি হয়। যখন রিকন্ডিশন গাড়ি কমে গিয়ে ব্র্যান্ডের গাড়ির ব্যবহার বাড়বে, তখন দেশে গাড়ি তৈরি হবে। লোকালি ম্যানুফ্যাকচারিং হলে ট্যাক্স কমে আসবে, কম দামে গাড়ি দেয়া যাবে।’

আগামী ১০ বছরের মধ্যে দেশে সম্পূর্ণ নতুন গাড়ি তৈরি হওয়ার আশার কথা শুনিয়েছেন দেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান নাভানা গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ওয়াহেদ আজিজুর রহমান।

তিনি বলেছেন, মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশের পথে যাত্রার পথে বাংলাদেশ অটোমোবাইল খাতের গুরুত্ব বাড়ছে। এই খাতে বড় পরিকল্পনার পাশাপাশি বড় বড় বিনিয়োগও আসছে। আগামী ১০ বছর বা ২০৩০ সালের মধ্যেই এই খাতে বড় পরিবর্তন আসবে। তখন দেশেই তৈরি হবে একেবারে সম্পূর্ণ নতুন গাড়ি।’

মঙ্গলবার নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ সুসংবাদ দিয়েছেন ওয়াহেদ আজিজুর রহমান। সেই সঙ্গে অটোমোবাইল খাতের সম্ভাবনা, নাভানার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন তিনি।

নাভানা গ্রুপের বেশ কয়েকটি কোম্পানি রয়েছে। অটোমোবাইল পণ্য, নির্মাণ ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসা, বিদ্যুৎ খাত, টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের বৈচিত্র্যময় ব্যবসা রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে গ্রুপের নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন ওয়াহেদ আজিজুর রহমান।

যুক্তরাজ্যের চার্টার্ড সার্টিফাইড অ্যাকাউন্ট (এসিসিএ) ওয়াহেদ নাভানার আগে এপেক্স হোসেন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। এ ছাড়া কোটস, রেকিট বেনকিজার এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর মতো বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করেছেন তিনি।

ওয়াহেদ আজিজুর রহমান বলেন, ‘১৯৬৩ সালে প্রয়াত জহিরুল ইসলাম টয়োটার সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। সেটি ছিল একটি রিস্কি ও ভিশনারি সিদ্ধান্ত। উনার ভাইয়েরা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি করেছিলেন মিডল-ইস্টে।

‘অনেকেই ব্যবসায় ঢুকে কোর পয়েন্ট ভুলে যায়। নাভানার কোর পয়েন্ট অটোমাবাইল ইন্ডাস্ট্রি। অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি মানেই কিন্তু গাড়ি বানানো নয়। টয়োটা কিন্তু গাড়ি বানায় না, তারা অ্যাসেম্বল করে। তাদের অনেক সাপ্লায়ার রয়েছে। তারা একেকজন একেক পার্টস বানায়। একসঙ্গে প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একটি গাড়ি তৈরি করছে তারা।

‘বাংলাদেশেও সেসব পার্টস বানাতে পারি আমরা। এখানে প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ রয়েছে। এখানে লংটাইম ভিশন থাকতে হবে; বিনিয়োগ করতে হবে। সরকারও চাচ্ছে বাংলাদেশকে অটোমোবাইল হাব হিসাবে তৈরি করতে।’

বাংলাদেশে এখন ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ গাড়ি অবস্থায় চলে এসেছে। সরকারও উৎসাহ দিচ্ছে। সে জায়গায় নাভানার অবস্থান কোথায়- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নাভানা আগে থেকেই বাংলাদেশে গাড়ির একটি অংশ তৈরি করছে। আফতাব অটোমাবাইলের মাধ্যমে হিনো বাস সিকেডি (যন্ত্রাংশ) এনে তৈরি করছি আমরা।

‘মার্কেট সাইজের দিক দিয়ে কিছু লিমিটেশন আছে। আমাদের দেশে প্রচুর রিকন্ডিশন গাড়ি বিক্রি হয়। যখন রিকন্ডিশন গাড়ি কমে গিয়ে ব্র্যান্ডের গাড়ির ব্যবহার বাড়বে, তখন দেশে গাড়ি তৈরি হবে। লোকালি ম্যানুফ্যাকচারিং হলে ট্যাক্স কমে আসবে, কম দামে গাড়ি দেয়া যাবে।

‘রিকন্ডিশনড গাড়ির সঙ্গে অনেক লোক জড়িত। তাই রাতারাতি এটা পরিবর্তন হবে না। তবে রিকন্ডিশনড গাড়ি লংটার্মে দেশের জন্য লাভজনক হয় না। গাড়িগুলো পুরোনো, পরিবেশগত দিক দিয়েও সমস্যা হয়।’

ওয়াহেদ আজিজুর রহমান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যেসব গাড়ি তৈরি হচ্ছে তা কিন্তু সিকেডি (সংযোজন)। এর সঙ্গে সঙ্গে মোটরসাইকেল বিজনেস লোকালাইজেশনে চলে আসছে। টায়ারসহ বেশ কটি অংশ দেশে তৈরি হচ্ছে। সেটা গাড়ির ক্ষেত্রে আরও কিছু সময় লাগবে।

‘অটোমোবাইল খাতে ২০৩০ সালের মধ্যে একটি পরিবর্তন আসবে। দেশে সম্পূর্ণ নতুন গাড়ি তৈরি হবে। সরকারের পলিসিও পজিটিভ। ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে সাধারণত মাথাপিছু আয় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার ডলারে গেলে গাড়ির কোম্পানিগুলো বেশি আগ্রহ দেখায়। আমরা এখন আড়াই হাজার ডলারে রয়েছি। সেদিক দিয়েও ১০ বছরের মধ্যে দেশে পুরো নতুন গাড়ি তৈরি হবে।’

নাভানা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের অটোমোবাইলের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ হিসেবে ব্যাটারি রয়েছে। কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে জড়িত পাইপ ম্যানুফ্যাকচারিং রয়েছে। হাউজহোল্ডের সঙ্গে জড়িত এনার্জি ব্যবসায় রয়েছে। নাভানা মোটামুটি কোর বিজনেসেই আছে।’

দেশের সার্বিক ব্যবসা নিয়ে নাভানার সিইও বলেন, ‘ব্যবসায় টিকে থাকতে হলে মানবসম্পদের সঙ্গে সঙ্গে টেকনোলজি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ভাগ্যজনক হলো দেশে শতকোটি টাকার বিজনেস প্ল্যান হয়, কিন্তু আইটি খাতে এক কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে না। তবে বর্তমান জেনারেশন এটার গুরুত্ব ধরতে পারছে। এখন পেপারলেস অফিসের দিকে যাচ্ছে। এ জন্য মানুষকে রিট্রেইন করতে হবে। নাভানার সঙ্গে যারা কাজ করছে, তাদের অবশ্যই রিট্রেইন করে রাখার চেষ্টা করব। কারণ ভবিষ্যতের উন্নত বিশ্বে থাকবে নলেজ বেইজড ইকোনমি।’

বহুজাতিক ও দেশীয় কোম্পানির মধ্যে তুলনা করতে গিয়ে আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করেছি। তারা শত বছরের পুরোনো। পৃথিবীব্যাপী তাদের ব্যাপ্তি। কিন্তু আমাদের কোম্পানিগুলো ৫০ থেকে ৬০ বছরের পুরোনো। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো অবশ্যই প্রফিট করে। একই সঙ্গে তারা চেষ্টা করে একটি মেরিট কালচার তৈরি করতে।

‘মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি বেস্ট মানবসম্পদ, বেস্ট টেকনোলজি এবং বেস্ট বিজনেস প্রসেসে নজর দেয়। দেশি কোম্পানিগুলোতে এখনো তা সেভাবে হয়নি। অর্গানাইজেশন দাঁড় করান প্রফেশনালরা। আমাদের দেশে সে রকম প্রফেশনাল এখনো তৈরি হয়নি। তবে আস্তে আস্তে দেশি কোম্পানিগুলোও আমাদের মতো প্রফেশনাল নিয়ে আসছে। সে অর্থে আমরা চেঞ্জ মেকার।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের অনেক গ্রুপ অব কোম্পানি আছে। গ্রুপের একটি-দুটি ভালো ব্যবসা করছে। তা দিয়ে নিজেদের অনেক ছোট ছোট কোম্পানি টানছে। এতে যে কোম্পানি ভালো ব্যবসা করছিল, সেটাতে রি-ইনভেস্ট না করে অ্যাটেনশন ডাইভার্ট হচ্ছে, রিসোর্স ডাইভার্ট হচ্ছে। এটা ঠিক নয়।’

শিল্প খাতের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে সিইও বলেন, ‘আমাদের প্রোডাক্টিভিটি বাড়াতে হবে। দেশের গার্মেন্ট খাতে এভারেজ প্রোডাকটিভিটি ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ, সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ। অথচ ভিয়েতনাম ও চায়নায় তা ৮০ শতাংশ। এটা নির্ভর করে কিভাবে বিজনেস অপারেশন হচ্ছে। এ দেশের মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোই ৮০ শতাংশের মতো প্রোডাক্টিভিটি দেয়।’

ব্যবসার ক্ষেত্রে নাভানা এখন কোন অবস্থানে রয়েছে- এ প্রশ্নের উত্তরে ওয়াহেদ আজিজুর রহমান বলেন, ‘২০১৮ সালের দিকে নাভানার বোর্ড সদস্যারা বুঝতে পারেন যে কোথাও একটু সমস্যা হচ্ছে। আমরা লোন নিচ্ছি, গ্রো করছি। কিন্তু একটি বিজনেসে প্রথম দিন থেকেই তো বিক্রি শুরু হয় না। ফলে টার্গেট পূরণে সময় লাগছিল। এতে ক্যাশ ফ্লোতে চাপ পড়ছিল।

নাভানার কোনো রপ্তানি নেই। লকডাউনেরর সময় ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ ছিল। কিন্তু কোনো কর্মী ছাড়িনি। ফলে ক্যাশে আরও চাপ পড়ে। বিভিন্ন ধাপে কিছু কিছু পরিকল্পনার মাধ্যমে তা উত্তরণ করা হচ্ছে। আমরা ফিন্যানশিয়াল পুনর্গঠনের কাজ করছি। জিরো কুপন বন্ড, পার্পিচুয়াল বন্ড আনাসহ কিছু কোম্পানিকে স্টক মার্কেটে লিস্টেড করে বিনিয়োগ টানব। পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় আমাদের বিক্রি আগের পর্যায়ের কাছাকাছি চলে এসেছে।’

ওয়াহেদ আজিজুর রহমান বলেন, ‘রিয়েল এস্টেট কোম্পানিও রয়েছে নাভানার। অন্য সব কোম্পানির মতোই নাভানাও এখন উচ্চ মধ্যবিত্ত ও উচ্চ বিত্তের জন্য ফ্ল্যাট বানায়।’

ভবিষ্যতে নিম্ন বিত্তদের জন্য কাজ করার ইচ্ছার কথা জানিয়ে ওয়াহেদ বলেন, ‘আমরা কিছু ফ্ল্যাট মধ্যবিত্তের জন্য বানাচ্ছি। দেশে ৬০ লাখ ফ্ল্যাট প্রয়োজন। কিন্তু সব কোম্পানি মিলে ১৭ হাজার তৈরি করতে পারছে। আমার স্বপ্ন হচ্ছে, আমি নিম্নবিত্তের জন্য ফ্ল্যাট বানাব। একজন গার্মেন্ট কর্মীও যেন ফ্ল্যাট পায়। সে যেন ১৫ বছর ভাড়া শোধ করে ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারে। তাদের ছেলেমেয়েরা ভালো পরিচ্ছন্ন জায়গায় থাকবে, ভালো জায়গায় লেখাপড়া করবে। এটা হলে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে।’

বিশ্ব কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে আমরা এখনো ছোট ছোট কাজ করছি। বড় পজিশনের জবের পরিমাণ খুবই কম। এটা কেন হচ্ছে? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রতিযোগী দেশগুলোতে দেশেই গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর তারা প্রতিনিয়ত নিজেদের ডেভেলপমেন্টের কাজ করে। মার্কেটিংয়ে আন্তর্জাতিক কোর্সগুলো করে, ফাইন্যান্সের ক্ষেত্রে এসিসিএসহ অন্যান্য কোর্স করে। কিন্তু আমাদের দেশে গ্র্যাজুয়েশনের পর মনে করে পড়াশোনা শেষ। কাজে ঢুকে গেলাম। আবার অনেকে মনে করেন আমি যা শিখেছি তা নিয়েই থাকব।

‘অন্যদিকে ভাষাগত একটু বাধা রয়েছে। এর জন্য অক্সফোর্ডের ইংরেজিই বলা লাগবে, এমন নয়। কিন্তু কিছু প্রেজেন্টেশন করার মতো ইংরেজি জানতে হবে। একটু চেষ্টা করলেই তা থেকে উত্তোরণ সম্ভব। আমাদের দেশের প্রায় ১০ লাখ লোক এমন চাকরি করছে বাইরের দেশ থেকে এসে।’

এ বিভাগের আরো খবর